মালদা, 8 ফেব্রুয়ারি : একুশের ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা । তার আগে আজ নবান্ন থেকে মালদার সিল্ক পার্কের উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটকে মাথায় রেখেই নির্মীয়মাণ এই সিল্ক পার্কের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী । কিন্তু এই পার্ক জেলার রেশম শিল্পকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে রেশম চাষিদের মধ্যে । তাঁদের অধিকাংশই জানাচ্ছেন, এই সিল্ক পার্কে তাঁদের কোনও লাভ হবে না । শুধুমাত্র রাজনীতি করার জন্যই এই পার্ক ।
মালদার রেশম শিল্পের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনতে 2005-2006 সালের তৎকালীন বাম সরকার জেলায় একটি সিল্ক পার্ক তৈরির চিন্তাভাবনা শুরু করে । এই ব্যাপারে উদ্যোগ নেন রাজ্যের তৎকালীন ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী মানব বন্দ্যোপাধ্যায়। তার জন্য ইংরেজবাজারের মধুঘাট এলাকার ব্যাসপুরে 34 নম্বর জাতীয় সড়কের দু'ধারে মোট 13.07 একর জমি চিহ্নিত করা হয় । কিন্তু লাল ফিতের ফাঁস কাটিয়ে সেই কাজ শুরু হয় 2016-17 সালে । প্রায় 40 কোটি টাকায় সেই পার্ক তৈরি করা হচ্ছে । পার্ক তৈরির অর্থ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যৌথভাবে বহন করলেও তাতে কেন্দ্রের ভাগ বেশি। ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন নিগমের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি ইঞ্জিনিয়ার পল্লব হাওলাদার জানিয়েছেন, এই পার্কে রেশম গুটি থেকে সুতো উৎপাদন, তার বিপণন সহ বিভিন্ন কাজ হবে । সম্পূর্ণ তৈরি হওয়ার পর এই পার্ক ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন নিগমের তরফে রেশমচাষি ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হবে । পার্ক চালানোর জন্য বিদ্যুৎ, জল-সহ যাবতীয় খরচ ওই কমিটিকেই বহন করতে হবে । পার্কের আয়ও ওই কমিটি নিজেদের হাতে রাখবে । আর এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন চাষিরা ।
চাষিদের বক্তব্য, মালদা জেলায় রেশম উৎপাদনে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লক । চাচল 1 ও কালিয়াচক 2 নম্বর ব্লকেও রেশম সুতো উৎপাদন করা হয়। এই অবস্থায় গাঁটের কড়ি খরচ করে কেউ ইংরেজবাজার ব্লকে সুতো তৈরি করতে যাবে না । কারণ, এখন প্রায় সব চাষিই নিজেদের বাড়িতে সুতো উৎপাদন করেন । তার উপর বাড়িতে সুতো উৎপাদন করতে যে খরচ হয়, এই পার্কে তার থেকে অনেক বেশি খরচ পড়বে । আর শুধু সুতো উৎপাদন ও বিপণনের ব্যবস্থা করে জেলার রেশম চাষকে পুরোনো জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না । তার জন্য আগে কাপড় উৎপাদন এবং তাতে প্রিন্টের ব্যবস্থা করতে হবে । তবেই জেলার রেশম চাষ সামনের দিকে এগোতে পারবে ।
মালদা জেলায় এই মুহূর্তে প্রায় 21 হাজার একর জমিতে রেশম চাষ হয় । এই চাষের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছে প্রায় 3 লাখ কৃষক। সব মিলিয়ে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় 5 লাখ মানুষ । জেলায় বছরে পাঁচবার রেশম উৎপাদিত হয়। বার্ষিক রেশমগুটি উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় 15 হাজার মেট্রিক টন। তা থেকে প্রায় 1500 মেট্রিক টন সুতো উৎপাদিত হয়। লাভ কম হলেও এখনও কয়েকজন চাষি নিস্তারি (প্রাচীন রেশম, হলুদ রঙেক) রেশমের সুতো উৎপাদন করে থাকেন । এই রেশমের কীটের সঙ্গে জাপানি রেশমকীটের সংমিশ্রণে তৈরি বাইভোল্টাইন (সাদা সুতো) রেশমকীটের চাষই এখন বেশি । তবে গুণমানে বাইভোল্টাইনের থেকে নিস্তারি রেশম অনেক বেশি উচ্চমানের । নিস্তারি রেশমের সুতো ছাড়া বিখ্যাত বেনারসি শাড়ি তৈরি সম্ভব নয় । তবে জেলায় রেশম কাপড় তৈরির কোনও কারখানা নেই । ফলে এই জেলার উৎপাদিত রেশম উত্তরপ্রদেশ, দক্ষিণ ভারত ও ভুটানে চলে যায় ।
আরও পড়ুন, কেন্দ্রীয় বাজেটে উপেক্ষিত, বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি মালদার আমচাষিদের