মালদা, 24 জুন : ভবিষ্যতে গ্যাংস্টার হওয়াই কি উদ্দেশ্য ছিল আসিফের ? নিজের কিলার ইমেজ তৈরি করার জন্যই কি সে পরিবারের চারজনকে খুনের সিদ্ধান্ত নেয় ? এমনই সব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তদন্তকারীদের মনে ৷
আসিফের মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ ঘেঁটে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, শুধু ইংরাজি সিনেমা ছাড়াও দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা দেখার নেশাও ছিল তার ৷ সম্ভবত সেখান থেকেই তার মাথায় গ্যাংস্টার হওয়ার নেশা চেপে বসে ৷ তদন্ত এগনোর সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়েও ভাবনা শুরু করেছেন তদন্তকারীরা ৷ তবে খুনের মামলায় আসিফের দাদা আরিফকে রাজসাক্ষী করার বিষয়ে এক প্রকার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে পুলিশ ৷
বিচারকের সামনে গোপন জবানবন্দি দেওয়ানোর জন্য আজকালের মধ্যেই আরিফকে মালদা জেলা আদালতে পেশ করা হবে বলে জানা গিয়েছে ৷
প্রসঙ্গত, 18 জুন রাত থেকে রাজ্য, এমনকি দেশেরও নজর কালিয়াচকের অখ্যাত পুরনো ১৬ মাইল গ্রামের একটি বাড়ির দিকে ৷ 19 জুন এই বাড়ি লাগোয়া নির্মীয়মাণ এক গুদামঘর থেকে পরিবারের চারজনের কবরস্থ দেহ উদ্ধার করে পুলিশ ৷ খুনি, বাড়িরই ছোট ছেলে আসিফ মহম্মদ ৷ চার মাস আগে, গত 18 ফেব্রুয়ারি সে বাবা-মা, বোন ও ঠাকুমাকে দীর্ঘ পরিকল্পনা করে খুন করে ৷ খুনের ছক ও প্রমাণ লোপাটের পরিকল্পনা প্রায় নিখুঁতভাবে সফলও করে ফেলে সে ৷ পুলিশের একাংশের বক্তব্য, এক্ষেত্রে দাদা আরিফের বেঁচে যাওয়াটাই আসিফের কাল হয় ৷ সে নিজেও এ নিয়ে তদন্তকারীদের সামনে আক্ষেপ করেছে ৷ শেষ পর্যন্ত মামা শিশ মহম্মদের কথায় 18 জুন গভীর রাতে আরিফ কালিয়াচক থানায় গিয়ে গোটা ঘটনা খুলে বলে ৷
আরও পড়ুন :কালিয়াচকে খুন যুবক, নেপথ্যে আসিফ কাণ্ডের যোগ ?
আদালতে পেশ করার আগেই আসিফকে জেরার পর পুলিশ তার দুই বন্ধু, সাবির আলি ও মহম্মদ মাফুজের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করে ৷ কোনও মামুলি অস্ত্র নয়, উদ্ধার হয় পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় সাত মিলিমিটার পিস্তল, 10টি ম্যাগাজিন ও 80 রাউন্ড কার্তুজ ৷ দুই বন্ধুই পুলিশকে জানায়, কয়েকদিন আগে আসিফ দুটি সিল করা প্যাকেট তাদের দু’জনকে রাখতে দেয় ৷ প্যাকেটের মধ্যে যে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে, তা তারা বিন্দুমাত্র জানত না ৷ প্যাকেট ঝাঁকালেও কোনও আওয়াজ হত না ৷ তবে তাদের দাবিতে গুরুত্ব না দিয়ে পুলিশ আসিফের সঙ্গে সাবির ও মাফুজের বিরুদ্ধেও অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করে ৷
এই অস্ত্র সম্ভারের তদন্ত নেমে প্রাথমিকভাবে তাঁরা জানতে পারেন, দেড় থেকে দু’লাখ টাকার বিনিময়ে ঝাড়খণ্ডের কোনও অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এই অস্ত্রসামগ্রী কেনে আসিফ ৷ কিন্তু তার সঙ্গে সেই অস্ত্র ব্যবসায়ীর পরিচয় করাল কে ? আসিফ পুলিশকে জানায়, আট মাস আগে সে এই অস্ত্র গুলি কিনেছিল ৷
তদন্তকারীরা ভাবছেন, ছেলের কাছে অস্ত্র মজুত আছে সে কথা কি ঘুণাক্ষরেও টের পাননি বাবা জাওয়াদ আলি ? যিনি নিজে একসময় সীমান্তে চোরাচালানকারী গ্যাংয়ের সদস্য ছিলেন ৷
আরও পড়ুন :Kaliachak Murder Case : কীভাবে খুন-কীভাবেই বা বাঁচল দাদা, ঘটনার পুনর্নির্মাণে দেখাল আসিফ
তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, ছোট থেকে আসিফ তার বাবা এবং সীমান্ত চোরাচালানকারী গ্যাংয়ের বাকি পান্ডাদের কাজকর্ম দেখেছে ৷ দেখেছে তাদের বৈভব ৷ সেখান থেকেও তার মনে গ্যাংস্টার হওয়ার ইচ্ছে বাসা বাধতে পারে ৷ জেরায় আসিফ পুলিশকে জানায়, পরিবারের সবাইকে খুন করতেই সে এই অস্ত্রগুলি কিনেছিল ৷ কিন্তু তার এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট নন তদন্তকারীরা ৷ কারণ, পরিবারের পাঁচজনকে খুন করতে এত বিপুল পরিমাণ অস্ত্র কেনার প্রয়োজন ছিল না ৷
এদিকে পুরনো 16 মাইল গ্রামের যেখানে আসিফদের বাড়ি, সেখান থেকে বাংলাদেশ ও ঝাড়খণ্ড তিন থেকে চার কিলোমিটারের মধ্যেই ৷ তাই বাংলাদেশের সঙ্গে কোনওরকম জঙ্গি যোগ রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী অফিসাররা ৷