মালদা, 24 ফেব্রুয়ারি : ইংরেজবাজারের বিধায়ক ও পৌরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষের বাড়িতে সশস্ত্র হামলার ঘটনায় প্রাক্তন মন্ত্রী, জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী, জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি প্রসেনজিৎ দাসসহ মোট 12 জনের বিরুদ্ধে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছিল পুলিশ ৷ তার মধ্যে অস্ত্র আইন ও বিস্ফোরক আইনের মামলাও রয়েছে ৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ ৷ এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া গতকালই জানিয়েছিলেন, তদন্ত চলছে ৷ মামলা রুজু হয়েছে ৷ খুব তাড়াতাড়ি এর ফল পাওয়া যাবে ৷ তিনি সেই মন্তব্য করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কৃষ্ণেন্দুবাবুর তিনজন সরকারি নিরাপত্তারক্ষী তুলে নেওয়া হয়েছে ৷ তাতেই গুঞ্জন ছড়িয়েছে, তবে কি এবার গ্রেপ্তারির পথে জেলার রাজনীতিতে এই পোড় খাওয়া নেতা ?
যদিও আজ কৃষ্ণেন্দুবাবু জানিয়েছেন, ঘটনার দিন তিনি এবং প্রসেনজিৎ দাস বিধায়কের পাড়া থেকে উত্তেজিত ছেলেদের সরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন ৷ ভোটের মুখে এই ঘটনা কোনও প্রভাব ফেলবে কিনা, তা নিয়ে পরিষ্কার কিছু জানাতে চাননি জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর ৷
15 জানুয়ারি রাতে নীহাররঞ্জন ঘোষের বাড়িতে হামলা চালায় বেশ কিছু দুষ্কৃতী ৷ নীহারবাবু দাবি করেন, সেই ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন কৃষ্ণেন্দুবাবু ও প্রসেনজিৎ ৷ সিসিটিভির ফুটেজেও তাঁদের হামলায় নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছে ৷ পরদিন তিনি দলেরই এই দুই নেতার পাশাপাশি আরও অনেকের বিরুদ্ধে ইংরেজবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ৷ পুলিশের হাতে তুলে দেন ঘটনার চলাকালীন বেশ কিছু সিসিটিভির ফুটেজও ৷ তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ ৷ সংগ্রহ করা হয় আরও কিছু সিসিটিভির ফুটেজ ৷ তারপরেই এই ঘটনা নিয়ে 12 জনের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয় ৷ তার মধ্যে বেশ কয়েকটি ধারা জামিন অযোগ্য ৷ এর মধ্যে রয়েছে অস্ত্র আইন ও বিস্ফোরক আইনের ধারাও ৷
মালদা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যানকে কি গ্রেপ্তার করা হতে পারে ? শুরু হয়েছে জল্পনা আরও পড়ুন : বিধায়কের বাড়িতে হামলায় প্রাক্তন মন্ত্রী-সহ মালদায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু পুলিশের
সরকারি নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহার নিয়ে আজ কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, “গতকাল সন্ধেয় পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডে একটি অনুষ্ঠান ছিল ৷ সেখানে তিন নিরাপত্তারক্ষী, গাড়িচালক ও আমি ছিলাম ৷ সেখানেই এক নিরাপত্তারক্ষীর কাছে ফোন আসে, আমার নিরাপত্তারক্ষী ক্লোজ করে দেওয়া হয়েছে ৷ ওই রক্ষী আমাকে সেকথা জানালে আমি তাদের পাঠিয়ে দিই ৷ কেন আমার নিরাপত্তারক্ষী তুলে নেওয়া হল, তা আমি জানি না ৷ যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে বিষয়টি বলতে পারবে ৷ পুলিশ লাইনের সুবেদার এই ফোন করেছিল ৷ 1995 সাল থেকে আমি সরকারি নিরাপত্তারক্ষী পাই ৷ সেই বছর আমাকে বোমা মারা হয়েছিল ৷ তাতে আমার বন্ধু বিমল প্রসাদ মারা গিয়েছিলেন ৷ তারপরেই আমি পৌরসভার চেয়ারম্যান হই ৷ তখন থেকে সরকারি নিরাপত্তা পেয়ে এসেছি ৷ তবে এসব নিয়ে ভাবছি না ৷ ইন্দিরা গান্ধিরও সরকারি নিরাপত্তারক্ষী ছিল ৷ তিনি কি প্রাণে বেঁচেছেন ? মৃত্যু লেখা থাকলে তা হবেই ৷ তবে বিধায়কের বাড়িতে হামলার ঘটনায় মামলার জেরে আমার সরকারি নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হল কিনা তা প্রশাসন বলতে পারবে ৷ আমি আজও বলছি, সব ভিডিয়ো ফুটেজ খতিয়ে দেখা হোক ৷ আমি কিংবা প্রসেনজিৎ সেদিন হামলার ঘটনায় জড়িত ছিলাম না ৷ বরং আমরা সেদিন পাড়াঘটিত গণ্ডগোলের জেরে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করেছিলাম ৷ সেখান থেকে উত্তেজিত ছেলেদের সরিয়ে নিয়ে এসেছিলাম ৷ গোটা বিষয়টি আমি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সবাইকে জানিয়েছি ৷”
এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর বলেন, “এটা দলের কোনও বিষয় নয় ৷ তাছাড়া এটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ৷ গোটা বিষয়টি নিয়ে আমিও খুব একটা কিছু জানি না ৷ বিষয়টি জেনেই কিছু বলতে পারব ৷ তবে কৃষ্ণেন্দুবাবু আমাদের দলের জেলা চেয়ারম্যান ৷ তাঁর সরকারি নিরাপত্তাও ছিল ৷ আমার মনে হয়, এই নিয়ে পুলিশ প্রশাসনই সঠিকভাবে বলতে পারবে ৷ তবে এর সঙ্গে ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই ৷ আমার মনে হয় না, ভোটে এর কোনও প্রভাব পড়বে ৷”