মালদা, 22 জুন :রসায়নে গবেষণার জন্য অগস্টে আমেরিকার ইয়েল(YALE) বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন মালদার পড়ুয়া ঋৈবত সরকার(Scholar Student of Malda Gets Opportunity to Research in America Yale University)। বাবা শ্যামল সরকার ও মা জুমেলিদেবী দু’জনেই রেলকর্মী । ছোট ভাই ঋদ্ধিত ছোট থেকেই সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত । চোখের সামনে ঋৈবত দেখেছেন ভাইয়ের জীবনযুদ্ধ । ভাইকে দেখেই পেয়েছেন লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা । তাঁর গবেষণা ভবিষ্যতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে কাজে লাগুক, এটাই তাঁর স্বপ্ন ।
ঋৈবতদের আদি বাড়ি জলপাইগুড়ি জেলার ঘুঘুডাঙা গ্রামে । তবে চাকরি সূত্রে তাঁর বাবা-মা দীর্ঘদিন ধরেই মালদায় রয়েছেন । অবসরগ্রহণের পরও তাঁরা পাকাপাকিভাবে এই শহরেই থেকে যেতে চান । তার জন্য একটি ফ্ল্যাটও কিনেছেন । আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবসর নেবেন শ্যামলবাবু । দুই ছেলেকে ছোট থেকেই ভর্তি করে দেন রেল আবাসনের পাশেই থাকা একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ।
আরও পড়ুন :Body Building Competition : আন্তর্জাতিক স্তরে দেহসৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় সোনা অর্জন চাষির ছেলের
আইসিএসই পরীক্ষায় 97.2 শতাংশ নম্বর পেয়ে ঋৈবত আইএসসি পড়তে চলে যান কলকাতার ভারতীয় বিদ্যাভবনে । সেখান থেকে আইএসসিতে 95.8 শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন । ততদিনে তিনি কিশোর বৈজ্ঞানিক হিসাবে কেন্দ্রীয় সরকারের স্কলারশিপের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন । এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন ভূপালের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চে । চলতি বছরই তিনি জার্মান অ্যাকাডেমিক এক্সচেঞ্জ সার্ভিসের স্কলারশিপের জন্য নির্বাচিত হন । সেখানকার ওভিজিইউ (OVGU) বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পান ।
কিন্তু রসায়নে গবেষণা করাই ছিল ঋৈবতের লক্ষ্য ৷ তাই জার্মানির ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েও তিনি সেখানে যাননি । তার বদলে বিশ্বের 10টি নামি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের গবেষণার জন্য আবেদন করেন । পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর কাছে সেই অফার আসে । তার মধ্যে তিনি বেছে নেন অ্যামেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়কে । আগামী 6 অগস্ট নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য সেখানে রওনা দিচ্ছেন তিনি ।
আরও পড়ুন :NDA Exam : রাজ্যে মাত্র দু’জন, সর্বভারতীয় এনডিএ প্রবেশিকার মেরিট লিস্টে 66তম স্থানে মালদার অর্ণব
এই বিষয়ে ঋৈবত বলেন, "ক্লাস টেন পর্যন্ত মালদায় পড়াশোনা করে দু’বছর কলকাতায় পড়তে যাই । সেখান থেকে পরীক্ষা দিয়ে ভূপালের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চে পড়ার সুযোগ পাই । কেমিস্ট্রি নিয়েই পড়াশোনা করার পাশাপাশি অনেক রিসার্চ আর ইন্টার্নশিপও করেছি । গত বছর আমি আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য আবেদন করলে সেখানে 10টির মধ্যে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সুযোগ পাই । শেষ পর্যন্ত ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়কে আমি বেছে নিয়েছি । আমি বায়ো ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি নিয়ে গবেষণা করতে চাই । আমার ইচ্ছে প্রোটিন ফোল্ডিং আর মিস ফোল্ডিং নিয়ে গবেষণা করা । এই গবেষণা অনেক রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে । এই গবেষণা মানুষের উপকারে আসবে । নতুন ওষুধ আবিষ্কার করা যাবে । আমার ভাই ছোট থেকেই সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত । ভাইয়ের লড়াই সামনে থেকে দেখেছি । ও আমার অনুপ্রেরণা ।"
ঋৈতবের মা জুমেলিদেবী জানান, "ক্লাস টেন পর্যন্ত ঋৈবতকে আমি পড়াতাম । দু’চারজন গৃহশিক্ষক থাকলেও তাঁদের পরেও আমিই ওকে বাড়িতে পড়াতাম ৷ স্কুলের শিক্ষকরাও ওকে খুব সাহায্য করেছেন । কিন্তু কলকাতা চলে যাওয়ার পর থেকে আমরা শুধু ওকে মানসিক আর অর্থনৈতিক সাহায্য করেছি । বাকিটা সব ও নিজে করেছে । এই সাফল্যও ওর নিজের । ছেলের গবেষণা চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাজে লাগবে । ও যে মানুষের কথাও ভাবছে, এতে আমি খুব আনন্দিত ।"
আরও পড়ুন :Madhyamik Result 2022 : মাধ্যমিকে দ্বিতীয় মালদার কৌশিকীর এত ভাল ফল কী করে হল ? জানল ইটিভি ভারত