পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Malda TMC : মালদায় বাড়ছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, অপসারিত আরও এক পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী - congress

বিধানসভার ফলাফল ঘোষণার পর মালদা জেলায় প্রকাশ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ধরা পড়ছে ৷ শাসকদলের দখলে থাকা বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত, এমনকি পঞ্চায়েত সমিতিতেও দলীয় প্রধান কিংবা সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে ভোটাভুটিতে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

Malda TMC
গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব

By

Published : Sep 1, 2021, 11:01 PM IST

মালদা, 1 সেপ্টেম্বর : বিধানসভা নির্বাচনোত্তর সময়ে জেলা তৃণমূলে যেন মাৎস্যন্যায় শুরু হয়েছে। শাসকদলের দখলে থাকা বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত, এমনকি পঞ্চায়েত সমিতিতেও দলীয় প্রধান কিংবা সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে ভোটাভুটিতে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি অনাস্থায় অপসারিত হয়েছেন কালিয়াচক 2 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি টিংকু রহমান বিশ্বাস।

এবার একই নকশায় রতুয়া 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী আবিদা বেগমকেও অপসারিত করা হল। এইসব অনাস্থা আনছেন তৃণমূলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই। প্রয়োজনে তাঁরা বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম, এমনকি নির্দলের হাত ধরতেও দ্বিধা করছেন না।

স্বাভাবিকভাবে এসব ঘটনায় মুখ পুড়ছে জেলা নেতৃত্বের। গতকালই ঘটা করে এক সভাতে জেলা তৃণমূলের নয়া সভাপতি আবদুর রহিম বকসি ঘোষণা করেছিলেন, দলের অনুমতি না নিয়ে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কোথাও বিরোধীদের হাত ধরে দলীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা যাবে না। তেমন হলে তদন্ত সাপেক্ষে সেসব ঘটনায় জড়িতদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। কিন্তু তাঁর ঘোষণার পরদিনই ঠিক একই ঘটনা ঘটল।

আরও পড়ুন :Police Day : ‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবিরে ‘বন্ধু’ পুলিশ, ফর্ম পূরণ করে দিলেন আইসি

আরও বড় বিষয়, এবার অভিযোগের নিশানায় খোদ দলের জেলা চেয়ারম্যান। এবার কী করবেন রহিম সাহেব? সবার সঙ্গে প্রশ্ন জেলা তৃণমূলের অন্দরমহলেও।

আঠারোর পঞ্চায়েত নির্বাচনে 30 আসনবিশিষ্ট রতুয়া 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতিতে 26 টি আসনই দখল করে তৃণমূল। সেই নির্বাচন হয়েছিল দলের ব্লক সভাপতি ফজলুল হকের নেতৃত্বে। বাকি চারটি আসনের মধ্যে তিনটি বাম-কংগ্রেস জোট ও একটি নির্দলের পক্ষে যায়। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন আবিদা বেগম। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক মুখে এলাকার প্রভাবশালী নেতা শেখ ইয়াসিনের হাত ধরে পঞ্চায়েত সমিতির অন্তত 10 জন সদস্য বিজেপিতে যোগ দেন। গোপনে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন আরও অনেকে। সেই সময় পঞ্চায়েত সমিতির 18 জন তৃণমূল সদস্য দল থেকে পদত্যাগ করেন। তাঁরা নির্দল হিসাবে সদস্য থেকে যান।

জানা যাচ্ছে, পদত্যাগের পর তাঁরা কয়েক মাস গোপন আস্তানায় ছিলেন। মাস চারেক আগে তাঁরা পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী আবিদা বেগমের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসেন। সূত্রের খবর, এই অনাস্থা প্রস্তাবের মূল কারিগর স্থানীয় বিধায়ক, জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান সমর মুখোপাধ্যায় ও দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ হেসামুদ্দিন। হেসামুদ্দিনের স্ত্রী আলতাফুন নেশাও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। তাঁকে সভানেত্রী করার জন্যই হেসামুদ্দিন, সমরবাবুর পরামর্শে এই নকশা সাজান বলে জানা যাচ্ছে।

আরও পড়ুন : Counterfeit notes : মালদায় পাঁচ লক্ষ টাকার জালনোট-সহ গ্রেফতার 3

বিধানসভা নির্বাচনের পর রতুয়া 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে থাকা 10টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে সামসী, দেবীপুর, চাঁদমুনি 1 ও 2 এবং রতুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে অনাস্থার মাধ্যমে প্রধানকে অপসারিত করা হয়েছে। এই 10 টি গ্রাম পঞ্চায়েতই তৃণমূলের দখলে। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিটি অনাস্থার পিছনে সমরবাবু ও হেসামুদ্দিন সাহেবের হাত রয়েছে। আজ সেই অভিযোগ করেছেন ব্লক তৃণমূল সভাপতি ফজলুল হকও।

