মালদা, 28 নভেম্বর : মন্ত্রিত্ব ছাড়তেই মালদায় জল মাপতে শুরু করেছেন শুভেন্দু অধিকারী অনুগামীরা। মালদায় শুভেন্দু অনুগামীর সংখ্যা নেহাত যে কম নয় তা বিলক্ষণ জানে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই গতকাল বিকেলে তড়িঘড়ি কলকাতায় ডেকে পাঠানো হয়েছে দলের জেলা সভানেত্রী সহ আট শীর্ষ নেতাকে। ইতিমধ্যে তাঁদের সাতজন কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছেন। আজ বিকেল চারটা থেকে তাঁদের নিয়ে বৈঠক করার কথা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশান্ত কিশোর ও সুব্রত বক্সীর। যদিও এই বৈঠক রুটিন বলে দাবি করেছে জেলা তৃণমূল। দলের জেলা মুখপাত্রের দাবি, একুশের ভোটে দলের রণকৌশল ঠিক করতে এই বৈঠক পূর্বনির্ধারিত। এর সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর মন্ত্রিত্ব ত্যাগের কোনও সংযোগ নেই। তবে সে কথা মানতে রাজি নয় জেলার রাজনৈতিক মহল।
জল মাপা শুরু অনুগামীদের, 'চুপ' থাকার পরামর্শ শুভেন্দুর - সুব্রত বক্সী
মন্ত্রিত্ব ত্যাগের পর জল মাপতে শুরু করেছে শুভেন্দু অনুগামীরা। জরুরি তলবে কলকাতা ছুটে গেলেন দলের কোর কমিটির সদস্য সহ মোট সাতজন।
দীর্ঘদিন মালদা জেলায় দলীয় অবজ়ারভারের দায়িত্ব সামলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর হাত ধরেই শাসকদলের দখলে এসেছে জেলা পরিষদ। বিভিন্ন দল থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন তিন বিধায়ক। বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষও শুভেন্দুর হাত ধরে শাসকদলে যোগ দেন। জেলার দুই পৌরসভা দখলের ছক কষা হয়েছিল শুভেন্দুর নেতৃত্বেই। ফলে এই জেলার রাজনীতি ও তৃণমূল নেতা-কর্মীদের তিনি হাতের তালুর মতো চেনেন। জেলায় তাঁর অনুগামী সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এই অবস্থায় গতকাল তিনি মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করতেই সম্ভাবনার ঝড় উঠেছে জেলা তৃণমূলের। এবার কী করবেন শুভেন্দু? BJP-কি তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নাকি নতুন দল তৈরির দিকে এগোবেন তিনি। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের পর ইতিমধ্যে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন জেলার একাধিক তৃণমূল নেতা। শুভেন্দু এখন সবাইকে চুপ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এদিকে গতকাল বিশেষ তলব পেয়ে কলকাতা চলে গিয়েছেন জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর, চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন সহ দলের জেলা কমিটির পাঁচ নেতা-নেত্রী। গিয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি ও জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল। তবে পরিবারের এক সদস্য মারা যাওয়ায় এবং শারীরিক অসুস্থতার জন্য কলকাতা যেতে পারেননি আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। এ নিয়ে ফোনে তাঁর সঙ্গে সুব্রত বক্সীর কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাবিত্রী।
এই পরিস্থিতিতে আজ জেলা তৃণমূলের সদর দপ্তরে সাংবাদিক বৈঠক করেন দলের দুই মুখপাত্র শুভময় বসু ও সুমালা আগরওয়াল। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নিয়েই এই বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে শুভময়বাবু বলেন, মালদা জেলায় দলের সংগঠন কীভাবে চলবে, তার রূপরেখা ঠিক করতে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আজ কলকাতায় বৈঠকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। ডাকা হয়েছে কোর কমিটিকেও। এটা দলের বিষয়। মালদা জেলার 12টি আসনে একুশের ভোটে আমরা কীভাবে জিতব, কীভাবে প্রচার করব, ভোটে জিততে কী কৌশল হবে, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। এই বৈঠক পূর্বনির্ধারিত। প্রায়শই এমন সভা ডাকা হয়। ভার্চুয়াল বৈঠকও হয়। এটা দলের কৌশলের অঙ্গ। শুভেন্দু অধিকারীর মন্ত্রিত্ব ত্যাগ নিয়ে আমাদের নেতা, সাংসদ সৌগত রায় সংবাদমাধ্যমকে যা বলেছেন, সেটাই এখন দলের স্ট্যান্ড। তিনি মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করলেও এখনও দলের নেতা। তাঁর ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে দল। তবে এসব বিষয়ে কিছু বলার ক্ষমতা আমাদের মতো জেলাস্তরের মুখপাত্রদের নেই। এ নিয়ে যা বলার রাজ্যস্তর থেকে বলবে। অবজ়ারভার হিসাবে শুভেন্দু মালদায় ছিলেন। দলের সবার সঙ্গেই তাঁর ভালো সম্পর্ক। শুভেন্দুর বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কোর কমিটিও দেখছে।