বৃষ্টির জলে মুছে যাচ্ছে মুর্শিদাবাদের আস্ত গ্রাম ভরতপুর, 13 সেপ্টেম্বর: নদী ভাঙন এবং বন্যায় বহু গ্রামই মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে ৷ মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ এবং জলঙ্গির বেশ কিছু এলাকা ভাঙনের কবলে প্রায় নিশ্চিহ্ণ হতে চলেছে ৷ একই ছবি মুর্শিদাবাদের ভরতপুরে ৷ মুর্শিদাবাদের ভরতপুর থানার গুন্ডিরিয়া গ্রামপঞ্চায়েতের অধীনে জাখিনি গ্রাম বন্যায় মুছে যেতে বসেছে ৷ এক সময় যে গ্রামে একশো থেকে দেড়শো পরিবার বসবাস করত ৷ এখন সেখানে সর্বসাকুল্যে 6-10 টি পরিবারের বসবাস ৷ তার কারণ বাঁধ তৈরি হলেও বন্যা সে বাঁধ মানে না ৷
বৃষ্টি অতিরিক্ত হলে নদী ছাপিয়ে জল এই গ্রামে ঢোকে ৷ তখন ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিতে হয় খোলা আকাশের নীচে, উঁচু জায়গায় তাঁবু খাটিয়ে ৷ অভাবের সংসারে সঙ্গী অসহায়তা ৷ তাই বহু কষ্টের মধ্যেও অনেকে গ্রাম ছেড়ে যেতে পারেনি ৷ অনেকেই অন্য জায়গায় বসতি স্থাপন করেছে বা কাজের সূত্রে অন্য কোথাও বাসা বেঁধেছে ৷
আরও পড়ুন: বাড়ছে দ্বারকেশ্বর নদীর জলস্তর, বন্যার আশঙ্কায় এলাকাবাসী
যে কয়েকটি পরিবার রয়েছে, তারা না পেয়েছে কোনও সরকারি সাহায্য আর না তো কোনও অনুদান ৷ সাহায্য চাইতে গেলে তাদেরই উলটে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে ৷ এক সময় এই গ্রামে ভরপুর বসতি ছিল ৷ ছিল স্কুল পড়ুয়ারা ৷ গ্রামের স্কুলেই পড়ত কচিকাঁচারা ৷ তবে যেখানে মানুষের দেখা সহজে মেলে না, সেখানে স্কুলের কোনও অস্তিত্ব নেই ৷ তাই দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ স্কুলের দরজা ৷
শিশুদের এখন বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে স্কুলে যেতে হয় ৷ তাও বাচ্চাদের সংখ্যা হাতে গোনা ৷ গ্রামের বাসিন্দা মিনু ঘোষ বলেন, "এলাকার শিশুরা স্কুলে পড়াশোনা করত ৷ কিন্তু ধীরে ধীরে বন্যায় সবকিছু ভেঙে গিয়েছে ৷ বাড়িঘর নেই বললেই চলে ৷ থাকলেও সেখানে অনেক কষ্ট করে মানুষ বসবাস করে ৷" আরেক বাসিন্দা বিকাশচন্দ্র ঘোষ জানালেন, বন্যার কারণে ঠিকঠাক রাস্তাঘাট মেরামতিও হয় না ৷ পানীয় জলের জন্য টিউবওয়েল বসানো রয়েছে ৷ অভাবের কারণেই এই গ্রামে মানুষ বসবাস করে ৷
তবে বড় সমস্যা দেখা দেয় গ্রামের যুবক, যুবতীদের বিয়ের সময় ৷ মেয়েদের বিয়ে তাও বা হলেও ছেলেদের বিয়ে হওয়ার ক্ষেত্রে বেগে পেতে হয় ৷ কারণ এমন জায়গায় কেউ আসতে চায় না ৷ বলরাম ঘোষ দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করছেন ৷ তিনি জানান মাস্টার প্ল্যানের আওতায় বাঁধ আছে কিন্তু সেই বাঁধে কোনও কাজ হয় না ৷ ময়ূরাক্ষী নদীর জল বেড়ে গেলে পুরো গ্রামকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ৷ সরকারি সাহায্য কোনওদিনই পাননি তাঁরা ৷
তিনি বলেন, "একটু কথা বলতে গেলে তাঁদের উঠে যাওয়ার কথা বলা হয় ৷ আর বর্ষা এলে সব ভেসে যায় ৷ তখন উঁচু কোনও একটা জায়গা খুঁজে তাঁবু খাটিয়ে বসবাস করতে হয় ৷ আবার জল নেমে গেলে সেই ঘরে এসে বসবাস করে ৷
আরও পড়ুন: উত্তরে বন্যা পরিস্থিতির জন্য দায়ী ভুটান ও কেন্দ্রীয় সরকার, অভিযোগ সেচমন্ত্রীর
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় যে দুয়ারে পরিষেবা পৌঁছেছে ৷ কিন্তু যাঁদের মাথার ছাদটুকুও নেই, তাঁদের দুয়ারে সরকারি সাহায্য পৌঁছবে না ! সরকারি প্রাথমিক স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টার সবই ছিল ৷ কিন্তু এখন সেইসব ভগ্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে ৷ প্রশ্নের মুখে মানুষের ভবিষ্য়ৎ !