পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

কোয়ারানটিন সেন্টারে উপসর্গহীন কোরোনা আক্রান্তদের চিকিৎকসার সিদ্ধান্ত, বিক্ষোভ স্থানীয়দের

গ্রামের কোয়ারানটিন সেন্টারকে কোভিড হাসপাতালে করা হচ্ছে বলে খবর ছড়াতেই বিক্ষোভ গ্রামবাসীদের ৷ বিক্ষোভের জেরে পিছু হটল প্রশাসন ৷

malda
malda

By

Published : Jun 17, 2020, 5:33 AM IST

মালদা, 17 জুন : একই কোয়ারানটিন সেন্টারে কোরোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে 29 জনের ৷ তাদের চিকিৎসার জন্য ওই সেন্টারটিকেই কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত করতে চেয়েছিল জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ ৷ এই খবর চাউর হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায় ৷ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গ্রামবাসীরা দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে ৷ ঘেরাও করা হয় স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্মীদের ৷ খবর পেতে ঘটনাস্থানে যান জেলার স্বাস্থ্যকর্তারাও ৷ তাঁদের ঘিরেও বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে গ্রামবাসীরা ৷ তাদের দাবি, ওই স্কুলকে কোভিড হাসপাতাল হিসাবে রূপান্তরিত করা যাবে না ৷ সংক্রামিত সবাইকে নিয়ে যেতে হবে পুরাতন মালদার নারায়ণপুরের কোভিড হাসপাতালে ৷ শেষ পর্যন্ত বিকেলে পিছু হটতে বাধ্য হয় স্বাস্থ্যবিভাগ ও প্রশাসন ৷

স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আর গ্রামে নয়, কোভিড হাসপাতালেই সংক্রামিতদের চিকিৎসা করা হবে৷ এরপরেই বিক্ষোভ থেকে সরে আসে গ্রামবাসীরা৷ ঘটনাটি ঘটেছে মালদার গাজোলের করকচ গ্রাম পঞ্চায়েতের উদবেল গ্রামে ৷ তবে সব ছাপিয়ে আরও বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে সুস্থ হয়ে ওঠা এক কোরোনা সংক্রামিতের অভিযোগ ৷ ওই শ্রমিকের দাবি, লালারস পরীক্ষা না করেই কোভিড হাসপাতাল থেকে তাঁকে রিপোর্ট নেগেটিভ বলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৷

উল্লেখ্য, সম্প্রতি দিল্লি, মহারাষ্ট্র ও গুজরাত থেকে বেশ কিছু ভিনরাজ্য ফেরত শ্রমিক গাজোলের করকচ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ফিরে আসে৷ ওই শ্রমিকদের জন্য ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কোয়ারানটিন সেন্টার খোলা হয় উপদেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে৷ এই সেন্টারে 32 জন শ্রমিক কোয়ারানটিনে ছিল৷ গত সাত জুন রাতে এই শ্রমিকদের তিনজনের লালায় কোরোনা ভাইরাসের উপস্থিতি মেলে৷ পরদিনই তাদের নিয়ে যাওয়া হয় পুরাতন মালদার কোভিড হাসপাতালে৷ এরপর স্বাস্থ্যবিভাগের পক্ষ থেকে এই সেন্টারে থাকা বাকি 29 জনের লালারস সংগ্রহ করা হয়৷ একই সঙ্গে লালারস সংগ্রহ করা হয় ওই শ্রমিকদের সংস্পর্শে আসা গ্রামের আরও 31 জনের ৷ শুধু ওই গ্রামেই নয়, লালারস সংগ্রহ করা হয় পাশের ভবানীপুর গ্রামের 50 জনেরও ৷ কারণ, ওই গ্রামেও একই পরিবারের পাঁচ সদস্যের লালারসে কোরোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ৷ গত 14 জুন লালারস পরীক্ষার রিপোর্ট এলে দেখা যায়, উপদেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোয়ারানটিনে থাকা 29 জনই কোরোনা পজ়িটিভ ৷ তবে সবাই উপসর্গহীন ৷ এরপরেই স্বাস্থ্য বিভাগ সিদ্ধান্ত নেয়, সংক্রামিত 29 জনকে ওই সেন্টারে রেখেই চিকিৎসা করা হবে৷ কোয়ারানটিন সেন্টারকে কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হবে৷

