মুর্শিদাবাদ, 13 ফেব্রুয়ারি : অবহেলায় ধুঁকছে মুর্শিদাবাদের ঐতিহাসিক স্থাপত্য হাজারদুয়ারির নির্মাতা নবাব নাজিম হুমায়ুন জা-র সমাধি ৷ লালবাগ-মুর্শিদাবাদের সর্বাপেক্ষা সুন্দর ঐতিহাসিক স্থাপত্য হাজারদুয়ারি ভারত সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগ অধিগ্রহণ করলেও জাফরাগঞ্জে চূড়ান্ত অবহেলায় ধুঁকছে 1100 কবরস্থান । যে সমাধিস্থলে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন মিরজাফর, তাঁর তিন বেগম বেগম শাহ, মুন্নি বেগম, বাববু বেগম ৷ সেই সঙ্গে নিউ প্যালেসের নির্মাতা ওয়াসিফ আলি মির্জা সহ মিরজাফরের বংশধরদের সকলকেই জাফ্রগঞ্জের 1100 বিঘা কবরখানায় সমাধিস্থ করা হয়েছে । নেই শুধু মির কাসিম ও মিরজাফরের পুত্র মিরনের সমাধি ।
বংশানুক্রমে নবাব পরিবারের এই সমাধিস্থল যারা পরিচর্যা করে আসছেন তাঁদের বেতন সরকারি কোষাগার থেকে দেওয়া হলেও সেই বেতনের উর্ধ্বসীমা শুনলে আজকের দিনে অনেকেই চমকে উঠবেন । কেউ পান 11 টাকা তো কেউ পান 18 টাকা । আর প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায় যিনি সাঁঝবাতি দেন তাঁর মাসিক বেতন মাত্র দুই টাকা 10 পয়সা । দুটো শতাব্দি পেরিয়ে গেলেও এই বেতন কাঠামোর কোন পরিবর্তন হয়নি । সেই সঙ্গে সরকারি বা বেসরকারিভাবে এই সমাধিস্থল সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি । অথচ মুর্শিদাবাদ জেলায় শিক্ষায় যিনি আলোড়ন এনেছিলেন, ব্রিটিশদের দেওয়া মাসোহারা সাম্মানিক যিনি স্কুল নির্মাণের কাজে খরচ করেছিলেন সেই মুন্নি বেগমের সমাধির উপর এখন ধুলো জমছে । খসে খসে পড়ছে ইট চুন-সুরকির আস্তরণ ।
মুন্নি বেগমের তৈরি করা স্কুল আজ নবাব বাহাদুর ইনস্টিটিউশন নামে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের তকমা পেলেও মুন্নি বেগমের সমাধির দিকে কেউ ফিরেও তাকায়নি । তৎকালীন সময়ে 16 লাখ টাকা খরচ করে ঐতিহাসিক স্থাপত্য হাজারদুয়ারিকে মাথা তুলে দাঁড় করিয়েছেন হুমায়ুন জা । ভারত সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগ ঐতিহাসিক স্থাপত্য হাজারদুয়ারিকে অধিগ্রহণ করেছে বহু আগে । প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটকের কাছ থেকে টিকিট সংগ্রহের টাকা জমা পড়ছে সরকারি কোষাগারে । অথচ প্যালেস মিউজ়িয়াম থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নিতান্ত অবহেলায় শুয়ে রয়েছেন হুমায়ুন জা ।
আজও নবাবের কবরে সাঁঝবাতি দেন বিরাসত এক সময় বাংলা, বিহার, উড়িশাকে যারা শাসন করে এসেছেন আজ তাঁদের দেখাশোনার জন্য রয়েছে মাত্র 13 জন কর্মী । মালি তাজু হোসেনের মাসিক বেতন 18 টাকা । সুইপারের বেতন চার টাকা । গোরখানের বেতন 60 টাকা । যিনি প্রতিদিন কোরান পাঠ করেন তার বেতন মাত্র ছয় টাকা । এদের সকলকেই বেতন দেওয়া হত স্থানীয় BDO অফিস থেকে । তারপর তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয় যে তাঁদের মাসিক বেতন আসবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৷ কিন্তু কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকায় গত এক বছর থেকে সেই ন্যূনতম বেতনও বন্ধ হয়ে রয়েছে ।
পাঁচ টাকা অর্থের বিনিময়ে জনপ্রতি পর্যটকদের গাইডের কাজ করেন তাঁরা ৷ সেই পর্যটকদের কাছ থেকে পাওয়া টাকাতেই সংসার চলে ওই 13 জন কর্মীর । সরকারি কর্মীর তকমা নিয়েই সামান্যত্তম বেতন বৃদ্ধির জন্য একাধিকবার সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে এসেছেন পরিবারগুলি । দিন বদলেছে, সরকার বদল হয়েছে কিন্তু জাফরাগঞ্জ সমাধিস্থলের কর্মীদের সুদিন ফেরেনি । সুদিনের অপেক্ষায় বংশানুক্রমে পরিবারগুলি জাফরাগঞ্জ সমাধিস্থল আঁকড়ে ধরে পড়ে রয়েছেন ।