মালদা, 19 জুন : মা, বাবা, ঠাকুমা ও বোন ৷ পরিবারের চারজনকে খুন করে বাড়িতেই পুঁতে দিয়েছিল বাড়ির ছোট ছেলে ৷ তারপর সেই বাড়িতেই বহাল তবিয়তে বাস করছিল আসিফ মেহবুব নামে ওই অভিযুক্ত ৷ এক বা দুদিন নয়, এভাবে চারটা মাস কেটে যায় ৷ কোনওরকমে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন দাদা ৷ কিন্তু ভয়ে এতদিন মুখ খুলতে পারেননি ৷ অবশেষে গতকাল সাহস জুগিয়ে স্থানীয় থানায় গিয়ে গোটা ঘটনা খুলে বলেন ৷ শুনে অবাক পুলিশ ৷ প্রথমে বিশ্বাসই করতে চায়নি তারা ৷ অবশেষে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে খুনি ভাইকে ধরিয়ে দিলেন দাদা ৷ গায়ে কাঁটা দেওয়া এই ঘটনা মালদার কালিয়াচকের ৷ জেরায় খুনের কথা স্বীকার করেছে আসিফ ৷
কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকের বীরনগর 2 গ্রাম পঞ্চায়েতের পুরানো 16 মাইল এলাকার বাসিন্দা জাওয়াদ আলি (53) ৷ কৃষিকাজের পাশাপাশি দুটি ডাম্পারও ছিল তাঁর ৷ এনটিপিসিতে ছাইয়ের ব্যবসা ছিল ৷ এলাকায় তোলাবাজ হিসাবেও কুখ্যাত ছিলেন ৷ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কালিয়াচক এলাকার কুখ্যাত দুষ্কৃতী আনসারির দলের সদস্য ছিলেন জাওয়াদ ৷ যিনি এলাকায় রুনু নামে পরিচিত ছিলেন ৷
সেই জাওয়াদের পরিবারে ছিল মা আলেকজান বিবি (72), স্ত্রী ইরা বিবি (38), দুই ছেলে ও এক মেয়ে ৷ বড় ছেলে রাহুল শেখ সেভাবে কাজকর্ম করেন না ৷ পারিবারিক জমিজায়গার দেখাশোনা করেন ৷ বাড়ির ছোট ছেলে আসিফ মেহবুব ওরফে আন্নান স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ৷ মেয়ে আরিফা খাতুন (13) গ্রামেরই একটি স্কুলের ছাত্রী ৷ গত 18 ফেব্রুয়ারি আন্নান বাড়িতেই জলের মধ্যে শ্বাসরোধ করে মা-বাবা, ঠাকুমা ও বোনকে খুন করে খুন করে ৷ এরপর বাড়িতেই দেহগুলি পুঁতে দেয় ৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাধ্যমিক পরীক্ষার পরই বাড়ি থেকে কোথাও চলে যায় আন্নান ৷ বাইরে থেকে মাঝেমধ্যেই টাকার দাবি করে বাবাকে ফোন করত ৷ বাবা তার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করলে নিজের এটিএম কার্ড ব্যবহার করে সেই টাকা তুলে নিত সে ৷ এনিয়ে পরিবারের তরফে কালিয়াচক থানায় যোগাযোগও করা হয়েছিল ৷ তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, একেক সময় একেক জায়গায় থাকছে আন্নান ৷ নিজের মোবাইলের সিম কার্ডও সে মাঝেমধ্যেই পালটে ফেলে ৷
আরও পড়ুন :মহিলাকে নগ্ন করে মারধর, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিয়ো ভাইরালের অভিযোগ
এর থেকে পুলিশের ধারণা হয় সম্ভবত কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর পাল্লায় পড়েছে আন্নান ৷ কিন্তু একদিন আন্নান বাড়ি ফিরে আসে ৷ বাড়ি ফেরার পরপরই বিভিন্ন ধরনের গ্যাজেট কিনে দেওয়ার জন্য বাবাকে চাপ দিতে শুরু করে সে ৷ নতুন কেনা গ্যাজেট নিয়ে নিজের ঘরে একাই থাকত সে ৷ আচরণ সন্দেহজনক হলেও কেউ তেমন কিছু বলত না ৷ কারণ এসব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে লোকজন দিয়ে সবাইকে খুন করে ফেলার হুমকি দিত সে ৷