মালদা, 6 অক্টোবর: "গাংকাট্টি তিনবার ঘর কাড়লা । আব কুনঠে যাব? ভুখ মিটবে ক্যামনে? নিদই বা পাড়ব কোথা ?" গঙ্গাপাড়ে নদীর দিকে তাকিয়ে ভাঙাচোরা ঘরের পাশে বসে এমনটাই আউড়ে যাচ্ছিলেন নাসিমা বিবি । চলতি মরশুমে গঙ্গার কোপে ভিটেহারা হয়েছেন তিনি । এখনও চারদিক থেকে ভেসে আসছে ভারী হাতুড়ির আওয়াজ । নদীর পর এবার নিজেই নিজেই ঘর ভাঙছে মানুষ ! তিল তিল করে গড়ে তোলা মাথা গোঁজার ঠাঁই নিজের হাতে ভেঙে ফেলার যে কতটা যন্ত্রণা তা টের পাচ্ছেন বাসিন্দারা । কীভাবে তাঁরা ফের মাথা তুলে দাঁড়াবেন জানেন না । কোরোনা, লকডাউন আর ভাঙনের ত্র্যহস্পর্শে বিপন্ন তাঁরা । সবাই তাকিয়ে সরকারি সাহায্যের দিকে ।
আশির দশক থেকেই মালদা জেলায় গঙ্গার ভাঙন শুরু হয় । সেই সময় কালিয়াচক 2 ব্লকে একে একে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় অসংখ্য গ্রাম । জেলার মানচিত্র থেকে মুছে যায় কেবি ঝাউবোনা নামের একটি আস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত । এক রাতে কত মানুষকে যে পথে বসতে হয়েছে তার হিসেব নেই । যে সব বাড়িতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের খাদ্যের সংস্থান হত, সেই বাড়ির বাসিন্দারা থালা হাতে ভিক্ষে চাইতে বাধ্য হয়েছেন । এবার গঙ্গার রোষ দেখছেন কালিয়াচকের বীরনগর 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের চিনাবাজার, দুর্গারামটোলা, বালুগ্রাম, পারদেওনাপুর শোভাপুর গ্রামপঞ্চায়েতের পার অনুপনগর, পারলালপুর গ্রামের বাসিন্দারা । গ্রামগুলির প্রায় 95 শতাংশ বাসিন্দাই দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে । সিংহভাগ পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক । এলাকার কয়েকজন কৃষক ও শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন । তাঁদের কাছে গঙ্গা কোনও পুণ্যতোয়া নদী নয় সাক্ষাৎ ডাইনি ।
কয়েক বছর আগেই নদীর ভাঙনে ছিন্নমূল হয়ে চিনাবাজার গ্রামে বাড়ি বানিয়েছিলেন আমিরুল শেখ । পেশায় মৎস্যজীবী । আমিরুল শেখ বলেন, "দেশে যখন কোরোনা হানা দিল তখনই লকডাউন ঘোষণা হল । খুব অসুবিধায় দিন কেটেছে । আমরা গঙ্গায় মাছ ধরে খাই । লকডাউনে নদীতে যেতে পারিনি । মাঝেমধ্যে গেলেও ধরে আনা মাছ বিক্রি করতে পারিনি । এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় ভাঙন । নদী আমার বাড়ি কেটে দিয়েছে । সবই চলে গেল । যেটুকু এখনও বেঁচে আছে তা রক্ষা করার চেষ্টা করছি । ঘরের বাকি অংশ ভেঙে ফেলছি । অন্তত ইটগুলো তো পাব ! চিনাবাজারের সকলেই গরিব । কেউ মাছ ধরে, কেউ বিদেশে খাটতে যায়, কেউ চাষ করে । লকডাউনের জন্য কেউ বাইরে যেতে পারেনি । আমাদের সবার অবস্থা খারাপ । গঙ্গা যদি এভাবে পাড় কাটে তাহলে মানুষ বাঁচবে কীভাবে ? এখন সরকার কিছু সাহায্য করলে তবে বাঁচতে পারব । "