পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

ভারী বৃষ্টির জেরে নষ্ট পানের বরজ, মাথায় হাত চাষিদের - বর্ষণের কারণে নষ্ট পানের বরজ

ভারী বৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়ে গিয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার নওদা ত্রিমোহিনী এলাকার বহু পানের বরজ । চাষের টাকা কীভাবে ঘরে তুলবেন তাই নিয়ে উদ্বিগ্ন পান চাষিরা ৷

নওদা
নওদা

By

Published : Aug 4, 2020, 9:37 PM IST

নওদা, 29 জুলাই : লাভের আশায় লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার পান চাষিরা । কিন্তু ভারী বৃষ্টি সেই আশায় জল ঢেলেছে ৷ বরজে জল জমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পানের গোড়া । হলুদ হয়ে যাচ্ছে পান পাতা । মরে যাচ্ছে পানগাছ । যার ফলে পাইকারি বাজারে ওই পানের দাম এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে ৷ এই পরিস্থিতিতে লাভের অঙ্ক তো দূরের কথা চাষের জন্য যে টাকা খরচ হয়েছে তা ঘরে তুলতে পারবেন কি না তা নিয়ে মাতায় হাত পানচাষিদের ৷

এবছর ভারী বৃষ্টির জেরে প্রায় 100 বরজ পানের জমিতে জল জমেছে ৷ যার ফলে পচন ধরেছে পানগাছের গোড়ায় ৷ হলুদ হচ্ছে পানপাতা ৷ মুর্শিদাবাদ জেলার নওদার ত্রিমোহিনী এলাকা পান চাষের জন্য বিখ্যাত । হাজার হাজার একর জমিতে প্রতি বছর পান চাষ করেন সেখানকার চাষিরা । এই পান চাষ করেই সংসার চলে অনেকের ৷ যে সব চাষির নিজের জমি রয়েছে তাঁরা সেই জমিতেই পান চাষ করেন ৷ জমি নেই এমন অনেক চাষি প্রতিবছর বাৎসরিক জমি লিজ় নিয়ে পান চাষ করেন ৷ সেক্ষেত্রে প্রতি বিঘা লিজ়ে বছরে 15 থেকে 20 হাজার টাকা দিতে হয় ওই চাষিদের ৷ তারপর রয়েছে চাষের খরচ ৷ প্রতি 10 কাঠা জমিতে পানের বরজ করতে খরচ পড়ে 50 থেকে 60 হাজার টাকা ৷ তবে ত্রিমোহিনী এলাকার বেশির ভাগ চাষিই জমি লিজ় নিয়ে চাষ করে থাকেন ৷ তার উপর রয়েছে শ্রমিকের মজুরি ৷

নষ্ট পানের বরজ, উদ্বিগ্ন পান চাষিরা

একজন শ্রমিক একদিনে 100 পন(1 পন সমান 80 পিস) পান তুলতে পারেন । শীতকালে ফলন বাড়ায় প্রতিদিন বরজ থেকে পানের পাতা তোলা যায় । শীতকালে পানের গুণগত মান অনেক বাড়ে। ফলে সেই সময় পান চড়া দামে বিক্রি হয় । গত বছর শীতকালে নওদার ত্রিমোহিনী পান বাজারে পন প্রতি পানের দাম উঠেছিল 110 টাকা । এই বাজার থেকেই ভিন রাজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশেও পান রপ্তানি হয় । কিন্তু শীত আসতে এখন অনেকটা দেরি ৷ ইতিমধ্যেই ভারী বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ নতুন বরজ নষ্ট হয়েছে । এই সময় প্রতিবছর ত্রিমোহিনী পাইকারি বাজার থেকে প্রতিদিন অন্তত কমপক্ষে চার লরি পান রপ্তানি হত । এবার সেই রপ্তানি নেমে এসেছে এক লরিতে । দামের কথা তো ছেড়েই দেওয়ার মতো ৷ গত বছর এই সময়ে চাষিরা পানের দাম পেয়েছিলেন পন প্রতি 50 থেকে 60 টাকা । এবছর সেই দাম নেমে এসেছে 15 থেকে 20 টাকায় । সেই সঙ্গে বরজ নষ্ট হওয়ার কারণে উৎপাদন কম ৷ পাইকারি বাজারে আমদানিও তলানিতে এসে ঠেকেছে ।

ত্রিমোহিনীর পানচাষি ডালিম মণ্ডল বললেন, "এবার ভারী বৃষ্টির কারণে পানের বরজে জল জমে থাকায় ধীরে ধীরে পান গাছে পচন ধরতে শুরু করেছে । গাছের গোড়ায় জল জমে থাকায় অধিকাংশ পানপাতা হলুদ হয়ে যাচ্ছে ।" স্থানীয় চাষিদের ভাষায় এই রোগের নাম বজকা রোগ । ত্রিমোহিনী এলাকায় পুরুষদের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে পানের বরজে কাজ করেন মহিলারা । ওই এলাকার মহিলা পান চাষি বুলুযারা বিবি বলেন, "এবছর ফসল নষ্ট হয়েছে অনেক ৷ বরজ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে । সরকারি সুযোগ-সুবিধা না পেলে সংসার চালানো, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগানো আমাদের পক্ষে অসম্ভব ।"

জেলা উদ্যান পালন উপ অধিকর্তা প্রভাস মণ্ডল বলেন, "আমরা চাষিদের অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে পান চাষ করার পরামর্শ দিয়ে থাকি । যে জমিতে নিকাশি ব্যবস্থা ভালো না জল জমে সেই জমি পান চাষের পক্ষে অনুপযুক্ত । ভারী বৃষ্টির কারণে এবার পান চাষে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে ।" জৈব সারের সঙ্গে কিছু রাসায়নিকের মিশ্রণ ছড়িয়ে বজকা রোগ প্রতিরোধ করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রভাসবাবু । তবে কীটনাশক যাতে না ব্যবহার করা হয় তারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি ।

আবহাওয়া দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী এবছর জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত জেলায় 57 শতাংশ অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে । আর এই বৃষ্টি বিপর্যয় ডেকে এনেছে পান চাষে । চাষের ক্ষতির হিসেবটা আরও পরিষ্কার ফুটে ওঠে পাইকারি বাজারে ৷ পান ব্যবসায়ী খায়রুল হক বললেন, "বৃষ্টির কারণে পানের গুণগত মান অনেক কমেছে । গাছের গোড়ায় জল জমে থাকায় পানপাতা হলুদ রং ধরেছে ৷ বাজারে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে না ৷ ফলে লাভের অঙ্ক গতবছরের তুলনায় অনেক কম ৷ ফলে চাষিরা প্রত্যাশিত দাম পাচ্ছেন না ৷"এই পরিস্থিতিতে সাহায্যের জন্য সরকারের দিকেই চেয়ে রয়েছেন পান চাষিরা ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details