পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

পেটের দায়, মালদায় ভিক্ষা করছেন সাত থেকে সত্তরের মহিলারা

লকডাউন ঘোষণার পর থেকে মৌলিদের হাতে কাজ নেই ৷ পুরুষরা এখন বাড়িতে বসে ৷ তাই পেট চালাতে পরিবারের বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ মহিলারা বাটি হাতে নেমে পড়েছে রাস্তায় ৷ ভিক্ষা করে যা আসছে তাতেই চলছে গ্রাসাচ্ছাদন ৷

By

Published : Apr 20, 2020, 7:09 PM IST

Updated : Apr 20, 2020, 9:27 PM IST

পেট চালাতে মালদায় ভিক্ষার বাটি হাতে সাত থেকে সত্তরের মহিলারা
পেট চালাতে মালদায় ভিক্ষার বাটি হাতে সাত থেকে সত্তরের মহিলারা

মালদা, 20 এপ্রিল: অঘ্রাণ মাসের শীতে হরিশচন্দ্রপুর থেকে রতুয়ার সামসি এলাকায় মধুর সন্ধানে এসেছিল 20টি পরিবার ৷ তারপর কোরোনার জেরে দেশ জুড়ে ঘোষিত হল লকডাউন ৷ সেই লকডাউনেরও পেরিয়ে গিয়েছে 27 দিন ৷ যদিও এই মালদার এই পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ায়নি প্রশাসন কিংবা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ৷ এই পরিস্থিতিতে খাবার জোগাড় করতে এখন তাদের সম্বল এখন ভিক্ষাবৃত্তি ৷ সেই পথেই নেমে পড়েছে মৌলি পরিবারের মহিলারা ৷ তালিকায় সাত বছরের বাচ্চা মেয়ে থেকে সত্তরের বৃদ্ধাও রয়েছেন ৷

হরিশচন্দ্রপুর 2 ব্লকের ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রামপুর গ্রামের 20টি পরিবার কোরোনা প্রাদুর্ভাবের অনেক আগে থেকেই সামসি রেল স্টেশনের পাশে পাওয়ার হাউস সংলগ্ন আমবাগানে ঘাঁটি গেড়েছিল ৷ এরা মূলত যাযাবর সম্প্রদায়ের৷ পরিবারগুলির মূল পেশা মধু সংগ্রহ ৷ পুরুষরা প্রতিদিন সকালে আস্তানা ছেড়ে বেরিয়ে পড়তো ৷ গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করতো ৷ সেই মধু বিক্রি করেই সংসার চলে এদের ৷ কিন্তু লকডাউন ঘোষণার পর থেকে মৌলিদের হাতে কাজ নেই ৷ পুরুষরা বাড়িতে বসে ৷ তাই পেট চালাতে পরিবারের বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ মহিলারা বাটি হাতে নেমে পড়েছে রাস্তায় ৷ ভিক্ষা করে যা আসছে তাতেই চলছে গ্রাসাচ্ছাদন ৷

তেমনই এক পরিবারের সদস্য দিলীপ বেট বলেন, "প্রতি বছরের মতো এবারও অঘ্রাণ মাসে এখানে এসেছিলাম ৷ অঘ্রাণ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত এইসব এলাকায় ভালো মধু পাওয়া যায় ৷ কাজ সবে শুরু হয়েছিল ৷ কিন্তু তার মধ্যেই লকডাউন হয়ে যায় ৷ পুলিশ আস্তানা থেকে বেরোতে দেয় না ৷ এদিকে খাবারেরও খুব অভাব ৷ তাই বাড়ির মেয়েরা ভিক্ষা করে খাবার সংগ্রহ করছে ৷ তারা যা নিয়ে আসে তাই দিয়েই একবেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছি ৷ এখনও পর্যন্ত প্রশাসন কিংবা অন্য কোনও জায়গা থেকে কিছু পাইনি ৷"

একই বক্তব্য বিনোদা বেট, ঊষা বেটদেরও ৷ এই পরিস্থিতিতে সাহায্য পাওয়ার আশা করছেন তাঁরা ৷ তাঁদের দাবি, "সাহায্য পেলে ছেলেমেয়েগুলোকে অন্তত দু’বেলা দু’মুঠো খাবার দিতে পারতাম ৷ কিন্তু এখনও কেউ আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকায়নি ৷ এইসময় বেশি দূরে ভিক্ষা করতে যেতেও দেওয়া হচ্ছে না ৷ মাঝরাস্তায় পুলিশ আটকে দিচ্ছে ৷ এভাবে আর কতদিন চলে !" সবিতা নামে এক কিশোরীর কথায়, "বাবা-মা দু’জনেই মারা গেছে ৷ দাদির কাছে আমরা চার ভাইবোন থাকি ৷ এখন মামারা কাজে বেরোতে পারছে না ৷ তাই আমরাই এখন ভিক্ষা করে খাবার জোগাড় করছি ৷"

পেট চালাতে মালদায় ভিক্ষার বাটি হাতে সাত থেকে সত্তরের মহিলারা

কিন্তু এতদিনেও এই পরিবারগুলির কথা প্রশাসনের কানে কেন পৌঁছায়নি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ৷ আজ বিষয়টি রতুয়া 1 ব্লকের BDO সারওয়ার আলিকে জানানো হলে তিনি কার্যত বিস্ময়প্রকাশ করেন ৷ BDO বলেন, "এমন ঘটনার জানা ছিল না ৷ আমাদের কেউ জানায়নি ৷ ওই পরিবারগুলিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সাহায্য করা হবে ৷ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা তা করার চেষ্টা করছি ৷"

Last Updated : Apr 20, 2020, 9:27 PM IST

For All Latest Updates

ABOUT THE AUTHOR

...view details