তৃণমূল নেতার ঘুষ নেওয়ার ভিডিয়ো ভাইরাল মালদা, 10 অগস্ট: পঞ্চায়েতের প্রধান হতে গেলে ঘুষ লাগবে 10 লাখ টাকা ৷ এমনটাই নাকি জানিয়ে দিয়েছিলেন কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকের গয়েশবাড়ি অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি হাজি মীরাজুল বোসনি ৷ সেই নিদান শুনে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হতে সেই টাকাও দেওয়া হয়েছিল তাঁকে ৷ শুধু একজন নয়, নির্বাচনে জয়ী একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকেই তিনি সেই টাকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ৷ বান্ডিল-সহ তাঁর টাকা নেওয়ার ভিডিয়ো ক্লিপ ইতিমধ্যে সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে ৷ যদিও সেই ভিডিয়ো ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি ইটিভি ভারত ৷ তবে এই ঘটনায় ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে দলীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি ৷
ফের দুর্নীতি: দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ল্যাজেগোবরে তৃণমূল ৷ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে নিয়োগ দুর্নীতি ৷ শুধু যে নিয়োগেই এই দুর্নীতি হয়েছে তা নয়, যে কোনও ভোটে প্রার্থী হতে গেলেও নেতাদের মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে ঘাসফুল শিবিরের অন্দরেই ৷ একুশের বিধানসভা ভোটে সেই অভিযোগ প্রমাণিতও হয়েছে ৷ এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনেও মালদা জেলা-সহ গোটা রাজ্যে সেই অভিযোগ তুলেছেন দলেরই নেতা-কর্মীরা ৷
এ বারের নির্বাচনে গয়েশবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের মণ্ডলপাড়া বুথে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন নেক খাতুন ৷
তাঁর অভিযোগ, “প্রধান করার জন্য মীরাজুল বোসনি আমার কাছ থেকে 10 লাখ টাকা নিয়েছেন ৷ কোরআন শরিফ ছুঁয়ে আমাকে প্রধান করার প্রতিজ্ঞাও করেছেন ৷ পরে আরেকজনের কাছ থেকে 35 লাখ টাকা নিয়ে তাঁকে প্রধান করেছেন অঞ্চল সভাপতি ৷ আমরা এ নিয়ে লড়ে যাব ৷ প্রয়োজনে তৃণমূল নেত্রীকেও জানাব ৷”
তৃণমূল প্রার্থীর স্বামীর অভিযোগ: নেক খাতুনের স্বামী তথা গয়েশবাড়ি অঞ্চল তৃণমূলের সহসভাপতি মহম্মদ হোসেন আলি মণ্ডল বলছেন, “এ বারের নির্বাচনে আমার স্ত্রী তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে জিতেছে ৷ উপরমহল থেকে আমাকে বলা হয়েছিল, 10 লাখ টাকা দিলে আমার স্ত্রীকে প্রধান করা হবে ৷ আমি টাকার পরিমাণ কম দিতে চাইলে মীরাজুল বোসনি সাফ জানিয়ে দেয়, প্রধান হতে গেলে 10 লাখ টাকাই দিতে হবে ৷ আমি তাঁকে সেই টাকা দিয়ে দিই ৷ এভাবে তিনি পাঁচজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন ৷ যার কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা পেয়েছেন, তাঁকেই প্রধান বানিয়েছেন ৷ আমি বিষয়টি মানছি না ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি বার্তা দিতে চাই, এখানে যেন সঠিকভাবে প্রধান নির্বাচিত করা হয় ৷ আমরা এই প্রধান নির্বাচন মানব না ৷ গয়েশবাড়ি অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি এভাবেই মানুষকে ঠকিয়ে খাচ্ছে ৷ এর সঙ্গে কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লক সভাপতিও জড়িত রয়েছেন ৷”
আরও পড়ুন:কোথাও বিরোধীদের সঙ্গে সংঘর্ষ, আবার কোথাও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব; বোর্ড গঠন নিয়ে বিতর্কে শাসকদল
দলীয় তদন্তের নির্দেশ: বিষয়টি নিয়ে মীরাজুল বোসনির কোনও প্রতিক্রিয়া না পাওয়া গেলেও তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি ইটিভি ভারতকে জানান, “প্রধান করার জন্য কেউ যদি কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকেন এবং সেটা যদি প্রমাণিত হয়, তবে তিনি গ্রেফতার হবেন ৷ তবে এই ঘটনা সাজানোও হতে পারে ৷ অন্য কোনও বিষয়ের জন্য টাকা দিয়ে এখন এই অভিযোগ তোলা হতে পারে ৷ তদন্তে যেটা বেরোবে, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে ৷ এই ঘটনায় দলীয়ভাবে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি ৷ তদন্ত শুরু হয়েছে ৷ সেখানকার ব্লক সভাপতিকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে ৷ দলের কাছে এ নিয়ে রিপোর্ট এলে দল সেই মতো ভাববে ৷”