মালদা, 4 ফেব্রুয়ারি: খুব বেশিদিন আগের কথা নয় ৷ মাত্র বছর দশেক ৷ কালিয়াচকের বামনগ্রাম দুষ্কৃতীদের আঁতুরঘর হিসাবেই পরিচিত ছিল ৷ বিশেষ করে সেখানকার লালবাজার এলাকা ছিল কুখ্যাত ৷ সঙ্গে বড়সড় বাহিনী না-থাকলে সেখানে ঢুকতে ইতস্তত বোধ করত পুলিশও ৷ তবে দিন বদলের পালায় বদলেছে সেই বামনগ্রামও ৷ এই দশ বছরে সেখানে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছে বাড়ি বাড়ি ৷ তারই ফসল মহম্মদ নিসার খালেদ ৷ ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ সার্ভিসে পঞ্চম স্থান অধিকার করে সরাসরি পুলিশের ডিএসপি পদে যোগ দিতে চলেছেন খালেদ ৷ যে জায়গায় এতদিন দুষ্কৃতীদের রাজত্ব চলত, সেই জায়গা থেকে দুষ্কৃতী দমনে তাঁর উত্থান যেন রূপকথার গল্প ৷ তাঁর এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত গোটা গ্রাম ৷ আনন্দিত জেলা (youth from Kaliachak ranks fifth in WBCS) ৷
কালিয়াচকের লালবাজারের বাসিন্দা মহববুল শেখ ও মোসাম্মদ উনজেলা বিবি ৷ তাঁদের তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে খালেদ সবার বড় ৷ মহববুল পেশায় শ্রমিক ৷ আগে বিদ্যুৎ দফতরের এক ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতেন ৷ পোলে চেপে কাজ করতে হত তাঁকে ৷ বছর ছ'য়েক আগে সেই কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে ৷ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ইলেক্ট্রিক পোল থেকে নীচে পড়ে যান তিনি ৷ দীর্ঘদিন চিকিৎসা চলে তাঁর ৷ সুস্থ হয়ে স্থানীয় একটি প্লাস্টিক কারখানায় কুড়িয়ে আনা প্লাস্টিক ঝাড়াই বাছাইয়ের কাজ শুরু করেন (Kaliachak youth becomes DSP) ৷
নিজে শ্রমিক হলেও মহববুল স্বপ্ন দেখেছেন তাঁর ছেলেমেয়েদের নিয়ে ৷ প্রবল আর্থিক সংকটেও তাদের শিক্ষিত করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন ৷ অবশ্য তাঁর ভার কিছুটা কমিয়ে দিয়েছিল আল আমিন মিশন ৷ মেধাবী খালেদ নজরে পড়ে গিয়েছিল মিশন কর্তৃপক্ষের ৷ সেখানে থেকেই তার পড়াশোনা চলতে থাকে কার্যত নিখরচায় ৷ আল আমিন মিশন থেকেই খালেদ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পান ৷ কিন্তু তাঁর লক্ষ্য ছিল সিভিল সার্ভিস ৷ 2019 সালে ডব্লিউবিসিএস-এর লিখিত পরীক্ষায় সফলও হন ৷ কিন্তু সেবার ভাগ্য তাঁর সঙ্গ দেয়নি ৷ অবশেষে 2020 সালে তিনি সফল হয়েছেন ৷ শুধু সফল হওয়া নয়, বি গ্রুপে তাঁর নাম রয়েছে পাঁচ নম্বরে ৷