বহরমপুর, 22 অগাস্ট : সময় পেলেই বাকি বাচ্চাদের মতো খেলতে চায় ও । সুযোগ পেলেই এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায় । চোখের আড়াল হলে জঙ্গলে, পুকুরের পাড়ে বসে কী যেন বলে । নিজের মনেই খেলে মাছ, পাখি, গাছ আর প্রকৃতির সঙ্গে । তবে, ফেরার সময় হলেই সব গুলিয়ে যায় । শেষে মাইকে হাঁক দিয়ে ফিরিয়ে আনতে হয় ঘরে । আয়েশা সিদ্দিকি । যাকে 'পাগল' তকমা দিয়ে আব্বা আম্মিও ছেড়ে গেছে । দাদি মর্জিনার কাছেই মানুষ আড়াই বছর থেকে । বয়সের ভার সামলাতে না পেরে নাতনিকে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতেন মর্জিনা বিবি ।
জন্মানোর পর থেকে সুস্থই ছিল বহরমপুর ব্লকের জীবননগরের আয়েশা । আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই খাওয়াদাওয়া, খেলা, দুষ্টুমি করা, আম্মির কোলে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ানো, সবই ছিল স্বাভাবিক । আড়াই বছর বয়সে হঠাৎই খেতে খেতে পড়ে যায় মাটিতে । তারপর মাথায় চোট পেয়ে মানসিক ভারসাম্য হারায় । মুম্বই, বেঙ্গালুরু, মুর্শিদাবাদের বড় বড় হাসপাতালে দেখিয়েও কিছু হয়নি । আর্থিক অবস্থার জন্য পিছপা হতে হয়েছে । শেষে আয়েশার আব্বা-আম্মি রোজগারের টানে চলে গেছেন মুম্বইয়ে । আয়েশাকে রেখে গেছেন দাদির কাছে । বয়সের ভারে মর্জিনা বিবি সামলাতে পারেন না তাকে । তাই শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেই লোকের বাড়ি বাড়ি অন্নের সন্ধানে যান । প্রতিবেশীরাও দু'মুঠো জোগান দিয়ে সাহায্য করে । মর্জিনা বিবির কথায়, "দিনে চার বার খায় আয়েশা । সকলে সাহায্য না করলে কী করে জোগাতাম ?" প্রতিবেশীদের সাহায্যেই আয়েশার খোঁজ পায় শিশু সুরক্ষা কমিটির এক মহিলা সদস্য । তাঁরই উদ্যোগে সাত বছর পর শিকল ছেড়ে মুক্তির স্বাদ পেল আয়েশা । চিকিৎসার জন্য তাকে পাঠানো হল হোমে ।