পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Bhabanipur Village Story : সেতুর আশায় মহানন্দা ও সুইয়ের মাঝে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দারা

একদিকে মহানন্দা আরেক দিকে সুই নদী ৷ আর এই দুই নদীর মাঝে মালদার চাঁচল 1নং ব্লকের ভবানীপুর গ্রাম ৷ গ্রামের মানুষের জেলার মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম বাঁশের তৈরি সাঁকো ৷ যা বর্ষার সময় মহানন্দার স্রোতে প্রায় ভেসে যায় ৷ কিন্তু, সরকারের কাছে বহুবার পাকা সেতুর জন্য আবেদন করেও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের (Villagers from Bhabanipur Demand for A Bridge on Mahananda River) ৷

Villagers from Bhabanipur Demand for A Bridge on Mahananda River
Villagers from Bhabanipur Demand for A Bridge on Mahananda River

By

Published : Feb 22, 2022, 8:37 PM IST

মালদা, 22 ফেব্রুয়ারি : অর্ধেক অংশে মহানন্দা, বাকি অর্ধেকে সুই ৷ এই দুই নদীর মাঝে ভবানীপুর গ্রাম দ্বীপের মতোই জেগে রয়েছে ৷ গ্রামে ছ’শো ঘর মানুষের বসবাস ৷ যেখানে জনসংখ্যা অন্তত আড়াই হাজার ৷ বছরের বেশ কয়েক মাস এই গ্রামের মানুষকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হয় মালদা জেলার বাকি অংশ থেকে ৷ যেহেতু গ্রামটি মালদা জেলার মধ্যে, তাই মহানন্দার উপর পাকা সেতু নির্মাণের জন্য একাধিকবার একাধিক জায়গায় আবেদন জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা (Villagers from Bhabanipur Demand for A Bridge on Mahananda River) ৷ আবেদন জানিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীকেও ৷ কিন্তু, মাত্র এই ক’জন ভোটারের জন্য পাকা সেতুর আবেদন বোধহয় প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধি, কারও মনেই দাগ কাটেনি ৷ তবু কথায় আছে, ‘আশায় বাঁচে চাষা’ ৷ সেতুর আশায় ভর করে বাঁচছেন ভবানীপুর গ্রামের মানুষ ৷

শীত পেড়িয়ে বসন্ত শুরু হয়েছে ৷ মহানন্দার জল এখন অনেকটাই কম ৷ তার উপর বসানো হয়েছে বাঁশের সাঁকো ৷ সেই মাচাই ভবানীপুর গ্রামের সঙ্গে মালদা জেলার মূল ভূ-খণ্ডের সংযোগ রক্ষা করছে ৷ তবে, বছরে মাস ছয়েক এই মাচা গ্রামবাসীদের স্বস্তি দেয় ৷ নদীর জল বাড়লে সাঁকো ভেসে যায় ৷ তখন খরস্রোতা এই নদী পার হতে নৌকাই একমাত্র ভরসা গ্রামবাসীদের ৷ তাছাড়া এই সাঁকো থেকে বেশ কয়েকবার নদীতে পড়ে গিয়েছে মোটর বাইক ৷ পড়েছে মানুষও ৷ ফলে মাচা থাকলেও ঝুঁকি রয়েছে ৷

সেতুর আশায় দিন গুণে চুল-দাড়ি পাকিয়ে ফেলেছেন কামালুদ্দিন শেখ ৷ ভবানীপুর গ্রামেরই বাসিন্দা তিনি ৷ ব্রিজের প্রসঙ্গ তুলতেই বলে উঠলেন, “এখন তো ঠিক আছে ৷ কিন্তু, বন্যা হলে আমাদের দুর্গতির শেষ নেই ৷ খুব অসুবিধে ৷ আমাদের গ্রামের একদিকে উত্তর দিনাজপুর ৷ সেদিকে সুই নদী পেরোতে হয় ৷ আর মালদায় আসতে হলে মহানন্দা পার করতে হয় ৷ এই সাঁকো থেকে বেশ কয়েকবার মহানন্দায় মোটরবাইক পড়ে গিয়েছে ৷ বর্ষায় নৌকা ছাড়া আমাদের কোনও উপায় নেই ৷ সেই সময় গ্রামের কোনও মহিলা কিংবা প্রসূতিকে হাসপাতাল নিয়ে আসতে হলে ঘাড়ে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনও রাস্তা নেই ৷”

