মালদা, 18 ফেব্রুয়ারি: বাড়ির সামনে সরকারি জায়গা ৷ সেখানে গড়ে উঠেছে আইসিএস সেন্টারের রান্নাঘর (ICDS kitchen Chaos in Malda) ৷ ওই ঘরের জন্য বাড়ি আর দোকানের মুখ ছোট হয়ে গিয়েছিল ৷ তাই সরকারি জায়গায় থাকা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের রান্নাঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলেন ওই বাড়ির মহিলারা ৷ ভাঙচুরের ছবি তুলতে গেলে সেই মহিলারাই এক গ্রামবাসীকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাড়া করেন বলে অভিযোগ ৷ চাঁচল 1নম্বর ব্লকের অলিহণ্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের মহব্বতপুর গ্রামের ঘটনা ৷
ফলে শনিবার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে খাবার নিতে গিয়েও খালি হাতে ফিরে আসতে হয় বাচ্চা ও প্রসূতিদের ৷ আজও হাতে অস্ত্র নিয়ে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা দিয়েছে ওই বাড়ির মহিলা সদস্যদের ৷ এই ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছে গোটা গ্রাম ৷ রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান মানুষজন ৷ গোটা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য৷রা ৷ যদিও এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিডিপিও ৷
জানা গিয়েছে, মইদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বছরখানেক আগে একটি বাড়ি বানান ৷ বাড়ির সামনের অংশে একটি দোকানও তৈরি করেন তিনি ৷ তাঁর জমির সীমানার ঠিক বাইরেই সরকারি খাস জমি ছিল ৷ সেখানে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের একটি অস্থায়ী রান্নাঘর অনেক আগে থেকেই ছিল ৷ সেখান থেকেই খাবার পায় গ্রামের শ’খানেক বাচ্চা ৷ অনেক প্রসূতিও সেখানে খাবার নিতে আসেন ৷ সেই রান্নাঘরের জন্যই নাকি মইদুলের দোকান চলছে না ৷ অভিযোগ, মইদুল ইসলামের স্ত্রী নুরবানু বিবি এবং দুই মেয়ে আসমা ও রেশমা রান্নাঘরটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন শুক্রবার ৷ এক গ্রামবাসী সেই ছবি তোলেন ৷ তা দেখে ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁকে তাড়া করেন মা-মেয়েরা ৷
আরও পড়ুন:দেরিতে আসায় উপস্থিতির খাতায় সই করতে বাধা রাঁধুনির, শিক্ষিকার উপর চড়াও অভিযুক্ত
গ্রামের বাসিন্দা মাবুদ আলম বলেন, "আইসিডিএসের রান্নাঘরটা মইদুল আর তার পরিবারের সদস্যরা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় ৷ আমি সেই ঘটনার ভিডিও করতে গেলে ওরা ইট, হাঁসুয়া, বল্লম ছুড়তে শুরু করে ৷ ধারালো অস্ত্র হাতে আমার দিকে তেড়ে আসে ৷ আমি সেখান থেকে চলে যাই ৷ থানায় ফোন করে বিষয়টি জানাই৷ কিন্তু পুলিশ কোনও গুরুত্ব দেয়নি ৷ সরকারি খাস জমিতে সরকারি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরে প্রশাসন কেন পদক্ষেপ করছে না ? আজ সকালেও মইদুলের পরিবার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের রাঁধুনিকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাড়া করেছে ৷ আমরা চাই, ওখানে ফের রান্নাঘরটা তৈরি করা হোক ৷"
ওই কেন্দ্রের রান্নার দায়িত্বে থাকা রাঁধুনি চন্দনা দাস বলেন, " শুক্রবার দুপুরে মইদুল ও তার বাড়ির লোকজন রান্নাঘরটা ভেঙে দিয়েছে ৷ ওরা সরকারি জায়গা দখল করতে চাইছে ৷ ওর বাড়ি আর দোকানের সামনে রান্নাঘর ছিল ৷ আমি রান্না করতে আসলে আমাকে হাঁসুয়া দেখাচ্ছে ৷ আমাকে রান্না করতে দেবে না ৷ আজ রান্না হয়নি ৷ বাচ্চারা ঘুরে গিয়েছে ৷"
এই ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলেছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য জামালুদ্দিন আহমেদ ৷ এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, "কেন ওরা সরকারি জায়গায় রান্না করতে বাধা দিচ্ছে জানি না ৷ ওদের বাড়ি তৈরির অনেক আগে থেকে সেখানে রান্নাঘর ছিল ৷ শুক্রবার মইদুল ও তার পরিবার রান্নাঘরটা ভেঙে ফেলেছে ৷ ধারালো অস্ত্র নিয়ে মানুষকে তাড়া করছে ৷ আজ রাঁধুনিকেও ওরা অস্ত্র নিয়ে তাড়া করেছে ৷ পুলিশ এলেও কোনও কাজ হয়নি ৷
চাঁচল থানার পুলিশ জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগ জমা না পড়ায় কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ হয়নি ৷ তবে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হতে দেখেও পুলিশ কেন লিখিত অভিযোগ জমা পড়ার অপেক্ষা করছে, তা কারও বোধগম্য হয়নি ৷ যদিও চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের সিডিপিও অলোক মণ্ডল জানিয়েছেন, এই ঘটনায় দ্রুত চাঁচল থানায় অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে ৷ বিষয়টি বিডিওকেও জানানো হয়েছে ৷