লালবাগ, 15 অগাস্ট : নবাবি আমল ও ব্রিটিশ শাসনের কারণে মুর্শিদাবাদ জেলার আনাচে-কানাচে ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে । মুর্শিদাবাদের লালবাগে নবাবি আমলের স্থাপত্য রয়েছে প্রচুর । শোনা যায়, নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করতে এই কাঠগোলার বাগানে বসেই মিরজাফরের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছিল ব্রিটিশরা । সিরাজকে হত্যার ব্লু প্রিন্টও তৈরি করা হয়েছিল এখান থেকেই ।
মুর্শিদাবাদের সবথেকে জনপ্রিয় হাজারদুয়ারি প্রাসাদ থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তরে আছে কাঠগোলা বাগানবাড়ি । বাগানে ঘেরা বিশাল স্থাপত্য আর জমকালো সব ভাস্কর্য না দেখলে পর্যটকদের মুর্শিদাবাদ ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায় । জায়গাটার নাম কেন ‘কাঠগোলা’ হল, তা নিয়ে দু’টি মত প্রচলিত । বাগানে ঢোকার মুখে দেখা যায় একটা বড় নহবত গেট, তার সামনে পূর্ব-পশ্চিমে রাস্তা চলে গিয়েছে । লোকে বলেন, এই রাস্তার দু’পাশে ছিল কাঠের গোলা । সেখান থেকে এই নামটা এসেছে বলে মনে করেন অনেকে ।
মুর্শিদাবাদ জেলা ইতিহাস ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের সদস্য অরিন্দম রায়ের কথায়, 1873 সালে জিয়াগঞ্জের রাজা লক্ষ্মীপৎ সিং দুগর কাঠগোলা বাগানবাড়িটি কেনেন । লক্ষ্মীপৎ, জগপৎ, মহীপৎ এবং ধনপৎ - এই চার ভাই এখানে থাকতেন । এখনও বাগানে ঢুকলে দেখা যায় এই চার ভাইয়ের ঘোড়ায় চড়া মূর্তি । সৌন্দর্যায়ন বাড়াতে বছর কয়েক আগে বিনোদনের একটি অংশ রূপে চিড়িয়াখানা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে নানান ধরনের পাখি রাখা হয়েছে ।
15 অগাস্ট 1947 সালে দেশ স্বাধীন হলেও, মুর্শিদাবাদ কিন্তু ওইদিন স্বাধীন হয়নি । কিছুজনের মতে, তৎকালীন সময়ে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের কাছে নবাব ওয়াসিফ আলি মির্জা আবেদন করেছিলেন, মুর্শিদাবাদকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করতে এবং সেই আবেদনের ভিত্তিতে তিনদিন পর মুর্শিদাবাদ ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং স্বাধীন ভারতের একটি অংশ হয় । আজ ভারতবর্ষ ব্রিটিশ শাসনমুক্ত । কিন্তু সেদিনের সেই চক্রান্তের কালিমা আজও বহন করে চলেছে কাঠগোলার বাগান ।