মালদা, 19 অগস্ট: প্রশাসনের উপরেই আশা করেছিলেন তাঁরা ৷ ভেবেছিলেন, গঙ্গার ভয়াল রোষ থেকে তাঁদের বাঁচাতে এগিয়ে আসবে প্রশাসন ৷ সময়মতো ভাঙা বাঁধের মেরামতি হবে ৷ কিন্তু তাঁরা জেনে ফেলেছেন, ভাঙা বাঁধ মেরামতি থেকে সেচ দফতর হাত তুলে নিয়েছে ৷ তাদের নাকি টাকা নেই ৷ তাই প্রশাসনের কেউ এলাকায় পা পর্যন্ত রাখছে না ৷ এতে ভাঙন প্রবণ এলাকার মানুষের আতঙ্ক আরও বেড়েছে ৷ আতঙ্কে মানুষ এখন বোধহয় ঠিক আর ভুলের ব্যবধানটুকু বুঝতে পারছে না ৷ শুক্রবার তার প্রমাণ মিলেছে পশ্চিম রতনপুর গ্রামে ৷ পুণ্যতোয়ার রোষ থেকে বাঁচতে আজ গঙ্গাপুজো করেছেন ওই গ্রামের 50 জন মহিলা ৷ তাঁদের বক্তব্য, এই পরিস্থিতি থেকে তাঁদের বাঁচাতে পারে একমাত্র মা গঙ্গাই ৷ গোটা ঘটনায় লজ্জিত বিজ্ঞানকর্মীরা ৷ তাঁদের প্রশ্ন, আতঙ্কে মানুষ যেভাবে আদিম যুগে ফিরে যাচ্ছে, তার দায় কার?
নদীকে তুষ্ট করতে আজ পশ্চিম রতনপুর গ্রামে গঙ্গাপুজো দিয়েছেন অঞ্জলি চৌধুরি ৷ তিনি বলেন, "গঙ্গা আমাদের বাড়িঘর কেড়ে নিয়েছে ৷ জমি-জায়গাও আর নেই ৷ আমরা গরিব মানুষ ৷ যাব কোথায়? গঙ্গা বাড়িঘর না কাটলে আমরা এখানে থাকতে পারব৷ প্রশাসনের কারও দেখা নেই ৷ কী খাচ্ছি, কেমনভাবে থাকছি, কেউ দেখে না ৷ মাধেমধ্যে বিডিও আসে, ডিএম আসে ৷ দেখে চলে যায় ৷ কোনও কাজ হয় না ৷ তাই গঙ্গাকে তুষ্ট করতে আজ গ্রামের 50 জন মহিলা গঙ্গাপুজো করেছি ৷"
একই বক্তব্য ওই গ্রামের ঝাক্কা চৌধুরির ৷ তাঁর কথায়, আজ পুজো করে তাঁরা মা গঙ্গাকে ধ্বংসলীলা থামাতে বিনতি জানালেন ৷ গরিব মানুষ তাঁরা বাড়িঘর তলিয়ে গেলে কোথায় যাবেন? কেউ তো তাঁদের দেখতে আসছে না ৷ তিনি বলেন, "জানি, পুজো করে গঙ্গাকে থামানো যাবে না ৷ কিন্তু এখন গঙ্গার কাছে বিনতি করা ছাড়া আর উপায় নেই ৷ গান গেয়ে গঙ্গাকে তুষ্ট করার চেষ্টা করছি ৷"
তৃণমূল পরিচালিত বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রামলাল চৌধুরীর বক্তব্য, এ নিয়ে ভূতনির বাঁধ সাতবার ভাঙল ৷ এর আগে যখনই বাঁধ ভেঙেছে, সেচ দফতর আর প্রশাসন আসত ৷ মোটা অংকের টাকার টেন্ডার হত৷ ঠিকাদাররা লুট করত ৷ এর জন্যই ভূতনির আজ এই অবস্থা ৷ সরকার চাইছে না ভূতনি বাঁচুক ৷ এতে ভূতনির আয়তন 50 শতাংশ কমে গিয়েছে ৷ এবার দু’জায়গায় বাঁধ ভেঙে গিয়েছে ৷ জল এখনও ভিতরে ঢোকেনি ৷ তবে ঢুকবেই ৷ ভাদ্রে জলস্তর বাড়বেই ৷ গোটা ভূতনি ভাসবে ৷ বিলাইমারি আর মহানন্দটোলাও বাঁচবে না ৷ মানুষ যাবে কোথায়? এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ এলাকায় আসেনি ৷ মানুষ নিজেদের বাড়িঘর ভেঙে ফেলছে ৷ খুব খারাপ পরিস্থিতি ৷
আরও পড়ুন:একে গঙ্গায় রক্ষা নেই, দোসর কোশি ; দুই নদীর ভাঙনে বিপন্ন লাখ তিনেক মানুষ