পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By

Published : Feb 18, 2020, 3:26 PM IST

Updated : Feb 18, 2020, 3:32 PM IST

ETV Bharat / state

"প্রচার শেষে রোজ পাত পেড়ে খেত নতুন পদ"

কৃষ্ণনগর থেকে দু'বার সাংসদ হয়েছিলেন। তাঁর প্রয়াণে কী বলছেন কৃষ্ণনগরের মানুষজন ? কেমন ছিলেন সাংসদ তাপস পাল, কেমন ছিলেন মানুষ তাপস পাল ? স্থানীয়দের স্মৃতিচারণায় উঠে এল সেকথা ।

ছবি
ছবি

কৃষ্ণনগর, 18 ফেব্রুয়ারি : কৃষ্ণনগর । একসময় এখান থেকেই পরপর দু'বার সাংসদ হয়েছিলেন তাপস পাল । এখানকারই এক বাড়িতে থেকে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন তিনি । খাওয়া-দাওয়া আড্ডা থেকে শুরু করে বহু স্মৃতি রয়ে গেছে এখানে । তবে এই নদিয়াও তাঁকে তিক্ত অভিজ্ঞতা দিয়েছে । যা শেষদিন পর্যন্ত পিছু ছাড়েনি । আজ তাঁর চলে যাওয়ায় সেইসব স্মৃতি যেন বারবার ফিরে আসছে । অভিনেতা তথা ব্যক্তি তাপস পালের চলে যাওয়াটা একটি বড় ক্ষতি বলে জানালেন কৃষ্ণনগরের অনেকেই ।

2009 সালে । তৃণমূল কংগ্রেসের কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে প্রথমবার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন তাপস পাল । 2014 সালে দ্বিতীয়বারের জন্যও সাংসদ হন । 2009 সালে কৃষ্ণনগর এসে সুভাষচন্দ্র বোস ওরফে খোকা বোসের বাড়িতে উঠেছিলেন । তাপস পালকে নিয়ে একাধিক স্মৃতি ভিড় করেছে তাঁরও মনে । সুভাষচন্দ্র জানান, "তাপস দুটো নির্বাচন লড়েছে আমার এখান থেকে । সবাই মিলে খুব খাওয়া-দাওয়া গল্প চলত । প্রতিদিন ওর পছন্দের খাবার রান্না করা হত । যখন প্রচারে যেত ওর ভক্তরা হাত ধরে টানত । সেই টানা- হেঁচড়ায় ওর চামড়ায় দাগ পড়ে যেত, কখনও অল্প বিস্তর কেটেও যেত । আমি ডাক্তার ডেকে এনে দেখাতাম । ওর ম্যাসাজের ব্যবস্থা করেছিলাম । আমার একটি কাজের মেয়ে ছিল । ওই রান্না-বান্না করত । ওর হাতের রান্না খেতে ভালোবাসত তাপস । মুরগি-মাছ রোজ নতুন নতুন খাবার খেত । ওর স্ত্রীও আসত । অভিনেতা হিসেবে উত্তম কুমারের পর একটা দারুণ জায়গায় পৌঁছে গেছিল । কিন্তু অকালে চলে গেল ।"

ভিডিয়োয় শুনুন সুভাষচন্দ্র বোস ও স্থানীয়দের বক্তব্য

তবে নদিয়ার সভার সেই বিতর্কিত মন্তব্যের স্মৃতি তুলে এনেছেন সুভাষচন্দ্র । আজও কোথাও যেন একটা আক্ষেপ থেকে গেছে । সুভাষচন্দ্র বলেন, "এই কৃষ্ণনগর থেকে একটা গণ্ডগোলের পর চলে গেল ও । তখনও বলেছিলাম এইরকম কথা বোলো না । এই সব বলে নিজের ক্ষতি করল ও । কিন্তু সে কথা তখন শোনেনি তাপস ।" পরে সুভাষচন্দ্রের সঙ্গেও দূরত্ব বাড়ে তাপসের ।

শুধু সুভাষচন্দ্র নন । তাপস পালের চলে যাওয়ায় এলাকার অনেকেই মানুষও দুঃখপ্রকাশ করেছে । স্থানীয় বাসিন্দা দেবব্রত মালাকার জানান, "অবশ্যই দুঃখজনক ঘটনা । দীর্ঘদিন সাংসদ ছিলেন । কাজ করতে গেলে প্রতিকূলতা তো আসে । সেগুলি এসেছে । তা সত্ত্বেও যে কাজ করেছেন তা মনে আছে । এখনও রাস্তা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স গেলে দেখি গাড়ির গায়ে লেখা তাপস পাল । তাঁর চলে যাওয়ায় একটা খারাপ লাগা তো আছেই । আর এক এলাকার বাসিন্দা কৃষ্ণেন্দু বিশ্বাস জানান, আমাদের কৃষ্ণনগরবাসী তাপস পালের মৃত্যুতে শোকাহত । একজন নেতার থেকেও একজন অভিনেতা হিসেবে আপামর বাঙালির মনে প্রাণে বেঁচে থাকবে । তাঁকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে । কারও দ্বারা প্ররোচিত হয়ে হয়তো এরকম মন্তব্য করেছেন । ব্যক্তি তাপস পাল বা অভিনেতা তাপস পালকে আমরা এভাবে ঠিক চিনি না । তবে ওনাকে খুব কাছাকাছি দেখেছি । সবার সঙ্গে মিশে যেতেন । খুব স্বতঃস্ফূর্ত ছিলেন । স্থানীয় বসিন্দা উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, "তাপস পাল মারা যাওয়াতে আমি শোকস্তব্ধ । উনি আমাদের লোকসভার সাংসদ ছিলেন । এলাকার উন্নয়নে কাজও করেছেন । তবে ভুলবশত কিছু কথা বলে ফেলেছিলেন । তবে তাঁর চলে যাওয়াতে দুঃখপ্রকাশ করছি ।"

শেষের দিকে আর কৃষ্ণনগরে সেভাবে থাকতেন না তিনি । দলের সঙ্গেও দূরত্ব বাড়ে তাপস পালের । বিতর্ক থাকলেও সাংসদের কাজ আজও মনে রেখেছে এলাকার মানুষজন ।

Last Updated : Feb 18, 2020, 3:32 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details