বেলডাঙা, 20 জুন : প্রথমে বাড়ির মহিলাদের উঠে যাওয়া মাথার চুল টাকার পরিবর্তে কিনে আনেন ফেরিওয়ালারা ৷ তারপর বিভিন্ন ধাপের মাধ্যমে সেই চুলগুলিকে সুসজ্জিত করা হয় ৷ এরপর মহাজনরা তা রপ্তানি করেন ৷ এই চুলগুলির সাধারণত পরচুল তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ৷ মুর্শিদাবাদের ভরতপুর, রেজিনগর ও বেলডাঙা ব্লকে রমরমিয়ে চলে এই চুলের কারবার ৷ মুর্শিদাবাদে তৈরি হওয়া পরচুলের 95 শতাংশ রপ্তানি হয় চিনে ৷ কিন্তু ভারত-চিন সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে এখন চিনা পণ্য বয়কটের ডাক উঠছে সর্বত্র ৷ এই পরিস্থিতিতে চিনারা এই ব্যবসা থেকে হাত গুটিয়ে নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মুর্শিদাবাদের চুল ব্যবসার সঙ্গে যুক্তরা ৷ তাই কাজ হারানোর ভয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ তাঁদের ৷
মুর্শিদাবাদের এই চুল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রায় সাড়ে তিন লাখ মহিলা ও পুরুষ ৷ বিভিন্ন ধাপে এই চুলগুলিকে বাড়ি বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে রপ্তানিযোগ্য করে তোলা হয় ৷ প্রথমে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত জেলার বেশ কিছু মানুষ হকারি করে বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাড়ির মহিলাদের উঠে যাওয়া চুল সংগ্রহ করেন ৷ পরিবর্তে হকাররা কখনও ওই চুলের মালিককে টাকা বা জিনিস দেন ৷ তারপর তা মুর্শিদাবাদে এসে ভাংড়ি বাজারে বিক্রি করেন ৷ সেখান থেকে চুলগুলি চলে যায় একদল মহিলাদের কাছে ৷ তাঁদের কাজ অগোছালো চুলগুলিকে বিন্যাস করা ৷ তারপর সেগুলি পাঠানো হয়ে ধোয়ার জন্য ৷ ধোয়া হয়ে গেলে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় একদল মিস্ত্রির হাতে ৷ তাঁদের চুলের মিস্ত্রি বলা হয় ৷ এই মিস্ত্রিদের কাজ ধুয়ে আসা চুলগুলিকে দৈর্ঘ্য অনুযায়ী বাছাই করা ও সেগুলিকে সুসজ্জিত করা ৷ তারপর সেগুলির প্যাকিং করা হয় ৷
এই চুলের মিস্ত্রি বিভিন্ন মহাজনের অধীনে কাজ করে ৷ এই মহাজনের হাত ধরেই প্যাকিং করা চুলগুলি রপ্তানি করা হয় চিন ও বার্মায় ৷ চুলের দৈর্ঘ্যের উপর ভিত্তি করে রপ্তানি মূল্য ঠিক হয় ৷ যেমন 3 থেকে 4 ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের চুলের কেজি প্রতি দাম 200 থেকে 400 টাকা ৷ 8 থেকে 10 ইঞ্চি চুল 4 থেকে 6 হাজার টাকা কেজি প্রতি দামে বিক্রি করা হয় ৷ এইভাবে দৈর্ঘ্য ও গুনগত দিক দিয়ে এই চুলগুলির সর্বোচ্চ দাম পাওয়া যায় কেজি প্রতি 25 থেকে 30 হাজার টাকা ৷ বিশেষ করে বিউটি পার্লার থেকে যে চুল সংগ্রহ করে হকারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধাপে সুসজ্জিত হয়ে চুলের মিস্ত্রিদের কাছে আসে তার দাম সব থেকে বেশি ৷
ভারতবর্ষ থেকে প্রতিবছর 15 হাজার টন এই চুল রপ্তানি হয় চিনে ৷ তার মধ্যে 4 হাজার টন চুল রপ্তানি হয় মুর্শিদাবাদ থেকে ৷ যা জেলার ব্যবসার 95 শতাংশ ৷ আর বাকি 5 শতাংশ যায় বার্মায় ৷ কিন্তু বর্তমানে ভারত-চিন সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে চিনা পণ্য বয়কটের ডাক উঠছে ৷ আর তাতেই আশঙ্কায় দিন গুনছে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মুর্শিদাবাদের বহু মানুষ ৷