পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

নব্বইয়ের দশকে হয়েছিল শিলান্যাস, আজও ট্রাক টার্মিনাস হয়নি মালদার নারায়ণপুরে

বাম সরকারের আমলে এই টার্মিনাস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল । নব্বইয়ের দশকে পুরাতন মালদার নারায়ণপুরে 34 নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে প্রায় ছয় একর জমি এর জন্য চিহ্নিত করা হয় । 2004 সালে সেই জায়গায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি ফলকও লাগানো হয় । ওই জমি ক্ষুদ্র শিল্প নিগমের । জমি হস্তান্তর জটিলতায় সেই সময় সেখানে টার্মিনাসের কাজে হাত দেওয়া যায়নি । থমকে যায় গোটা প্রক্রিয়া ।

ট্রাক টার্মিনাস
ট্রাক টার্মিনাস

By

Published : Oct 5, 2020, 11:57 PM IST

মালদা, 5 অক্টোবর : ঘি পুড়েছে সাত মন, তবু নাচেনি রাধা । কবে নাচবে, কেউ জানে না । একই দশা মালদা জেলার প্রস্তাবিত সেন্ট্রাল ট্রাক টার্মিনাসের । নব্বইয়ের দশক থেকে এই টার্মিনাস তৈরির কথা চলছে । বেরিয়ে গিয়েছে দেদার টাকা । এখনও প্রতি মাসে ভাড়া গুনতে হচ্ছে 60 হাজার টাকা । কিন্তু টার্মিনাস হল কই ? জানতে চাইছে সবাই ।

মালদা জেলায় দু'টি পৌরসভা । ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদা । 2011 সালের জনসুমারি অনুযায়ী 13.25 বর্গ কিলোমিটার বিশিষ্ট ইংরেজবাজার পৌরসভার জনসংখ্যা 2 লাখ 16 হাজার 83 জন । একই সময়ে 9.4 বর্গ কিলোমিটার বিশিষ্ট পুরাতন মালদা পৌরসভার জনসংখ্যা 80 হাজার 12 জন । দুই শহরের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে 34 নম্বর জাতীয় সড়ক । উত্তর-দক্ষিণ সড়ক যোগাযোগের লাইফলাইন । দৈনিক এই সড়ক দিয়ে কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে । ভারী লরির সংখ্যাটা তার মধ্যে বেশি । এসব লরির একাংশ এই সড়কের ধারেই বেআইনি পার্কিং করে থাকে । এতে একদিকে যেমন দুই শহরে যানজট বেড়ে যায়, অন্যদিকে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকে । এসব চিন্তাভাবনা করেই তৎকালীন বাম সরকার দুই শহরের বাইরে একটি ট্রাক টার্মিনাস গড়ার সিদ্ধান্ত নেয় । পরবর্তীতে তৃণমূল সরকারও সেই সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে । সবই হয়েছে । শুধু টার্মিনাসটাই এখনও তৈরি হয়নি ।

শিলান্যাস হওয়া ট্রাক টার্মিনাস তৈরি হয়নি আজও, সমস্যায় মালদাবাসী

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাম সরকারের আমলে এই টার্মিনাস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল । নব্বইয়ের দশকে পুরাতন মালদার নারায়ণপুরে 34 নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে প্রায় ছয় একর জমি এর জন্য চিহ্নিত করা হয় । 2004 সালে সেই জায়গায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি ফলকও লাগানো হয় । ওই জমি ক্ষুদ্র শিল্প নিগমের । জমি হস্তান্তর জটিলতায় সেই সময় সেখানে টার্মিনাসের কাজে হাত দেওয়া যায়নি । থমকে যায় গোটা প্রক্রিয়া । এভাবেই পেরিয়ে যায় আরও কয়েকটি বছর । রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে । তৃণমূল পরিচালিত সরকারের আমলে ফের সেখানে ট্রাক টার্মিনাস গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয় । এবার দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা পরিষদকে । 2017 সালে শিল্প নিগমের কাছ থেকে দীর্ঘকালীন চুক্তিতে জমিটি ভাড়া নেয় জেলা পরিষদ । চুক্তি অনুযায়ী জমির জন্য প্রতি মাসে জেলা পরিষদকে ভাড়া গুনতে হবে 60 হাজারের বেশি টাকা । 2019 সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকঢোল পিটিয়ে ওই জমিতে ট্রাক টার্মিনাসের শিলান্যাস করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ।

জঞ্জালে ঢাকা পড়েছে ফলক

কিন্তু সেখানেই ইতি। জমির সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা, সেখানে ঢোকা ও বেরোনোর জন্য জাতীয় সড়কের ধারে দুটি কালভার্ট এবং অ্যাপ্রোচ রোড তৈরি হলেও মূল জায়গায় এখনও এক গাড়ি মাটি পড়েনি । এখন ওই জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে । শিল্পতালুক এলাকার আস্তাকুঁড়ে পরিণত হয়েছে । টার্মিনাসের পুরোনো ফলক ঢেকেছে জঙ্গলে । মন্ত্রীর শিলান্যাস অনুষ্ঠানে লাগানো বোর্ডে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের মুখটাও এখন মলিন । ওই বোর্ডই জানান দিচ্ছে, এই প্রকল্পের জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর 14 কোটি 29 লাখ 86 হাজার 102 টাকা বরাদ্দ করেছে । অথচ যেখানে ঝাঁ চকচকে ট্রাক টার্মিনাস থাকার কথা, সেখানে এখন আগাছা । চরছে গোরু-ছাগল ।

