টাকার লোভেই যুবককে খুন দুই বন্ধুর !

বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি থেকে মাত্র 25 মিটার দূরে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় কালীতলা গ্রামের বাসিন্দা অনীক দাসের মৃতদেহ ৷ সেদিন সন্ধেয় ব্যাডমিন্টন খেলার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরোয় সে ৷ কিন্তু আর বাড়ি ফেরেনি ।

মালদা, 10 জানুয়ারি : টাকার লোভেই পাড়ার ছেলেকে খুন করেছিল দুই যুবক ৷ রতুয়া 2 ব্লকের পরানপুর এলাকার কালীতলা গ্রামে স্কুল পড়ুয়ার খুনের 24 ঘণ্টার মধ্যেই রহস্যের উন্মোচন করেছে পুখুরিয়া থানার পুলিশ ৷ গ্রেপ্তার করা হয়েছে মূল দুই অভিযুক্তকে ৷ পুলিশি জেরায় ধৃতরা নিজেদের অপরাধের কথা স্বীকারও করে নিয়েছে ৷ এই খুনের ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ ৷ চাঁচল মহকুমা আদালতে তুললে ধৃতদের সাতদিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক ৷

বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি থেকে মাত্র 25 মিটার দূরে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় কালীতলা গ্রামের বাসিন্দা অনীক দাসের মৃতদেহ ৷ 13 বছরের অনীক পরানপুর হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত ৷ সেদিন সন্ধেয় ব্যাডমিন্টন খেলার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরোয় সে ৷ দিদিকে বলে যায়, পাশের বাড়ির অংশুর সঙ্গে খেলতে যাচ্ছে ৷ আর বাড়ি ফেরেনি অনীক৷ কিছুক্ষণ পর বাড়ির সামনে একটি চিঠি পড়ে থাকতে দেখেন তার দিদি ৷ সেখানে লেখা ছিল, অনীককে অপহরণ করা হয়েছে ৷ তবে মুক্তিপণের কোনও কথা চিঠিতে লেখা ছিল না ৷ রাতে অনীকের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন এলাকার কয়েকজন ৷ খবর পেয়ে পুলিশ গ্রামে এলে অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবিতে তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় এলাকাবাসী ৷

গোটা ঘটনায় অনীকের বাবা আশিসকুমার দাস পাশের বাড়ির বিতান নামে এক যুবক ও তার পরিবারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন ৷ তিনি বলেন, বিতান গাঁজা বিক্রি করে ৷ মাস দেড়েক আগে তিনি তাকে এসব বন্ধ করতে বলেছিলেন৷ সম্ভবত তারই জেরে তারা ছেলেকে খুন করেছে৷ এই ঘটনায় শুধু বিতান নয়, তাঁর অভিযোগ ছিল গ্রামের আরও আটজনের বিরুদ্ধে৷ ছেলে খুনের ঘটনায় মোট 10 জনের বিরুদ্ধে তিনি পুখুরিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন৷ বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে৷ পরদিন আটক করা হয় আরও পাঁচজনকে৷ টানা পুলিশি জেরায় একসময় ভেঙে পড়ে আবীর দাস ওরফে বিতান ও সাগর কৈবর্ত ৷

তারা স্বীকার করে নেয়, প্রায় 15 দিন আগে পরাণপুর মাঠে ফুটবল খেলার সময় তারা অনীককে অপহরণের ছক কষে ৷ অনীকের বাবার থেকে মুক্তিপণ বাবদ 60 লাখ টাকা আদায় করাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল ৷ কয়েকদিন আলোচনার পর বৃহস্পতিবার সন্ধেয় ব্যাডমিন্টন খেলার কথা বলে তারা অনীককে বাড়ি থেকে বের করে ৷ তার সঙ্গে গল্প করতে করতে ওই পরিত্যক্ত বাড়িতে যায়৷ সেখানে তারা দু’জন মিলে অনীকের মুখ চেপে ধরে৷ দীর্ঘক্ষণ মুখ চেপে থাকায় জ্ঞান হারায় অনীক৷ তখনই তাদের মাথায় আসে, অনীক গোটা ঘটনা সবাইকে বলে দিতে পারে ৷ এতে তাদের সমস্যা দেখা দিতে পারে ৷ এরপরই বিতানকে বাড়ি থেকে দড়ি আনতে বলে সাগর ৷ দড়ি না পেয়ে বিতান ইলেকট্রিক তার নিয়ে আসে৷ এরপর বিতান অনীকের পা চেপে রাখে, সাগর অনীকের গলায় তার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে৷ পরে সবাইকে ভুলপথে চালিত করতে তারাই একটি চিঠি লিখে অনীকদের বাড়ির সামনে ফেলে দেয় ৷

পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছেন, পুলিশি জেরায় দুই যুবক অনীককে খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছে৷ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তাদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে ।