পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

"খোঁজ নেয় না রাজ্য, সুদীপের বোনের চাকরি কই ?"

14 ফেব্রুয়ারি, 2019 ৷ কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় শহিদ হন 44 জন CRPF জওয়ান ৷ শহিদদের মধ্যে ছিলেন নদিয়ার সুদীপ বিশ্বাস । সেই সময় শহিদ জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানাতে পথে নেমেছিল মানুষ ৷ অর্থ সাহায্য দিয়ে, চাকরি দেওয়ার ঘোষণার মাধ্যমে শহিদের পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ৷ সেই আশ্বাস কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে? এক বছর পর কেমন আছে শহিদ সুদীপ বিশ্বাসের পরিবার?

By

Published : Feb 12, 2020, 9:25 PM IST

Updated : Feb 13, 2020, 9:40 PM IST

pulwama-attack, shaid-sudip-bishwas-family
শহিদ সুদীপ বিশ্বাস

নদিয়া, 12 ফেব্রুয়ারি : বলছেন শহিদ সুদীপের বাবা । বছরখানেক আগের একটা ফোন যাঁর জীবনের সবটুকু আজ পালটে দিয়েছে। নিভে গেছে দীপ। এই একটা বছর তাঁকে বুঝিয়েছে, কে আপন কে পর । তাঁর স্ত্রী, বলা ভালো, শহিদ সুদীপের মা যখন ছেলের ছবি বুকে আঁকড়ে রাত কাটান, তাঁর বুকের ভিতরের দগদগে ঘা-টা খুঁচিয়ে দিয়ে যায় অজস্র মনখারাপ । বাবা বলে ছেলে যে আর ডাকে না । পুলওয়ামা কেড়ে নিয়েছে ছেলের প্রাণ । দুয়ারে বসে, ছেলের ছবির দিকে তাকিয়ে শোকাতুর বাবার মুখ ফুটে বেরিয়ে আসে, "এক বছর কেটে গেছে, রাজ্য সরকার খোঁজ নেয় না ৷ মেয়েকে চাকরি দেবে বলেছিল ৷ কাগজপত্রও জমা নিয়েছিল ৷ কোথায় কী !"

শহিদ সু্দীপ বিশ্বাস ৷ তাঁর বাবার ভাগ্যহীন হওয়ার দিন, একবছর আগে ৷ রাতের চেয়েও অন্ধকার সে দিনটা ছিল 14 ফেব্রুয়ারি (2019) ৷ যেদিন মুহূর্তে পোড়া-বারুদ-গন্ধ ছড়িয়েছিল ভূস্বর্গের হাওয়ায় ৷ কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি হামলা প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল 44 জন CRPF জওয়ানের । আসমুদ্রহিমাচলে বিদ্যুৎ গতিতে সে খবর ছড়াতে বেশি সময় লাগেনি ৷ চমকে উঠেছিল গোটা দেশ ৷ পুলওয়ামাকাণ্ডের জেরে রাতারাতি তলানিতে পৌঁছয় ইন্দো-পাক সম্পর্ক ৷ সার্জিকাল স্ট্রাইক, ভারতীয় সেনার পালটা জবাব৷ তারপর অভিনন্দন বর্তমানের বীরত্বের কীর্তি ৷ যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দুই দেশের কূটনৈতিক লড়াই জারি আজও৷ এসবের মধ্যেই কেটে গেল একটা বছর ৷

দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া 44 জওয়ানের মধ্যে দু'জন ছিলেন বঙ্গসন্তান । হাওড়ার বাবলু সাঁতরা আর নদিয়ার সুদীপ বিশ্বাস । একবছর আগে গোটা দেশের মতোই যাঁদের জন্য চোখের জল ঝরিয়েছিল বাঙালি ৷ নিহত জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানাতে পথে নেমেছিলেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ ৷ এইসঙ্গে অর্থ সাহায্য দিয়ে, চাকরি দেওয়ার ঘোষণার মাধ্যমে শহিদের পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ৷ সেই আশ্বাস কি বাস্তবায়িত হয়েছে? ETV ভারত খোঁজ নিতে গিয়েছিল নদিয়ার হাঁসপুকুরিয়া গ্রামে ৷ শহিদ সুদীপ বিশ্বাসের বাড়িতে ৷

কেমন আছে শহিদ সুদীপ বিশ্বসের পরিবার ?

