সুজাপুর বিস্ফোরণে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে, কংগ্রেসের ক্ষতিপূরণ ঘোষণা ; ঘটনাস্থানে STF

সুজাপুর বিস্ফোরণ কাণ্ডে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে ৷ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা ৷ BJP-র NIA তদন্তের দাবি । ঘটনাস্থানে তদন্তে STF ৷

মালদা, 20 নভেম্বর : এখনও কারখানার এদিকে ওদিকে চাপ চাপ রক্ত ৷ আশপাশের গাছগুলির মাথায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কারখানার ছাদের বিভিন্ন অংশ ৷ লাল ফিতের ফাঁসে ঘিরে রাখা হয়েছে দুর্ঘটনাস্থান ৷ রয়েছে পুলিশ পিকেট ৷ বাইরের কাউকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না ৷ কারণ, এখনও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থান পরিদর্শনে এসে পৌঁছোননি ৷ যদিও গতকাল সেখান থেকে কিছু নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে ৷ তবে তা পর্যাপ্ত কি না, পুলিশের সেটা জানা নেই ৷ আজ ঘটনাস্থানে তদন্ত চালিয়েছে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স(STF) ৷ এরই মধ্যে ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা চলছেই ৷ গতকাল কলকাতা নিয়ে যাওয়ার পথে কারখানার মৃত এক অংশীদার আবু সায়েদের বাড়িতে আজ সকালে যান মালদার ডিভিশনাল কমিশনার সৈয়দ আহমেদ বাবা ৷ সঙ্গে ছিলেন জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র ও সদর মহকুমাশাসক সুরেশচন্দ্র রানো ৷ তাঁরা মৃতের পরিবারের হাতে রাজ্য সরকারের ক্ষতিপূরণ হিসাবে দু’লাখ টাকার চেক তুলে দিয়েছেন ৷ একটু বেলাতে সেখানে হাজির হয় কংগ্রেসের প্রতিনিধিদল ৷ দলে ছিলেন কংগ্রেসের ছয় বিধায়ক ৷ তাঁরা প্রত্যেক মৃতের পরিবারের কাছে যান ৷ দলের তরফে প্রত্যেক পরিবারকে 50 হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেন ৷ একইসঙ্গে আহতদের পরিবারপিছু 10 হাজার টাকা ঘোষণা করা হয় ৷ দুপুরে ঘটনাস্থানে আসেন BJP নেত্রী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরি ৷ এই ঘটনায় আজও তিনি NIA তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছেন ৷ তবে আজ কংগ্রেসের তরফে BJP ও রাজ্যপালের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে ৷

আজ মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে এলাকার বিধায়ক ইশা খান চৌধুরি বলেন, "এখন মদ খেয়ে মৃত্যু হলে মৃতদের পরিবারকে দু’লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয় রাজ্য সরকার ৷ কিন্তু এক্ষেত্রে গরিব মানুষ লকডাউনে কাজ করতে পারছিল না ৷ দীর্ঘদিন এই কারখানাগুলি বন্ধ ছিল ৷ খাবার জোটাতে তারা এই কারখানায় কাজ করছিল ৷ তাই আমরা এই ঘটনায় মৃতদের দশ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি ৷ আজ আমরা এই পরিবারগুলির পাশে এসেছি৷ আমাদের সব বিধায়কই এখানে এসেছেন ৷ আমরা রাজ্য বা কেন্দ্রে ক্ষমতায় নেই ৷ তবু আমরা দলের তরফে মৃতদের প্রত্যেকের পরিবারকে 50 হাজার ও আহতদের পরিবার পিছু দশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করছি৷ এখানকার লোকজন বলছেন, মেশিনে ত্রুটির জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে ৷ এনিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে ৷ আমরা তদন্তের ক্ষেত্রে কোনও বাধা দিচ্ছি না ৷ কিন্তু BJP এই ঘটনাকে অন্যদিকে ঘোরাতে চাইছে ৷ বিভাজনের রাজনীতি করতে চাইছে ৷ অথচ কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকলেও তাঁরা মৃত কিংবা আহতদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে কিছু বলছে না ৷ এখানে শুধু এক ধর্মের লোকেরই ক্ষতি হয়নি, দুর্ঘটনায় হিন্দু-মুসলিম এক হয়ে গিয়েছে ৷"

