চাঁচল, 26 মে : কয়েকবছর ধরেই শয্যাশায়ী স্ত্রী ৷ হাঁটাচলা তো দূরের কথা, হাত-পা নাড়ানোরও সামর্থ্য নেই ৷ পক্ষাঘাতে আক্রান্ত সত্তরের স্ত্রীর দেখাশোনার সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন ছিয়াত্তরের স্বামী ৷ তবু করোনার হাহাকার, মন নাড়িয়ে দিয়েছে বৃদ্ধের ৷ এত বিপত্তি সত্ত্বেও রেড ভলান্টিয়ারদের হাতে তুলে দিয়েছেন তিনমাসের পেনশন 50 হাজার টাকা ৷ প্রয়োজনে আরও অর্থ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ৷ যেন এই বয়সেও গলার শিরা ফুলিয়ে বলতে চাইছেন, ‘আমি তোমাদেরই লোক ৷’
চাঁচলের দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা অতুল সিনহা ৷ স্ত্রী মণিদীপা সিনহা ৷ দু’জনেই স্থানীয় রানি দাক্ষায়ণী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন ৷ বছর কয়েক ধরে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত মণিদীপা দেবী ৷ অতুলবাবুই তাঁর যাবতীয় সেবাশুশ্রূষা করেন ৷ দু’জনের পেনশনেই চলে সংসার ৷
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল গোটা দেশ ৷ তার প্রভাব পড়েছে চাঁচলেও ৷ প্রায় ঘরে ঘরে সংক্রমণ ৷ চেনা-অচেনা একের পর এক মৃত্যু নাড়িয়ে দেয় অতুলবাবুকে ৷ করোনা যুদ্ধে রেড ভলান্টিয়াররা যে মরণপণ সংগ্রাম করছেন, তা দ্বিতীয়বারের জন্য নড়িয়ে দেন বৃদ্ধ অতুলবাবুর মন ৷ নিজে ছিলেন বামপন্থী ৷ সিদ্ধান্ত নেন, ভয়াল ভাইরাসের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে তিনিও রেড ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে যুদ্ধে নামবেন ৷ কিন্তু মন চাইলেও শরীর যে তাঁর সঙ্গ দেবে না এই কাজে, তাও তিনি জানেন ৷ এই অশক্ত শরীরে রাস্তায় নেমে লড়াই আর সম্ভব নয় ৷ তাই তিন মাসের পেনশন 50 হাজার টাকা তুলে দেন রেড ভলান্টিয়ারদের হাতে ৷ একটাই চাওয়া, মানুষগুলো বাঁচুক ৷