আজ এই খবর চাউর হতেই উত্তেজনা ছড়ায় গ্রামে৷ সকাল থেকে গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে৷ সেন্টারে থাকা এক শ্রমিক প্রবীরকুমার রায় বলেন, "গ্রামে কোভিড হাসপাতাল হয়, তেমনটা কখনও শুনিনি৷ পরিবার সহ গ্রামবাসীদের কথা ভেবে আমরা নিজেরা হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষা করাতে গিয়েছিলাম৷ কেউ এখানে আমাদের পরীক্ষা করতে আসেনি৷ পরে আমাদের বলা হয়, আমরা তিনজন কোরোনা পজ়িটিভ ৷ এরপর আমাদের কোভিড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ গতকাল আমাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ বলা হয়েছে, আমাদের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে৷ অথচ সেখানে আমাদের নতুন করে লালারসের পরীক্ষা করা হয়নি ৷ এখন শুনছি এই স্কুলেই কোরোনা রোগীদের চিকিৎসা করা হবে৷ কিন্তু সেই চিকিৎসার মতো কোনও পরিকাঠামো এখানে নেই৷ এখনও পর্যন্ত এলাকা সিল করা হয়নি ৷ এখানে এই রোগের কোনও চিকিৎসাই হচ্ছে না ৷ আমার দাবি, আমাকে আমার সব রিপোর্ট দেখানো হোক৷"

এক গ্রামবাসী অজিত রায় বলেন, "এই স্কুলে আমরা কোভিড হাসপাতাল হতে দেব না৷ এখানে কোনও পরিকাঠামোই নেই৷ এখানে চিকিৎসক থাকবেন না৷ এমনকী অক্সিজেন সিলিন্ডারও থাকবে না৷ গ্রামের মধ্যে স্কুল৷ এখানে শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে চলা সম্ভব নয়৷ এই সেন্টারে থাকা 29 জন কোরোনা সংক্রামিত ৷ 48 ঘণ্টা আগে তা ধরা পড়লেও এখনও কাউকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি৷ একটা ঘরে গাদাগাদি করে সবাই থাকছে৷ এভাবে কোরোনা রোগীদের চিকিৎসা হয় না৷ তাই আমরা এই স্কুলে কোভিড হাসপাতাল হতে দেব না৷"

গাজোলের বিধায়ক দিপালী বিশ্বাস বলেন, "করকচ এলাকায় মোট 37 জন কোরোনা সংক্রামিত৷ তাদের সবাইকে উদবেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৈরি কোয়ারানটিন সেন্টারে চিকিৎসা করার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য বিভাগ ৷ কিন্তু গ্রামবাসীরা সেখানে সংক্রামিতদের চিকিৎসা করতে দিতে রাজি নয়৷ এনিয়ে তারা বিক্ষোভ দেখিয়েছে৷ স্বাস্থ্যকর্মীদের ঘেরাও করেছে৷ রাজ্যের অনেক জায়গাতেই কোয়ারানটিন সেন্টারে কোরোনা সংক্রামিতদের চিকিৎসা করা হচ্ছে৷ কারণ, সবাইকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না৷ হাসপাতালগুলি রোগীতে ভরতি হয়ে রয়েছে ৷ এতে ভয়েরও কিছু নেই ৷ কিন্তু গ্রামবাসীরা সেসব বুঝতে রাজি নয়৷ স্বাস্থ্য বিভাগ ও ব্লক প্রশাসন বিষয়টি দেখছে ৷ আমরাও গ্রামবাসীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি ৷"

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভূষণ চক্রবর্তী জানান, "উপসর্গহীন কোরোনা আক্রান্তদের ইন্সটিটিউশনাল কোয়ারানটিন সেন্টার কিংবা হোম কোয়ারানটিনে রেখে চিকিৎসা করার নির্দেশ রয়েছে ৷ ওই কোয়ারানটিন সেন্টারে থাকা সমস্ত কোরোনা পজ়িটিভই উপসর্গহীন ৷ তাই আমরা সেখানেই তাদের চিকিৎসা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম৷ কিন্তু গ্রামবাসীদের বাধায় সেটা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি৷ তাই ওই সেন্টারে থাকা সব কোরোনা পজ়িটিভকে পুরাতন মালদার কোভিড হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে৷ সেখানেই তাদের চিকিৎসা হবে৷"

ABOUT THE AUTHOR

...view details