বহরমপুর, 30 জুলাই : তাঁরা সকলেই ষাটোর্ধ্ব । কেউ কানে কম শোনেন আবার কারও চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে গিয়েছে বহুকাল আগেই । কমেছে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাও। তাই কোরোনা আবহে তাদের বাড়তি সতর্ক থাকতে হচ্ছে। তবে প্যান্ডেমিক কোরোনার আতঙ্ক প্রবেশ করতে পারেনি বহরমপুরের আনন্দ নিকেতন ও মা ভবানী বৃদ্ধাশ্রমে। মুর্শিদাবাদ জেলায় এই দুটিই বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে। আনন্দ নিকেতন রাজ্য সরকার নিয়ন্ত্রিত বহরমপুর প্রবীন সভা ও মা ভবানী বৃদ্ধাশ্রম একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দ্বারা পরিচালিত হয়।
এখনও পর্যন্ত কোরোনা রোধে কোনও টিকা বা ওষুধ আবিষ্কার না হওয়ায় এই ভাইরাসকে খতম করতে আক্রান্তদের কাছে একটাই উপয় শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। এক্ষেত্রে বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় কোরোনা আবহে তাঁদের নিতে হচ্ছে বাড়তি সতর্কতা। সেই মতো বহরমপুরের দুটি বৃদ্ধাশ্রমেই দেখা গেলে কড়া সতর্কতা। কোনোভাবেই কোরোনা ভাইরাস যাতে আশ্রমের গণ্ডি পেরোতে না পারে সেদিকে কড়া নজর রেখেছেন আশ্রমের কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের এহেন সর্তকতা অবলম্বনে খুশি আবাসিকরা।
পারিবারিক এবং সামাজিক নানান কারণে বৃদ্ধাশ্রমে জায়গা হয় বহু মানুষের। নিকট আত্মীয় পরিজনকে ছেড়ে আশ্রমের চার দেওয়ালে মাঝে সময় কাটাতে হয় তাঁদের। তাই শেষ বয়সে এসে আশ্রমই তাঁদের কাছে নতুন সংসার । আবাসিকরা পরস্পরের আপনজন হয়ে ওঠে নিজেদের অজান্তেই। নিজেদের সুখ-দুঃখ আবাসিকদের মধ্যেই ভাগ করে নেন তাঁরা। পিছনের দিনগুলো যত ধূসর হতে থাকে আশ্রম হয়ে ওঠে ততই একান্ত আপন। রোগব্যাধি হলে আবাসিক এবং আশ্রম কর্তৃপক্ষ পাশে এসে দাঁড়ায়। কোরোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে এভাবেই পরস্পরের সাহস যুগিয়েছেন বহরমপুর মাঝেরপাড়া আনন্দ নিকেতন বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকরা। এই বৃদ্ধাশ্রমে শুধু মুর্শিদাবাদই নয় প্রতিবেশী নদিয়া, বীরভূমের কয়েকজন বয়স্ক মানুষের বাস এখানে। 2002 সালে তৎকালীন জেলাশাসক মনোজ পন্থ এই আশ্রমের উদ্বোধন করেন। আজ সেখানে আবাসিকের সংখ্যা 12 জন। যার মধ্যে দু'জন বৃদ্ধ এবং 10 জন বৃদ্ধা। প্রতিটি ঘরে দু'জন করে থাকেন।
সাম্প্রতিক কোরোনা আতঙ্ক দেশব্যাপী প্রভাব বিস্তার করেছে। কিন্তু আনন্দ নিকেতনের আবাসিকদের মনে আতঙ্কের ছাপ ফেলতে পারেনি মারণ ভাইরাস কোরোনা। এখনো পর্যন্ত কারো আক্রান্ত হওয়ার খবরও মেলেনি। আবাসিকদের দাবি যেহেতু তাঁরা ষাটের গণ্ডি পেরিয়েছেন, তাই এই সময়ে বাড়তি সতর্কতা নিয়ে চলছেন ।এই আশ্রমেই গত তিন বছর ধরে রয়েছেন কার্তিক সরকার। কার্তিকবাবু বললেন, "আমাদের কোনও আতঙ্ক নেই। গঙ্গার ধারে মনোরম পরিবেশে আমরা বেশ আছি।" কার্তিক সরকারের কথার রেশ টেনে আরেক আবাসিক ভারতী বাগচী বললেন, "এখানে থাকা খাওয়ার কোনও অসুবিধা নেই। আশ্রমের ম্যানেজার এবং প্রবীণ সভা আমাদের দিকে সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন। আমরা কেমন আছি নিয়মিত খোঁজখবর নেন তাঁরা।" একটানা 12 বছর থাকার সুবাদে আনন্দ নিকেতনের অলিখিত অভিভাবক এখন স্বপন কুমার কালী। কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি তাঁর অনুশাসন চলে আশ্রমের ভিতরে। স্বপনবাবু বলেন, "বয়স হয়েছে তাই সাবধানে থাকি। কিন্তু কোনও আতঙ্ক নেই। বয়স্কদের আক্রান্তের সম্ভাবনা বেশি তা মাথায় রেখেই হাঁটাচলা ও বাইরে বের হওয়া সীমিত করে দিয়েছি। জরুরি কাজে বাইরে যেতে হলে তাঁরা স্বাস্থ্য বিধি মেনেই বাইরে যান।"