হাঁসপুকুরিয়া সবুজ গ্রাম ৷ তারই একপ্রান্তে সব থেকেও যেন কিছু নেই একতলা বাড়িটিতে ৷ বাড়ির ভিতরে এক বছর পরেও শোকের ছায়া ৷ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে চোখের জল ফেললেন সুদীপ বিশ্বাসের বাবা-মা-বোন ৷ শহিদ জওয়ানের বাবা সন্ন্যাসী বিশ্বাস আক্ষেপের সুরে বললেন, "এক বছর কেটে গেছে, রাজ্য সরকার খোঁজ নেয় না ৷ মেয়েকে চাকরি দেবে বলেছিল ৷ কাগজপত্রও জমা নিয়েছিল ৷ কোথায় কী !" সন্ন্যাসীবাবুর দাবি, দু'বার মেয়ের চাকরির জন্য কাগজ জমা দিয়েছেন৷ BDA, SDA-র সঙ্গে দেখা করেছেন ৷ সরকারি আধিকারিকরা আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ হয়নি ৷ অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল তা তারা পালন করেছে বলে জানান সুদীপ বিশ্বাসের বাবা ৷ CRPF-এর তরফে প্রতিমাসে ফোন করে ও বাড়িতে এসে তাঁদের খোঁজ নেওয়া হয় বলেও জানান তিনি৷

রাজ্য সরকার চাকরির আশ্বাস দিয়েছিল ৷ কিন্তু এখনও সুদীপের বোন চাকরি পাননি ৷ সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহা জানান, তাঁর এই বিষয়টি জানা নেই ৷ সুদীপের পরিবারের কেউ তাঁর কাছে এই নিয়ে কিছু বলেনি৷

পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় পর নিহত 98 নম্বর ব্যাটেলিয়ানের সুদীপ বিশ্বাসের পরিবারকে 5 লাখ টাকার আর্থিক সাহায্যের চেক দিয়েছিল রাজ্য সরকার । সে সময় পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার ৷ যা কার্যক্ষেত্রে ঘটেনি বলে পরিবারের অভিযোগ ৷ মা অবশ্য অন্য পৃথিবী৷ তাঁর সঙ্গে দেনা-পাওনার সম্পর্ক নেই ৷ চোখের জল ফেলতে ফেলতে শহিদ সুদীপ বিশ্বাসের মা মমতা বিশ্বাস বলেন, "ছেলের ছবি বুকে নিয়ে রাত কাটে !"

পরিবার, বাবা-মা-ভাই-বোন তো মনে রাখবেই৷ কিন্তু এক বছর যথেষ্ট সময় ভুলে যাওয়ার পক্ষে ৷ ইন্টারনেট, ইউটিউবের পৃথিবীতে এক লহমায় কত নতুন ঘটনা ! তবু পুলওয়ামাকাণ্ডের এক বছর পর সুদীপ বিশ্বাসকে ভোলেনি তাঁর পাড়া, গ্রাম ৷ আগামী শুক্রবার, 14 ফেব্রুয়ারি (কালো দিনটির এক বছর পূর্তিতে) স্থানীয় ক্লাবে স্থাপন করা হবে শহিদ সুদীপ বিশ্বাসের আবক্ষ মূর্তি ৷ সেদিন প্রয়াত বীর জওয়ানকে নিয়ে শ্রদ্ধামূলক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানও হবে ৷

Last Updated : Feb 13, 2020, 9:40 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details