মালদা, 16 ফেব্রুয়ারি: পটনার আনন্দ কুমারকে চেনেন না এমন শিক্ষিত ব্যক্তি এদেশে বিরল ৷ 2002 সালে যিনি নিজের বাড়িতে দুঃস্থ পড়ুয়াদের আইআইটি-র প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছিলেন ৷ তাঁকে নিয়েই পরবর্তীতে তৈরি হয়েছিল ‘সুপার 30’ সিনেমা ৷ প্রথম বছরই তাঁর 30 শিক্ষার্থীর মধ্যে 18 জন আইআইটি পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন ৷ সেই থেকে শুরু ৷ এখনও সুপার 30 চালিয়ে যাচ্ছেন গণিতজ্ঞ আনন্দ কুমার ৷ সেই আনন্দ কুমারের আদর্শেই যেন উদ্বুদ্ধ হয়েছেন রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের বাহারাল গ্রাম পঞ্চায়েতের বৈকণ্ঠপুর গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ মোস্তাফা চৌধুরী ৷ ইচ্ছে থাকলেও নিজে চিকিৎসক হতে পারেননি ৷ এবার বাড়িতেই খুলে ফেলেছেন চিকিৎসক তৈরির কারখানা ৷ বিনা পয়সায় দুঃস্থ ও মেধাবী পড়ুয়াদের বাড়িতে রেখে দিচ্ছেন নিটের কোচিং ৷ মাস আটেক ধরে তাঁর কাছে তালিম নিচ্ছেন 30 জন পড়ুয়া ৷
বৈকণ্ঠপুর গ্রামে মূলত নিম্নবিত্ত পরিবারের বাস ৷ সিংহভাগ বাসিন্দা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ৷ চোখে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন থাকলেও গরিবির দাপটে মাঝপথেই হারিয়ে যায় মেধা ৷ সেই ছেলেমেয়েদের চিকিৎসক করার সংকল্প নিয়ে নিজের বাড়িতে একটি কোচিং সেন্টার খুলে ফেলেছেন মোস্তাফা ৷ নিজে বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল ও সংস্থায় পড়ান ৷ যা উপার্জন হয়, তা দিয়েই তাঁর পড়ুয়াদের বাড়িতে রাখেন ৷ দিনে চার বেলা খাওয়ান ৷ তাঁর সংকল্পে উদ্বুদ্ধ তাঁর কয়েকজন বন্ধুও ৷ তাঁরাও বিনা পারিশ্রমিকে তাঁর বাড়িতে এসে পড়ুয়াদের নিটের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ৷ মোস্তাফার এই কাজে গর্বিত তাঁর গ্রামের মানুষজনও (Youth gives free coaching to students for NEET) ৷
মোস্তাফা সাহেব প্রায় আট বছর ধরে বেসরকারি স্কুল ও সংস্থায় শিক্ষকতা করছেন ৷ তখন থেকেই তাঁর মাথায় ঘুরছিল, নিজের গ্রামের ছেলেমেয়েরা প্রথাগত শিক্ষার বাইরে যেতে পারে না ৷ উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে কোনও কলেজে ভর্তি হয়ে গ্র্যাজুয়েশন ৷ তারপর হাতে গোনা কয়েকজন মাস্টার ডিগ্রি করে ৷ বেশিরভাগই বেকার অবস্থায় বসে থাকে ৷ কিন্তু তাদের যদি একাদশ শ্রেণি থেকেই নিটের জন্য তৈরি করা যায় ৷ তবে তারা অনেকেই ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে পারে ৷ কিন্তু আর্থিক সমস্যায় তিনি এই ছেলেমেয়েদের জন্য এতদিন কিছু করতে পারেননি ৷ সেই সুযোগ অবশেষে তাঁর হাতে আসে ৷ বর্তমানে মালদা জেলায় তৈরি হয়েছে অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৷ তার বেশ কয়েকটিতে অতিথি শিক্ষক হিসাবে কাজ করেন মোস্তাফা ৷ উপার্জন ভালো হতে শুরু করতেই নিজের স্বপ্ন পূরণে নেমে পড়েন তিনি ৷ তবে কয়েকজন পড়ুয়ার বাড়ির তরফেও তাঁকে সামান্য আর্থিক সাহায্য করা হয় ৷