মালদা, ২৮ জুন : গত ১৯ জুন সকালে সংবাদমাধ্যমে নৃশংস খুনের ঘটনা দেখে কেঁপে ওঠেন সবাই । শুধু রাজ্য নয়, পরিবারের চার সদস্যকে বাড়িরই ছোট ছেলের খুনের খবরে আলোড়ন পড়ে গোটা দেশেও । মাত্র ১৯ বছরের একটি ছেলে কীভাবে দীর্ঘ পরিকল্পনা করে বাবা-মা, ছোট বোন ও ঠাকুমাকে খুন করেছিল, তা সামনে আসায় খুনির মানসিক পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন ওঠে বিভিন্ন মহলে ।
একাধিক মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, এই ঘটনার মূল কারিগর আসিফ মহম্মদ সম্ভবত স্কিৎজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত । তাকে দফায় দফায় জেরা করে তদন্তকারীদেরও মনে হয়েছে, নিজেকে অপরাধ জগতের বেতাজ বাদশা ভাবতে শুরু করেছিল আসিফ । কোনও রকমে মাধ্যমিক পাশ করলেও সে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ব্যবহারে সিদ্ধহস্ত । কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট তার প্রায় গুলে খাওয়া । ইন্টারনেটে সে নিয়মিত ইংরেজি সহ বিভিন্ন ভাষার ক্রাইম থ্রিলার ও মুভি দেখত । তার আচরণে ভীত ছিল বাড়ির লোকজনও । সেই কারণেই ছোট ছেলের টাকার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন পরিবারের লোকেরা ।
সেখান থেকেই বাড়ির পাঁচ সদস্যকে খুন করার নীল নকশা তৈরি করে সে । বাড়ির দেওয়াল লাগিয়ে তৈরি করে অদ্ভুত গুদামঘর । যাতে শুধুমাত্র একটি লোহার দরজা ছাড়া আর কোনও ফাঁকফোঁকর নেই । ৫০ ফুট উঁচু ঘরের ছাদ তৈরি না হলেও দেওয়ালের প্লাস্টারের কাজ সম্পূর্ণ । তবে নকশা অনুযায়ী বাড়ি আর গুদামঘরের মধ্যে ছোট একটা সুড়ঙ্গ করে রেখেছিল সে । পরিবারের পাঁচ সদস্যকে কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ মেশানো ঠাণ্ডা পানীয় খাইয়ে অর্ধচেতন অবস্থায় এই সুড়ঙ্গ দিয়েই সে সবাইকে গুদামঘরে নিয়ে গিয়েছিল । সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় তার দাদা আরিফ মহম্মদ ওরফে রাহুল । সেই পুলিশকে যাবতীয় তথ্য দিয়ে তদন্তে সহযোগিতা করে ।
আরও পড়ুন...Kaliachak Murder Case: আরিফ মহম্মদ ও তাঁর মামাকে আদালতে পেশ, নেওয়া হবে গোপন জবানবন্দি
জেলা আদালতের অনুমতিতে আসিফকে ১২ দিনের হেফাজতে নিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ । জানা গিয়েছে, প্রথমদিকে জেরায় তদন্তকারীদের কোনও সহযোগিতা করেনি সে । তবে সময় যত গড়িয়েছে, জেরায় মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছে সে । খুনের ঘটনায় পুলিশি তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে । তবে ইন্টারনেট জগতে তার অপরাধের বিস্তৃতি কতটা, তা এখনও সম্পূর্ণ জানতে পারা যায়নি বলেই খবর । এনিয়ে সে এখনও মুখ বন্ধ রেখেছে ।