বহরমপুর, 19 জুলাই : মৃত্যুতে ভয় ছিলই, এখন বেশি ভয় মৃতকে ! মৃতদেহ থেকে কোভিড 19 ছড়াতে পারে, এই আশঙ্কায় স্বজনের দেহও আজ পর ! সম্পর্কের সমীকরণ বদলে দিচ্ছে কোভিড 19 ৷ বেঁচে থাকা অবস্থায় যারা বাপ-মা-ভাই-বোন-সন্তানসন্ততি, মৃত্যুর পর তারা কেবলই এক কোরোনা আক্রান্ত মৃতদেহ ! তবু, সে দেহের তো সৎকার প্রয়োজন ৷ জীবিতের সুস্থতায় প্রয়োজন দ্রুত সৎকার ৷ এই বিষয়টি নিয়েও তৈরি হয়েছে ভয়, আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি ৷ বিশেষত মুর্শিদাবাদে ৷ জেলায় 74% মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষ ৷ প্রশ্ন অনেক, যেমন কোভিড 19-এ মৃতকে কবর দেওয়ার সময় কোন কোন নিয়ম পালন করা উচিত? কবর খননকারীরা কতটা সুরক্ষিত ? কবর দেওয়ার পরেও কি সংক্রমণ ছড়াতে পারে দেহ থেকে?
মুর্শিদাবাদে ছোটো-বড় মিলিয়ে প্রায় 4 হাজার কবরস্থান রয়েছে ৷ প্রতি কবরস্থানে 3 জন কবর খননকারী কাজ করেন ৷ অর্থাৎ, 12 হাজার মানুষ দেহ সৎকারের পেশায় যুক্ত ৷ খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, তাঁরা যথেষ্ট সচেতন নন ৷ যদিও চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, মাস্ক তো বটেই, PPE কিট পরে কবর দেওয়ার কাজ করা উচিত ৷ অধিকাংশ কবর খননকারীরা যা মানছেন না ৷ তাঁদের সহজসরল বক্তব্য, সবকিছু উপরওলার উপর ছেড়ে দিয়েছি ৷ তবে, অনেকেই আতঙ্কিত ৷ তবু, মানবিকতার কারণে কাজ থেকে সরছেন না ৷ তাঁদের কথায়, কেউ যদি সৎকার না করে তাহলে কী হবে কোরোনা আক্রান্ত মৃতদেহের ! ভরসা একটাই, চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কবর দেওয়ার পর সংক্রমণ ছড়ায় না ৷
বর্ষীয়াণ কবর খননকারী আমোদ আলির কথায়, "ভয় তো আছেই ৷ সবার ভয় আছে ৷ আমারও আছে ৷ তবে, সেভাবে কোনও সর্তকতা অবলম্বন করি না । সবটা ছেড়ে দিয়েছি আল্লাহতালার উপর । ডাক আসে, তাই কাজ করি ৷ কোরোনাকে ভয় করলে মৃতদেহগুলির কী হবে?"
আর এক কবর খননকারী কুদ্দুস শেখ কাজের সময় মাস্ক পরেন ৷ তাঁর মতে কোরোনা হলেও এবছর মৃত্যুর পরিমাণ কম ৷
তিনি বলেন, "কে কোরোনায় মরল, কে অন্য রোগে তা জানতে পারি না ৷ তবে সতর্কতা হিসেবে, নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, মাস্ক পরি ৷"