মালদা, 10 এপ্রিল: আশ্বিনে দুর্গাপুজো, চৈত্রে গাজন ৷ বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণে গাজন বিশেষ জায়গা করে রয়েছে ৷ আগামী শুক্রবার গোটা রাজ্যে পালিত হবে চড়ক ৷ বলা হয়, গাজন শিব-পার্বতীর বিয়ের উৎসব ৷ এর নানা রীতি রয়েছে ৷ তার কিছু পাওয়া যায় মঙ্গলকাব্যেও ৷ অষ্টাদশ শতকে বাঙালির মঙ্গলকাব্য রচনা শুরু হয় ৷ যতগুলি মঙ্গলকাব্য রয়েছে, তার মধ্যে নবীনতম শিবায়ন ৷ সেখানে গাজন উৎসবে সং সাজার রীতিরও উল্লেখ রয়েছে বলে জানা যায় ৷ সঙের রঙিন উপার্জনে এখন মজেছে কৈশোরও ৷ তার জন্য ক’দিন স্কুল বা কাজের জায়গাতেও গোল্লাছুট ৷
গাজন উৎসবে রং মেখে সং সেজে গ্রামেগঞ্জে ঘোরার রীতি অনেক পুরোনো ৷ এর পিছনেও রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনী ৷ সেই কাহিনী বলছে, কোনও এক সময় পার্বতী কৈলাসে শিবকে একা ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যান ৷ বেশ কিছুদিন একা থাকার পর পার্বতীর বিরহ আর সহ্য করতে পারছিলেন না শিব ৷ তিনি বাপের বাড়ি থেকে স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার জন্য নন্দিকে পাঠান ৷ কিন্তু তাতেও তো বেশ কিছুটা সময় লাগবে ৷ পার্বতীর বিরহে শিব ছটফট করতে থাকেন ৷
বিষয়টি নজরে আসে অপ্সরা চিত্রলেখার ৷ তিনি ঠিক করেন, যতদিন পার্বতী কৈলাসে না ফিরছেন, তিনিই পার্বতী সেজে শিবের মনোরঞ্জন করবেন ৷ যেমন ভাবা, তেমন কাজ ৷ নন্দির সঙ্গে আসল পার্বতী কৈলাসে পৌঁছতেই চিত্রলেখা নিজের রূপে ফিরে যান ৷ ভুল ভাঙে শিবেরও ৷ কথিত আছে, তখন থেকেই গাজন উৎসবে সং সাজার রীতি ৷
শুধু সং সাজাই নয়, গাজনে মুখা নাচেরও প্রচলন রয়েছে ৷ সেটা শুরু হয়েছিল মালদা জেলা থেকেই ৷ প্রচলিত লৌকিক কাহিনী অনুযায়ী, চৈত্রের শেষ দিকে মালদার একটি গ্রামে কিশোরের দল পুকুরের ধারে খেলছিল ৷ সেই সময় তারা ওই পুকুরে একটি মুখোশ ভেসে থাকতে দেখে ৷ কৌতুহলবশত ওই মুখোশ এক কিশোর নিজের মুখে পরে নেয় ৷ কিন্তু তারপর আর কেউ মুখোশ খুলতে পারছিল না ৷ তখনই নাকি দৈববাণী হয়, মা চামুণ্ডার পুজো দিলেই ওই কিশোর মুখোশ থেকে পরিত্রাণ পাবে ৷ তখন থেকেই গাজনের সময় মুখোশনাচ চালু হয় ৷