নদিয়ার সরকার পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন স্বহৃদয় ব্যক্তি নদিয়া, 22 মার্চ: মা ক্যানসারে আক্রান্ত ৷ দুই ছেলে বিশেষভাবে সক্ষম ৷ এই অবস্থায় সংসার ছেড়ে পালিয়ে যান বাবা । অভাবে দিন কাটছিল পরিবারটির ৷ সেকথা তুলে ধরা হয় সংবাদমাধ্যমে ৷ তা দেখে এবার তাঁদের সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন এক স্বহৃদয় ব্যক্তি ৷ ঘটনাটি নদিয়ার বীরনগর পৌরসভার 13 নম্বর ওয়ার্ডের উত্তরপালিত পাড়া এলাকার ।
দুই ভাই দীপক সরকার (22) ও পংকজ সরকার ( 17) ৷ দুজনের কেউই কথা বলতে পারেন না । তাঁরা না পারে ঠিক মত চলাফেরা করতে ৷ বয়স যতই বাড়ছে ততই জীবনে বিভিন্ন প্রতিকূলতা চলে আসছে তাঁদের । কঠিন ব্যয়বহুল রোগে আক্রান্ত মা-সহ তাঁরা তিনজনেই । তিনজনের সংসারে তাঁর বাবা কালু সরকার হকারি করে সংসার চালাতেন । মা অর্চনা সরকার তিনি পরের বাড়িতে রান্নার কাজ করে সংসারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন ৷ তবে গত দু'বছর আগে মা অর্চনা সরকারের স্তন ক্যানসার ধরা পড়ার পর রান্নার কাজটিও চলে যায় তাঁর ৷ তারপরই তাঁদের বাবা বাড়ি ছেড়ে চলে যান ৷ সেই যে কালু সরকার বাড়ি ছেড়েছেন আর ফেরননি । কাজ চলে যাওয়ার পর আর সেভাবে কাজ জোটেনি অর্চনার । এখন অভাবকে সঙ্গী করে চলতে হচ্ছে তাদের তিনজনকে । মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে সরকারের দেওয়া এক খানি ঘর এবং লক্ষীর ভাণ্ডার প্রকল্পের 500 টাকা ।
একদিকে ক্যানসারের চিকিৎসা ৷ অন্যদিকে দুই ছেলের সেবা করা, কঠিন সংগ্রামের মুখে দাঁড়িয়ে পরিবারটি । সরকার পরিবার এখন অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে তাঁকিয়ে । জানা গিয়েছে, ছোটবেলায় বেশ চলাফেরা করতেন দুই ভাই ৷ দুজনের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ অসাড় হয়ে যাচ্ছে তাঁদের শরীর । ব্যয়বহুল চিকিৎসা করানো তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না । একদিকে খাওয়া অন্যদিকে চিকিৎসা কোনওটাই ঠিক ঠাক করাতে পাড়ছেন না তাঁরা । ওই দুই ভাই কথা না বলতে পারলেও অসম্ভব সুন্দর ছবি আঁকতে পারেন । গত পৌরসভা নির্বাচনে ওই এলাকার কাউন্সিলর গোবিন্দচন্দ্র পোদ্দারের নজরে আসে এই পরিবারের অবস্থাটি ৷ এরপর তিনি যতটা পেড়েছেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ৷ এবারে তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন অন্য এক বিশেষভাবে সক্ষম মানুষ ।
দীপেন্দ্রনাথ ভৌমিক বলেন, "বীরনগরের এই অসহায় মানুষের মুখের করুণ কাহিনী আমরা দেখেছিলাম কয়েক মাস আগে ৷ সেই ছবি দেখার পরেই মনে দাগ কেটে যায় ।" পেশায় চাকরিজীবী দীপেন্দ্রনাথের নেশা সমস্ত অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানো । বছরের অন্য সময় যখন তিনি বাড়িতে আসেলেই খুঁজে বেড়ান এমনই কিছু মানুষদের ৷ যারা একেবারেই অসহায় । প্রতিবছরই এমন কিছু মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোই তাঁর অঙ্গীকার । তাঁদেরকে সাহায্য করতেই দিপেন্দ্রনাথ ভৌমিক তাঁর কষ্টার্জিত অর্থের তিন দিনের পারিশ্রমিক দিয়ে গেলেন ৷ তিনি জানান, এতে ওই পরিবারের তিন মাসের সংস্থান হবে । তাঁদের হাতে সেই টাকা তুলে দিলেন নিজেই । পরিবারটিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পেরে তিনি নিজে যেমন খুশি, পাশাপাশি কিছুটা আহারের বন্দোবস্ত হওয়ায় খুশি ওই পরিবারও ।
আরও পড়ুন:চিকিৎসকের বিরুদ্ধে টেনে-হিঁচড়ে নরম্যাল ডেলিভারির অভিযোগ ! গুরুতর আহত সদ্যোজাত