মালদা : দেবী এখানে সিদ্ধেশ্বরী । সবার মুখে তিনি বড় ঠাকুরণ । কৃষ্ণা নবমী তিথিতে তাঁর পুজো শুরু হয় । প্রায় দু'সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন নানাবিধ ভোগের আয়োজন । হয় শতাধিক বলি । তবে প্রতিমা বেদিতে ওঠে পঞ্চমী তিথিতে । দশমীতে লণ্ঠন-মশাল জ্বালিয়ে, ঘুঁটের ধোঁয়ায় তিনি নারায়ণী রূপ পান । এবার এই পুজো 987 বছরে পড়ল । এলাকায় ভীষণ জাগ্রত হিসেবে নামডাক রয়েছে বড় ঠাকুরণের । প্রতিবারই তিনি না কি নানাবিধ রূপে দেখা দেন । এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি ।
বড় ঠাকুরণের পুজো হয় পুরাতন মালদার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নাগেশ্বরপুর এলাকায় । পারিবারিক পুজো । এলাকায় সুকুলবাড়ির পুজো নামে খ্যাত বড় ঠাকুরণ । সুকুল পরিবারের দাবি, শুধু রাজ্যে নয়, গোটা দেশের প্রাচীনতম পুজোগুলির অন্যতম এই পুজো । সুকুল বংশের বর্তমান প্রজন্ম শ্যামলকুমার সুকুল বলেন, "আমাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ের বাসিন্দা । সেখানেই ছিল তাঁদের জমিদারি । পারিবারিক নথি অনুযায়ী 987 বছর আগে এই পুজোর প্রবর্তন করেন আমাদের পূর্বপুরুষ ধুরন্ধর শুক্লা ও বংশধর শুক্লা । তাঁরা ছিলেন দুই ভাই । মায়ের স্বপ্নাদেশে এই পুজো শুরু হয় । প্রায় 500 বছর আগে তাঁদের উত্তরপুরুষরা দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় । এক ভাগ চলে আসে অবিভক্ত বাংলাদেশের রাজশাহীতে । সেখানকার জমিদারি পায় পরিবারের সেই অংশ । তখন থেকে দু'জায়গাতেই এই পুজো হত । বাংলাদেশ থেকে আমাদের পূর্বপুরুষরা প্রায় 70 বছর আগে পুরাতন মালদার সাহাপুরে চলে আসেন । তখন থেকে পারিবারিক পুজো এখানে চলে আসে । বংশ ভাগ হতে থাকলেও পারিবারিক এই পুজোয় কখনও ছেদ পড়েনি । প্রাচীন রীতি অনুযায়ী কৃষ্ণা নবমী তিথি থেকে এই পুজো শুরু হয় । মহালয়ার দিন বড় ও মেজো ঠাকুরণের পুজো হয় । পঞ্চমীর দিন বেদিতে মা-কে তোলা হয় । প্রতিপদের দিন লাল শাক ও ঘি মাখানো রুটি দিয়ে মা-কে ভোগ দেওয়া হয় । তৃতীয়াতে পাঁচ হাঁড়ি ভাত ও পাঁচ হাঁড়ি ডাল তৈরি করে মা-কে পঞ্চসতীর ভোগ নিবেদন করা হয় । এই পুজোয় বলি প্রথা চালু রয়েছে ।"