তিনি বলেন, "দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ হেসামুদ্দিন ও বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ের মদতে আজ আমাদের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে অপসারণ করা হয়েছে। 16 জন সদস্য এই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন। আমরা অন্য দল ভেঙে তৃণমূলকে শক্তিশালী করেছিলাম। ব্লকের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত আমাদের দখলে এসেছিল। এখন কৌশল করে একটার পর একটা পঞ্চায়েতে প্রধান অপসারিত করা হয়েছে। বিধায়কই এসব করছেন। সেটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। বিধায়ককে আমি বলেছিলাম, পঞ্চায়েত সমিতিতে আনা অনাস্থা এড়ানো যেতে পারে। কিন্তু তিনি আমার কথায় কান দেননি। সমরবাবু নিজের ক্যারিশমায় ভোটে জেতেননি। আমাদের কর্মীরাই তাঁকে ভোটে জিতিয়েছেন। কংগ্রেসের বিধায়ক থাকাকালীন 1984 সালে তিনি দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। 1995 সাল পর্যন্ত তিনি কংগ্রেসে ছিলেন না। তাঁর সাহায্য ছাড়াই আমি 1988 সালে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হয়েছিলাম। 1996 সালে তাঁকে প্রার্থী করা হলে আমরাই তাঁকে জিতিয়ে আনি। তিনি সংগঠনের কিছুই বোঝেন না। আর এখন তিনিই আমাদের নেতৃত্ব। আজকের ঘটনায় আমি দলের কাছে আবেদন জানাব, যারা দলবিরোধী কাজ করে বিজেপির হাত ধরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে অপসারণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে দল কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।"

আরও পড়ুন : Duare Sarkar : ফর্ম পূরণ করে দিতে টাকা, ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই পদক্ষেপ বিডিও-র

এনিয়ে সমরবাবুর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে মহম্মদ হেসামুদ্দিনের বক্তব্য, "আজ তলবি সভায় আমার 17 জন সাথী ভোট দিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে অপসারণ করেছেন। প্রশাসনিক আধিকারিকরা তার শংসাপত্রও দিয়ে দিয়েছেন। ফজলুল হক ব্লক সভাপতি। আঠারো সালে আমি বন্ধুবান্ধব এবং সাথীদের নিয়ে ভোট করেছিলাম। সদস্যদের মতামত না নিয়েই ব্লক সভাপতি বিভিন্ন পঞ্চায়েতে প্রধান ও সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছিল। সেসব সদস্যদের মনঃপুত হয়নি। তাই তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সমস্যায় ভুগছিলেন। ক্ষোভে পঞ্চায়েত সমিতির অনেকে নির্দল হয়ে যান। তাঁরা নিজেদের ক্ষোভের কথা আমাকে বলেন। আমি তৎকালীন দলের জেলা সভানেত্রী মৌসম নুরের সঙ্গে এনিয়ে আলোচনা করি। দলীয় নেতৃত্বের পরামর্শেই এই অনাস্থা আনা হয়েছিল।"

আবিদা বেগমও জানিয়েছেন, "আমাকে অপসারণের পিছনে জেলা তৃণমূল চেয়ারম্যান সমর মুখোপাধ্যায়ের হাত রয়েছে। এনিয়ে আমি দলনেত্রীর কাছে বিচার প্রার্থনা করছি। আমি তাঁকে গোটা বিষয়টি জানাব। বিজেপি ও নির্দলের সাহায্য নিয়ে মহম্মদ হেসামুদ্দিন, সমরবাবুর নকশা সফল করেছেন। এতে এলাকায় দলেরই ক্ষতি হবে।"

আরও পড়ুন :MALDA : 20 লাখ টাকা ও ব্রাউন সুগার-সহ মালদা পুলিশের জালে দুই মাদক পাচারকারী

এদিকে জেলা তৃণমূল সভাপতি আবদুর রহিম বকসি জানান, "গতকাল দলগতভাবে বৈঠকে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যারা দলবিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, বিরোধীদের সাহায্য নিয়ে দলীয় পঞ্চায়েত প্রধান কিংবা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা আনবে, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে। আজকের বিষয়টি নিয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। এনিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গেও আলোচনা করব। তারপরেই এনিয়ে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details