আজ BJP ও রাজ্যপালের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত ছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক ও প্রাক্তন জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোস্তাক আলম ৷ তিনি বলেন, “গতকাল সুজাপুরে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে ৷ মানুষ ও জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমরা সবাই দুঃখিত ৷ আমরা সবাইকে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে বলছি ৷ এখন কেন্দ্রের পক্ষে বলা হচ্ছে, এসব কারখানা নাকি অবৈধ ৷ এতদিন তা কেন্দ্র কিংবা রাজ্যের নজরে এল না কেন? জেলাশাসক কিংবা পুলিশের কোনও রিপোর্ট না পেয়েই রাজ্যপাল এই ঘটনায় BJP-র মুখপাত্রের মতো মন্তব্য করেছেন ৷ তিনি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হতে পারেন, কিন্তু জেলা প্রশাসনের কোনও রিপোর্ট না পেয়ে এমন মন্তব্য করার অধিকার তাঁর নেই ৷ আমি আইনের ছাত্র ৷ আমি রাজ্যপালের সাংবিধানিক অধিকার সম্পর্কে জানি ৷ এই ঘটনায় মধুঘাটের দুই হিন্দু মা আহত হয়েছেন ৷ তাঁদের কথা রাজ্যপাল একবারও ভাবলেন না ৷ দুর্ঘটনার পর তিনি প্রথমেই হিন্দু-মুসলিম খুঁজে বেরিয়েছেন ৷ NIA তদন্ত আগে দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে হওয়া উচিত ৷ তিনি অশান্তির কথা বলেন ৷ সুজাপুরের মানুষ কর দেয় ৷ তার টাকাই কেন্দ্র পায় ৷ এটা তাদের মনে রাখা উচিত ৷ আমরা দলের পক্ষ থেকে বলতে চাই, এখানে কোনও ধর্মীয় বিভাজন করতে দেওয়া হবে না ৷ এখানে নাকি বোমা ফেটেছে ৷ কারওর বাপ সেটা দেখেছে? আমরা এসবের তীব্র বিরোধিতা করছি ৷"

এদিকে আজ ঘটনাস্থান পরিদর্শনে এসেও ব্যারিকেড থাকায় ফিরে যেতে হয়েছে BJP নেত্রী, রাজ্য কিষান মোর্চার সহসভানেত্রী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরিকে ৷ তিনি বলেন, "আজ আমাদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি ৷ অথচ গতকাল অন্য দলের প্রতিনিধিদের ভিতরে যেতে দেওয়া হয়েছিল ৷ রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থাগুলির উপর এত চাপ থাকে যে তারা কোনও ঘটনাতেই নিজেদের মতো তদন্ত করতে পারে না ৷ আমরা এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করছি ৷ তার জন্য উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি প্রয়োজন ৷ এই ঘটনার তদন্তে আমাদের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ NIA দাবি করেছেন ৷ এর আগে সুজাপুরের মাটিতে আতঙ্কবাদী হামলার ঘটনা ঘটেছে ৷ কিছুদিন আগে NIA মালদা ও মুর্শিদাবাদ থেকে একাধিক জঙ্গিকে ধরেছে ৷ তাই এই ঘটনাতেও আমরা আশঙ্কিত ৷ আর রাজ্য সরকার মৃতদের পরিবারের জন্য দু’লাখ টাকার যে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে তা পর্যাপ্ত নয় ৷ আমরা প্রত্যেক মৃতের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি ৷ NIA তদন্ত ও মৃতদের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি আমি তিনদিনের মধ্যে অমিত শাহে্‌র কাছে জানাব ৷"