মালদা, 15 জুলাই : ছিল ঝালমুড়ির ছোট্ট দোকান ৷ সেই দোকান বড় করে করার ইচ্ছে ছিল বহুদিন ধরেই ৷ কিন্তু তার জন্য হাতে টাকা ছিল না ৷ স্বপ্নপূরণ করতে স্থানীয় মহাজন ও একাধিক পাবলিক ফান্ড থেকে প্রায় দুই লাখ টাকা ঋণ নেন কালিয়াচক দুই ব্লকের পঞ্চানন্দপুর এক গ্রাম পঞ্চায়েতের বানতলা গ্রামের বাসিন্দা সুবোধ সাহা (৪৫) ৷ ভেবেছিলেন, বড় দোকান করে ব্যবসা চালু হলে ঋণের টাকা শোধ করবেন ৷ কিন্তু বিধি বাম ৷ ঋণের টাকা হাতে আসার কয়েকদিন পরই দেশজুড়ে শুরু হয়ে যায় কোরোনার প্রকোপ ৷ জারি হয় লকডাউন ৷ ব্যবসা বড় করা দূরের কথা, আগের ব্যবসাই ধরে রাখতে পারেননি সুবোধবাবু ৷ এদিকে দিন গড়িয়ে যাচ্ছে নিজের নিয়মে ৷ ঋণ শোধ করার জন্য মহাজন ও পাবলিক ফান্ডগুলির চাপও বাড়ছে প্রতিনিয়ত ৷ সেই চাপ সহ্য করতে না পেরে মদ্যপান শুরু করেন সুবোধবাবু ৷ কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি ৷ চাপের কাছে মাথা নুইয়ে অবশেষে আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হলেন তিনি ৷ খবর পেয়ে আজ মোথাবাড়ি থানার পুলিশ সুবোধবাবুর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠায় ।
সুবোধবাবুর স্ত্রী শিখা সাহা বলেন, “ব্যবসার জন্য আমার স্বামী প্রচুর টাকা ঋণ নিয়েছিল ৷ কিন্তু, ঋণ নেওয়ার পর শুরু হয়ে যায় লকডাউন ৷ এলাকার কয়েকজন মহাজন আর বন্ধন থেকে ঋণ নিয়েছিল স্বামী ৷ ঋণের টাকা শোধ করার জন্য সব জায়গা থেকে চাপ আসছিল ৷ দু’জন ঋণদাতা টাকার জন্য বাড়িতে এসেও চাপ দিত ৷ স্বামীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিত ৷ চাপ সহ্য করতে না পেরে স্বামী মদ্যপান শুরু করেছিল ৷ আমি ভেবেছিলাম, শাশুড়ির কাছ থেকে সম্পত্তির যে ভাগ পাব, তা দিয়েই ঋণ শোধ করব ৷ শেষ পর্যন্ত মদ খেয়েই আমার স্বামী গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয় ৷ এই অবস্থায় ছোটো চার ছেলেমেয়ে নিয়ে আমি সমস্যায় পড়ে গিয়েছি ৷”