পঞ্চায়েতে লড়বেন কে, ঠিক করবে জনতা ! রানাঘাট, 17 ডিসেম্বর: আবারও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের (Abhishek Banerjee) নিশানায় পঞ্চায়েতের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ৷ শনিবার মতুয়া অধ্যুষিত নদিয়ার (Nadia) রানাঘাটে (Ranaghat) জনসভা করেন অভিষেক ৷ আর সেই সভামঞ্চ থেকেই জনতার হাতে একটি বিশেষ দায়িত্ব তুলে দেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ৷ তাঁর প্রস্তাব, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে (WB Panchayat Election 2023) মানুষই ঠিক করুক, তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে কারা লড়াই করবেন !
ঠিক কী বলেছেন অভিষেক ? এদিন অভিষেক একটি মোবাইল নম্বর (78877-78877) মঞ্চে ঘোষণা করেন ৷ সবাইকে বলেন, "সভাস্থলে উপস্থিত সকলে কাগজ, পেন বের করুন ৷ যদি আপনাদের কারও মনে হয়, এলাকায় এমন কোনও মানুষ আছেন, যিনি রাজনীতি করতে চান, মানুষের জন্য কাজ করতে চান, যাঁকে প্রার্থী করলে এলাকাবাসী ভোট দেবেন, যাঁকে প্রার্থী করলে দলের নয়, মানুষের উপকার হবে, তাঁর নাম আমাদের জানান ৷ আমি কথা দিচ্ছি, আপনাদের প্রস্তাব অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করে দেখা হবে ৷" এর আগেই অভিষেক জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, "আপানারা কি এখানকার পঞ্চায়েতের কাজে খুশি ?" জনতা সমবেত উত্তর দেয়, "না ৷" প্রসঙ্গত, এর আগে কাঁথিতে সভা করার সময় অভিষেকের রোষানলে পড়তে হয়েছিল এলাকার একটি পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান এবং দলের অঞ্চল সভাপতিকে ৷ অভিষেকের নির্দেশে পদত্য়াগ করতে হয়েছিল তাঁদের ৷
আরও পড়ুন:কাঁথির সভামঞ্চ থেকে 'বিশ্বাসঘাতক ও বেইমানমুক্ত মেদিনীপুর' গড়ার ডাক অভিষেকের
এদিনও কাঁথির ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হয় ৷ অভিষেক জানান, চাকদা ঢোকার মুখে মহানালা নামে একটি গ্রাম রয়েছে ৷ সেই গ্রামের অধিকাংশ মানুষই তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত ৷ সেই গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান পার্থপ্রতিম দে ৷ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত চারবছরে একবারও গ্রামে যাননি পার্থপ্রতিম ৷ সেই খবর ইতিমধ্য়েই যাচাই করে দেখেছেন অভিষেক ৷ তারই ভিত্তিতে ওই পঞ্চায়েত প্রধানকে আগামী সোমবারের মধ্য়ে ইস্তফা দিতে বলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ৷ প্রধানের উদ্দেশে তিনি বলেন, "মানুষ সার্টিফিকেট না দিলে আপনি প্রধান নন ৷ চারবছরে একবারও গ্রামে না গেলে প্রধানের চেয়ারে বসার অধিকার আপনার নেই ৷ তাই আগামী সোমবারের মধ্যে আমার কাছে আপনার ইস্তফাপত্র পাঠাবেন ৷" একইসঙ্গে, জনতার উদ্দেশে অভিষেকের প্রতিশ্রুতি, "আগামী পাঁচবছর তৃণমূলের পঞ্চায়েত যাতে মানুষের জন্য কাজ করে, সেই দায়িত্ব আমি নিচ্ছি ৷ আমি পাহারাদার হয়ে থাকব ৷"
এদিনের সভামঞ্চ থেকে আরও একবার নব্য তৃণমূলের তত্ত্ব ব্যাখ্য়া করেন অভিষেক ৷ বলেন, "কথা দিচ্ছি, মানুষ যে তৃণমূলকে চায়, তেমনই দল তৈরি হবে ৷" এরপর সদ্য এলাকায় দলের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া দেবাশিস গঙ্গোপাধ্য়ায়ের কথা বলেন অভিষেক ৷ তাঁর বক্তব্য, দেবাশিস পদ পেয়েছেন কাজের নিরিখে ৷ তাঁকে "দাদা ধরে, মুখ দেখিয়ে পদ পেতে হয়নি ৷ কাজ করলে দলই নেতাকে খুঁজে নেবে ৷ এটাই নতুন তৃণমূল ৷" প্রসঙ্গত, নতুন তৃণমূল নিয়ে আগেও রাজ্য রাজনীতিতে অনেক জলঘোলা হয়েছে ৷ অনেকেই এই ইস্যুকে সামনে রেখে তৃণমূলের অন্দরে মমতা বনাম অভিষেকের দ্বন্দ্বের তত্ত্ব খাড়া করার চেষ্টা করেছেন ৷ এদিন অভিষেক সেই যুক্তি কার্যত একবাক্যে খারিজ করে দেন ৷
পাশাপাশি, এদিনের সভা থেকে নদিয়ার তাঁত শিল্পী ও শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দেন অভিষেক ৷ বলেন, "আপনাদের দীর্ঘদিনের দাবি, তাঁতশিল্পকে মহাজনমুক্ত করতে হবে ৷ আমরা সেই দাবি মেনে নিচ্ছি ৷ আপনাদের সমস্ত দাবি-দাওয়া নিয়ে তৃণমূলের ট্রেড ইউনিয়ন মাঠে নামবে ৷ প্রত্যেক গোষ্ঠীকে কোঅপারেটিভের পক্ষ থেকে ঋণ দেওয়া হবে ৷ আগামী দুই থেকে তিনমাসের মধ্য়েই এগুলো করা হবে ৷ তাঁত শ্রমিকদের মাসিক পারিশ্রমিক ন্যূনতম 12 হাজার টাকা করতে হবে ৷ এই দাবিতে আমরা রাস্তায় নেমে লড়াই করব ৷"