পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Gajon Festival: উৎসবের গাজনে রঙিন সং, উপার্জনের আশায় সন্ন্যাসী কিশোরও

শিব-পার্বতীকে ঘিরে আবর্তিত গাজন উৎসবের আমেজ ধরা পড়েছে গ্রামে-গঞ্জে ৷ মালদায় উপার্জনের আশায় সং সেজে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন অনেকে ৷ গাজনের সন্ন্যাসী হতে দেখা যাচ্ছে কিশোরদেরও ৷

By

Published : Apr 10, 2023, 4:45 PM IST

Gajon Festival ETV bharat
গাজন উৎসব

রং মেখে সং সেজে গাজন উৎসবে মেতেছে কিশোররাও

মালদা, 10 এপ্রিল: আশ্বিনে দুর্গাপুজো, চৈত্রে গাজন ৷ বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণে গাজন বিশেষ জায়গা করে রয়েছে ৷ আগামী শুক্রবার গোটা রাজ্যে পালিত হবে চড়ক ৷ বলা হয়, গাজন শিব-পার্বতীর বিয়ের উৎসব ৷ এর নানা রীতি রয়েছে ৷ তার কিছু পাওয়া যায় মঙ্গলকাব্যেও ৷ অষ্টাদশ শতকে বাঙালির মঙ্গলকাব্য রচনা শুরু হয় ৷ যতগুলি মঙ্গলকাব্য রয়েছে, তার মধ্যে নবীনতম শিবায়ন ৷ সেখানে গাজন উৎসবে সং সাজার রীতিরও উল্লেখ রয়েছে বলে জানা যায় ৷ সঙের রঙিন উপার্জনে এখন মজেছে কৈশোরও ৷ তার জন্য ক’দিন স্কুল বা কাজের জায়গাতেও গোল্লাছুট ৷

গাজন উৎসবে রং মেখে সং সেজে গ্রামেগঞ্জে ঘোরার রীতি অনেক পুরোনো ৷ এর পিছনেও রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনী ৷ সেই কাহিনী বলছে, কোনও এক সময় পার্বতী কৈলাসে শিবকে একা ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যান ৷ বেশ কিছুদিন একা থাকার পর পার্বতীর বিরহ আর সহ্য করতে পারছিলেন না শিব ৷ তিনি বাপের বাড়ি থেকে স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার জন্য নন্দিকে পাঠান ৷ কিন্তু তাতেও তো বেশ কিছুটা সময় লাগবে ৷ পার্বতীর বিরহে শিব ছটফট করতে থাকেন ৷

বিষয়টি নজরে আসে অপ্সরা চিত্রলেখার ৷ তিনি ঠিক করেন, যতদিন পার্বতী কৈলাসে না ফিরছেন, তিনিই পার্বতী সেজে শিবের মনোরঞ্জন করবেন ৷ যেমন ভাবা, তেমন কাজ ৷ নন্দির সঙ্গে আসল পার্বতী কৈলাসে পৌঁছতেই চিত্রলেখা নিজের রূপে ফিরে যান ৷ ভুল ভাঙে শিবেরও ৷ কথিত আছে, তখন থেকেই গাজন উৎসবে সং সাজার রীতি ৷

শুধু সং সাজাই নয়, গাজনে মুখা নাচেরও প্রচলন রয়েছে ৷ সেটা শুরু হয়েছিল মালদা জেলা থেকেই ৷ প্রচলিত লৌকিক কাহিনী অনুযায়ী, চৈত্রের শেষ দিকে মালদার একটি গ্রামে কিশোরের দল পুকুরের ধারে খেলছিল ৷ সেই সময় তারা ওই পুকুরে একটি মুখোশ ভেসে থাকতে দেখে ৷ কৌতুহলবশত ওই মুখোশ এক কিশোর নিজের মুখে পরে নেয় ৷ কিন্তু তারপর আর কেউ মুখোশ খুলতে পারছিল না ৷ তখনই নাকি দৈববাণী হয়, মা চামুণ্ডার পুজো দিলেই ওই কিশোর মুখোশ থেকে পরিত্রাণ পাবে ৷ তখন থেকেই গাজনের সময় মুখোশনাচ চালু হয় ৷

গাজনের সং এখনও ঘোরে মালদা শহরে ৷ প্রায় 15 দিন ধরে প্রতি সকালে শহরের বালুচরের শ্মশান কালী মন্দিরে সং সাজে অনেক কিশোর ৷ তারপর বেলা 11টা থেকে বিকেল 5টা পর্যন্ত তারা ছড়িয়ে পড়ে জেলা জুড়ে ৷ তাদেরই একজন শুভ রায় ৷ ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ৷ সে জানায়, “শ্যামাকালী সেজেছি ৷ 1 তারিখ থেকে আমরা সং সাজছি ৷ এই ক’দিন পড়াশোনা বন্ধ রেখেছি ৷ চড়কের পর ফের পড়াশোনা শুরু করব ৷ স্কুলও যাব ৷” তবে সে কোন স্কুলে পড়ে, সেটাই বলতে পারেনি বাচ্চা ছেলেটি ৷

সং সাজার জন্য দিন পনেরো কাজ থেকে ছুটি নিয়েছে বছর ষোলর গাজন সন্ন্যাসী বিশ্বজিৎ চৌধুরী ৷ সে জানায়, “সং সেজে জেলা ঘুরে আমরা গাজন পুজোর খরচ সংগ্রহ করি ৷ দু’বছর ধরে সং সাজছি ৷ এ বার শিব সেজেছি ৷ চালের গুদামে কাজ করি ৷ পুজোর জন্য ক’দিন মালিক ছুটি দিয়েছেন ৷ তবে সং সেজে আমাদের উপার্জনও বেশ ভালো হয় ৷”

একই বক্তব্য যীশু দাসের ৷ তার কথায়, “1 তারিখ থেকে আমরা সং সাজতে শুরু করেছি ৷ আমিও গুদামে কাজ করি ৷ সং সাজার জন্য কাজ বন্ধ রয়েছে ৷ ঠাকুরের পুজোয় সং সাজার শখ ছাপিয়ে এখন নেশা হয়ে গিয়েছে ৷ মানুষ অনেক কথা বলে ৷ তবে আমাকে কেউ কখনও নিরুৎসাহ করেনি ৷”

প্রতিদিন সকালে মন্দিরে সং সাজাতে চলে আসেন এলাকারই মৃৎশিল্পী পাপাই দাস ৷ তিনি বলেন, “প্রতি বছর 14 দিন এই কাজ করি ৷ আমি পেশাদার শিল্পী ৷ বেশ কয়েকজনকে সাজাই ৷ আয়ও ভালো হয় ৷ সবচেয়ে বড় কথা, এই কাজ করতে আমার ভালো লাগে ৷”

আরও পড়ুন:মালদায় চড়ক উৎসবে ভক্তদের ভিড়

ABOUT THE AUTHOR

...view details