পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By

Published : Aug 21, 2020, 8:25 PM IST

ETV Bharat / state

মাছের দেখা নেই, হতাশা-আতঙ্কে দিন কাটছে ভাগীরথীর মৎস্যজীবীদের

মাছ নেই ভাগীরথীতে ৷ আগে প্রতিবছর ভরা বর্ষায় মৎস্যজীবীদের জালে উঠে আসত গঙ্গার ফসল ইলিশ । এখন ইলিশের দেখা নেই ৷ সারাদিন পরিশ্রম করে জালে আসছে অন্য মাছ ৷ তাও সামান্য পরিমাণে ৷ এই মাছ বিক্রি করে সংসার চালাতে চরম বিপাকে পড়েছে মৎস্যজীবীরা ৷

fishermen spending their days in extreme despair
মাছের দেখা নেই ভাগীরথীতে

বহরমপুর, 15 অগাস্ট : ভরা বর্ষায় প্রতিবছর মৎস্যজীবীদের জালে উঠে আসত গঙ্গার রুপোলি ফসল। বর্ষা এলেই আশায় বুক বেঁধে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা সাজিয়ে গঙ্গায় নেমে পড়ত মৎস্যজীবীরা । সারাবছরের খোরাক শুধু বর্ষাকালেই যুগিয়ে দিত ভাগীরথী। কিন্তু এবার দু'পারের হাজার হাজার মৎস্যজীবীদের হতাশ করেছে ভাগীরথী। জালে উঠছে না সেভাবে মাছ। রুই ,কাতলা, পাঙাসের মতো দু'একটি মাছ যদিও বা জালে উঠছে কিন্তু দেখা মিলছে না ইলিশের । মৎস্যজীবীদের দাবি, সরকার থেকে ভাগীরথীতে মাছ না ছাড়াই প্রকৃতির ভাণ্ডার ক্রমশ শূন্য হতে বসেছে । জেলা মৎস্য দপ্তরের সহঅধিকর্তা অমলেন্দু বর্মণ বলেন, ''মৎস্যজীবীদের দাবি সম্পূর্ণ ভুল । প্রতিবছর গঙ্গায় মাছ ছাড়া হয় । কিন্তু মৎস্যজীবীরা নিজেরাই নিজের পায়ে কুড়াল মারছে। বারবার সচেতন করার পরও মৎস্যজীবীরা জালে তুলছেন ছোটো মাছ এবং ডিম ভরতি মা মাছ। মা মাছ ডিম ছাড়ার সুযোগ পেলে মৎস্যজীবীরা মাছ ধরে শেষ করতে পারবে না।''

বেলডাঙা থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত ভাগীরথীর দুপারে কয়েক হাজার মৎস্যজীবীর বাস । মাছ ধরে সংসার চালায় এই পরিবারগুলি। সকাল থেকে শুরু করে মাঝরাত পর্যন্ত গঙ্গায় দাঁড় টানা নৌকা নিয়ে ভেসে বেড়ায় এই মৎসজীবীরা । অন্যবার ভাগীরথীর বুকে একবার জাল ছড়াতে পারলেই সেই জালে উঠে আসত দেড় কেজি, 2 কেজি ওজনের ইলিশ, 10-12 কেজি ওজনের রুই-কাতলা ৷ এমনকী 70 কেজি ওজনের বাঘাড় মাছ জলে উঠত বলেও তাদের দাবি । প্রবীণ মৎস্যজীবী সুবোধ হালদারের শুধু ভাগীরথী নয় পদ্মা, মেঘনা, যমুনাতেও মাছ ধরার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি বললেন, ''গত বছর পর্যন্ত চার আলি (১ আলি সমান চারটি) পাঁচ আলি করে ইলিশ উঠত । এবার একটা ইলিশেরও দেখা পাইনি। তিনি আরও বলেন সরকার যদি ভাগীরথীতে মাছ ছারে তাহলে সরকারের কাছে আমাদের কিছুই চাওয়ার প্রয়োজন থাকবে না ।''