এই টার্মিনাস তৈরি হলে তাঁদের যে খুব সুবিধা হত তা সাফ জানাচ্ছেন ট্রাক মালিকরা । মালদা মাল্টি অ্যাকশন ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সৌম্যপ্রসাদ বোস বলেন, "প্রতিদিনই গাড়ি পার্কিং করতে আমাদের অসুবিধায় পড়তে হয় । এই টার্মিনাস তৈরি হলে আমাদের খুব সুবিধা হবে । নব্বইয়ের শেষের দিকে এই টার্মিনাস তৈরির জন্য জমি নেওয়া হয়েছিল । অ্যাপ্রোচ রোডও তৈরি হয়েছিল । 2019 সালে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী এখানে এসে ঘটা করে টার্মিনাসের শিলান্যাস করেন । 14 কোটি টাকা বরাদ্দ হয় । ভেবেছিলাম, এবার আমাদের বহুদিনের সমস্যা মিটবে । কিন্তু কোনও লাভ হয়নি । এনিয়ে আমরা বহুবার সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছি । কিন্তু সরকার কোনও পাত্তা দেয়নি । প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছি । তারা কোরোনার কথা শুনিয়েছে । এখন আর সরকারের পক্ষে এই কাজ চালু করা সম্ভব নয় । ফলে টার্মিনাস কবে চালু হবে বলা যাচ্ছে না । বলতে খারাপ লাগছে, এতে লরিগুলি জাতীয় সড়কের ধারে দাঁড়িয়ে থাকছে । তাতে মানুষের যে সমস্যা হয় তা আমরা বুঝতে পারি । কিন্তু এই সমস্যার কোনও স্থায়ী সমাধান নেই । আমরা সরকারকে বলেছিলাম, 34 নম্বর জাতীয় সড়ক ও তার বাইপাসের সংযোগস্থলে যে জায়গা রয়েছে, তাতে একটু মাটি ভরে দিলে সেখানেই লরি পার্কিং করা যায় । কিন্তু সেই আবেদনেও কোনও কাজ হয়নি । এই মুহূর্তে মালদায় নথিভূক্ত লরির সংখ্যা প্রায় 42 হাজার । এর সঙ্গে প্রতিদিন বাইরের অন্তত তিন হাজার লরি এখানে আসে । ফলে এত লরির চাপ জেলাকে নিতে হয় ।"

জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল স্বীকার করে নিয়েছেন, এই টার্মিনাস তৈরি না হওয়ায় শুধুমাত্র জমির জন্য প্রতি মাসে তাঁদের 60 হাজার টাকার বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে । তিনি বলেন, "পুরাতন মালদার নারায়ণপুরে জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে সেন্ট্রাল ট্রাক টার্মিনাসের কাজ শুরু হয়েছিল । জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে । উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর এর জন্য টাকাও বরাদ্দ করেছে । কাজ শুরু হয়েছিল । কিন্তু এরই মধ্যে কিছু সমস্যা দেখা দেয় । কোরোনার সংক্রমণ দেখা দেয় । তার মধ্যেও গত 19 তারিখ আমরা এনিয়ে একটি রেজ়ুলেশন করেছি । বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আমরা ওই টার্মিনাস করব । রাজ্যের অনুমোদন নিয়ে PPP মডেলে সেই টার্মিনাস করা হবে । টার্মিনাসটি চালু হলে মালদার দুই পৌর শহরের যানজট যেমন কমবে, তেমনই জেলা পরিষদের অর্থ বাঁচবে । খুব দ্রুত ওই টার্মিনাস চালু করার সবরকম চেষ্টা চলছে ।"

নিত্যদিন যানজটের সমস্যায় নাজেহাল পুরাতন মালদার বাসিন্দারা । ওই পৌরসভার প্রশাসক কার্তিক ঘোষ বলছেন, "এই সমস্যা আমাদের দীর্ঘদিনের । দুই শহরের যানজট মুক্ত করতে দীর্ঘদিন আগেই ওই ট্রাক টার্মিনাস তৈরির কথা হয়েছিল । সেটা এখন কী অবস্থায় আছে, আমি জানি না । আমাদের এখানে মূলত খাদ্য নিগমের গুদামের জন্যই প্রতিদিন যানজট তৈরি হচ্ছে । সবাই সমস্যায় পড়ছে । এনিয়ে আমরা লরিচালকদের সংগঠন, প্রশাসন ও খাদ্য নিগমকে নিয়ে আলোচনায় বসেছিলাম । সমস্যা সমাধানে কিছু নিয়মও তৈরি হয়েছিল । কিন্তু তা কেউ মানছে না । ভবিষ্যতে এনিয়ে আমরা আবার প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব । তবে নারায়ণপুরে সেন্ট্রাল টার্মিনাস তৈরি হলে দুই শহরে যানজটের সমস্যা আর থাকবে না ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details