সেতুর আশায় মহানন্দা ও সুইয়ের মাঝে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দারা

আরও পড়ুন : Bengal Civic Polls 2022 : ইংরেজবাজারে 15নং ওয়ার্ডে নির্দলপ্রার্থী স্যাক্সোফোনিস্ট সাদিয়া

ভবানীপুর গ্রামটি চাঁচল 1নং ব্লকের খরবা গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৷ ইসলামপুর বুথের অধীনে যে চারটি গ্রাম রয়েছে, তার মধ্যে একমাত্র এই গ্রামটিই নদীর ওপারে ৷ গ্রামের বাসিন্দা গোলাম মর্তুজ জানাচ্ছেন, “এই নদীর জন্য আমরা ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারি না ৷ এখন সাঁকোর উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে নদী পেরোচ্ছি ৷ বর্ষায় নৌকা ছাড়া বিকল্প কোনও পথ নেই ৷ আমাদের গ্রামটা একটা দ্বীপের মতো ৷ কোনও রোগী কিংবা প্রসূতিকে অনেক কষ্ট করে হাসপাতাল নিয়ে যেতে হয় ৷ আমাদের দাবি, এখানে একটা ব্রিজের ব্যবস্থা করা হোক ৷ এই দাবিতে একাধিকবার আমরা জেলাশাসক এবং বিডিওকে চিঠি দিয়েছি ৷ জন্ম থেকে দেখে আসছি, ভোট আসলে নেতারা ব্রিজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায় ৷ কিন্তু, কাজের কাজ কিছু হয় না ৷”

আরও পড়ুন : Plastic Rice in Mid Day Meal : চাঁচলে মিড-ডে মিলে প্লাস্টিকের চাল মেশানোর অভিযোগ, নমুনা চেয়ে পাঠালেন বিডিও

মালদা জেলা পরিষদের সদস্য এটিএম রফিকুল হোসেন আর কয়েকদিন পরেই মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি হতে চলেছেন ৷ অন্তত সংখ্যাতত্ত্বের হিসাবে তাঁর সভাধিপতি হওয়া সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷ এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “মহানন্দায় ব্রিজ না থাকায় ভবানীপুর গ্রামের মানুষ সত্যিই খুব সমস্যার মধ্যে রয়েছেন ৷ নদী পেরোতে গ্রামবাসীদের বাঁশের সাঁকো ভরসা ৷ বিশেষত বর্ষার সময় রোগী ও প্রসূতিদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে খুব সমস্যা হয় ৷ ব্রিজের জন্য আমরা এর আগেও রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম ৷ সেচ ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের কাছে এ নিয়ে আমরা আবার আর্জি জানাব ৷ এই সমস্যার একটা স্থায়ী সমস্যা হওয়া খুব প্রয়োজন ৷’’

ইংরেজবাজারের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ বলেন, “এ নিয়ে ওই গ্রামের মানুষ আগেও আমার সঙ্গে কথা বলেছেন ৷ ওখানে মহানন্দা নদী রয়েছে ৷ সেই নদী পেরিয়েই ভবানীপুর গ্রামে যেতে হয় ৷ একটা দ্বীপের মতো গ্রামটির অবস্থান ৷ গ্রামে যেতে বাঁশের সাঁকো ভরসা ৷ নদীর জল বেড়ে গেলে গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় ৷ ব্রিজের বিষয়টি নিয়ে আমি এর আগেও সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি ৷ আবারও বলব ৷ ব্রিজটা তৈরি করা গেলে গ্রামের মানুষজনের সত্যিই খুব উপকার হবে ৷’’

For All Latest Updates

ABOUT THE AUTHOR

...view details