হতাশায় দিন কাটছে মৎস্যজীবীদের

বহরমপুর শহর লাগোয়া কৃষ্ণমাটি থেকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় অন্তর কুড়িটি নৌকা ভাসে ভাগীরথীতে। এক একটি নৌকায় থাকেন সাতজন করে মৎস্যজীবী। মাঝ গঙ্গায় গিয়ে জাল বিছিয়ে এবং সেই জাল তুলতে সময় লাগে কমপক্ষে দু'ঘণ্টা। এখন অধিকাংশ নৌকায় ফিরে আসছে খালি হাতে। একসময় ভাগীরথীতে জাল ফেলতে সরকারকে কর দিতে হত মৎস্যজীবীদের। 2011 সালে গঙ্গায় মাছ ধরা নিষ্কর ঘোষণা করেছে তৃণমূল সরকার। এটা মৎস্যজীবীদের কাছে উপরি পাওনা । কিন্তু, এখন মাছ না পাওয়ার হতাশা কেউ চেপে রাখতে পারছে না। কৃষ্ণমাটির মৎস্যজীবীদের সীমানা বাসুদেবখালি থেকে লোকপুর পর্যন্ত প্রায় 7 কিমি জলাভূমি । এই সীমানায় মাছ ধরে সংসার চালাতে হয় অন্ততপক্ষে 140 জনকে। কৃষ্ণ হালদারের নৌকা জলে নেমে তিন ঘণ্টার পরিশ্রমে তুলে আনতে পেরেছে দুটি রিঠা মাছ। ওজন হিসাবে পাইকারি বাজারে মূল্য 1000 থেকে 1200 টাকা। সেই হিসাবে প্রত্যেকের আয় 150 থেকে 200 টাকার মধ্যে। একটি নৌকা দিনে একবার এবং রাতে একবার গঙ্গায় নামার সুযোগ পায়। কৃষ্ণ হালদার বলেন, ''ভাগীরথী যেভাবে মাছ শূন্য হয়ে পড়ছে জানি না এরপর আমাদের কী হবে। নিজেদের জমিজমাও নেই যে চাষ করে খাব। এখন সরকার যদি না দেখে তাহলে আমাদের সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়বে।''

হতাশায় দিন কাটছে হাজার হাজার মৎস্যজীবীর

সম্প্রতি রাজ্য সরকার জয়বাংলা পেনশন প্রকল্পে মুর্শিদাবাদের 662 জন মৎস্যজীবীকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। আর্থিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রত্যেককে দেওয়া হবে মাসিক এক হাজার টাকা । কিন্তু, সেই তালিকায় কৃষ্ণমাটির কোনও মৎস্যজীবীর নাম উঠে আসেনি । রাজনৈতিক মেরুকরণের অভিযোগ তুলে মৎস্যজীবীরা চাপা ক্ষোভে ফুঁসছে। তাদের দাবি, সরকার যদি বছর বছর নদীতে মাছের পোনা ফেলে তাহলে সমস্যার সমাধান হবে ৷

জেলা মৎস্য দপ্তরের দাবি, প্রতিবছর ভাগীরথীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ ফেলা হয়। এছাড়া সমুদ্রের মোহনা দিয়ে মিঠা জলে ডিম পারতে গঙ্গায় প্রবেশ করে লাখ লাখ ইলিশ। কিন্তু মিঠা জলে ডিম ছাড়ার আগেই মৎস্যজীবীদের জালে ধরা পড়ে মা ইলিশ। জার জেরে গঙ্গায় কমেছে ইলিশের সংখ্যা । এছাড়া এক শ্রেণীর অসাধু মৎস্যজীবী গঙ্গায় বিষ ছড়িয়ে ছেঁকে নেয় ছোটো মাছ। যার ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য ক্রমশ নষ্ট হতে বসেছে। অতিমাত্রায় গঙ্গা দূষণ মাছের ভাণ্ডার কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলেও মনে করছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা।

জালে উঠছে না মাছ, হতাশ মৎস্যজীবীরা...

কারণ যাই হোক না কেন, মৎস্যজীবীরা এক বুক আশা নিয়ে পরিপাটি জাল সাজিয়ে নৌকা নিয়ে গঙ্গায় ভাসে । কঠোর পরিশ্রমের পর খালি হাতে ফেরার হতাশা ধীরে ধীরে তাদের জীবনীশক্তিকে শুষে নেয় । আগামী দিনে তাদের কী হবে তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে মৎসজীবীরা। ভাগীরথী কি আবার তার মাছের ভাণ্ডার পূর্ণ করবে ! মৎস্যজীবীদের হতাশা কাটাতে পারবে ? সেটাই এখন প্রশ্ন ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details