পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By

Published : Aug 8, 2019, 9:58 PM IST

ETV Bharat / state

টিম PK-র ফোনে দলেরই ভালো; বলছেন তৃণমূল নেতারা

ফোন আসছে টিম PK-র থেকে ৷ তা নিয়ে কিছুটা চিন্তায় রয়েছেন মালদার তৃণমূল নেতারা ৷

তৃণমূল নেতা

মালদা, 8 অগাস্ট : লোকসভা নির্বাচনে জেলার দুটি আসনে পর্যুদস্ত হয়ে ব্যাকফুটে তৃণমূল নেতৃত্ব । এই অবস্থায় টিম PK-র ফোন পাওয়া নিয়ে কিছুটা চিন্তায় নেতারা । সেই ফোন কখন যে কার কাছে আসবে, কেউ বুঝতে পারছেন না । ওপার থেকে ফোন করে বলা হচ্ছে, আপনার নাম এই । আপনি দলের এই পদে আছেন । আমি PK-র অফিস থেকে বলছি । তবে যিনি ফোন করেছেন, তাঁর পরিচয় মিলছে না ৷ যদিও তৃণমূল নেতারা নিশ্চিত ফোন আসছে প্রশান্ত কিশোরের (PK) অফিস থেকেই ৷ তাই বিনা বাক্য ব্যয়ে গড়গড় করে সব উত্তর দিচ্ছেন । ফোন আসছে বিধায়ক থেকে শুরু করে ব্লক, এমন কী পঞ্চায়েত স্তরের নেতাদের কাছেও । দলের এই ব্যবস্থায় ঘুম উড়েছে তৃণমূল নেতাদের , কখন যে পরীক্ষায় বসতে হয় ! শারীরিক অঙ্গভঙ্গিতে সেই ছাপ ফুটে উঠলেও মুখে চাপের কথা মানতে নারাজ কোনও নেতাই । বরং এই উদ্যোগতে স্বাগতই জানাচ্ছেন সবাই ।

মঙ্গলবার পর্যন্ত হবিবপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি ছিলেন প্রভাস চৌধুরি । কয়েকদিন আগে টিম PK-র ফোন এসেছিল তাঁর কাছে । আজ প্রভাস বলেন, "ফোন করে PK-র অফিস থেকে আমাকে বলল, আপনি কি প্রভাস চৌধুরি? আপনি কি হবিবপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি? আপনি কি দিদির মিটিংয়ে এসেছিলেন? সেখানে যে জিনিসপত্র দেওয়া হয়েছিল তা কি আপনি পেয়েছেন? মিটিংয়ে আপনাদের যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তা মেনে কি ব্লকে কাজ করছেন? তবে জনসংযোগ যাত্রায় আমাদের দু'দিন দেরি হয়ে গেছিল । আমি ফোনে সেকথা জানিয়েছি । জেলা কমিটির পর আমরা অনেক লোক নিয়ে ব্লকেও জনসংযোগ যাত্রা করেছি । ব্লকের প্রতিটি এলাকায় যাতে এই জনসংযোগ যাত্রা হয় তার ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি বলে জানাই । কী ভাবে সেই যাত্রা করতে হবে, তা প্রতিটি অঞ্চল নেতৃত্বকে জানিয়েছি । যেহেতু এখানে দলের কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই, তাই এখানে দলের তরফে জনসংযোগ যাত্রার জন্য কাউকে পাঠানো হবে । তবে PK-র অফিস থেকেই যে আমাকে ফোন করা হয়েছে, তা নিয়ে আমার কোনও সংশয় নেই । কারণ, ভুয়ো ফোন কথা বললেই বুঝতে পারা যায় । তবে দলের এই নতুন ব্যবস্থা আমার খুব ভালো লেগেছে । এভাবে যদি দলের তরফে প্রত্যন্ত এলাকাতেও মনিটরিং করা হয়, তবে আগামীতে নিশ্চিতভাবে এর ফল ভালো হবে ।"

শুধু প্রভাসবাবুই নয়, টিম PK-র ফোন ইংরেজবাজারের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষও পেয়েছেন বলে খবর ৷ এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে নীহারবাবু কিছুটা খানিকটা অস্বস্তিতে পড়ে যান । তিনি বলেন, "ফোন এসেছিল বটে, তবে সেটা PK টিমের কাছ থেকে কি না জানি না । আমাদের কাছে দলনেত্রীর নির্দেশ এসেছে । তাঁর দপ্তর থেকে বারবার আমাকে ফোন করা হয়েছে । আমি সব তথ্য জানিয়েছি । আমাকে গ্রামে গ্রামে ঘুরে রিপোর্ট বানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । আমি সেই রিপোর্ট তৈরি করেছি । তবে PK টিমের নাম করে আমার কাছে কোনও ফোন আসেনি । আমার সহায়ক ছাড়া আরও তিনজনের ফোন নম্বর পাঠিয়েছি । ফোন মারফত তাঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে চাওয়া হচ্ছে । তাঁরা সেসব জানিয়েও দিচ্ছেন । বিধায়কের কাজকর্মের ভিডিয়োগ্রাফি ও ছবি তুলে নির্দিষ্ট নম্বরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে । দিদির লোকজন সেসব খতিয়ে দেখছে । তবে এসব কাজ টিম পিকে করছে কি না তা আমার জানা নেই ।"

এই প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দুলাল সরকার বলেন, "লোকসভা নির্বাচনে আমরা এই জেলায় অনেক চেষ্টা করেও ভালো ফল করতে পারিনি । এরপর দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলকে আরও শক্তিশালী করতে যোগাযোগের ভালো উপায় ঠিক করেছেন । তারই অঙ্গ হল প্রশান্ত কিশোরের টিম । টিম PK-র তরফে ইতিমধ্যেই মালদার বিভিন্ন নেতা-নেত্রীকে ফোন করা হয়েছে । অনেক কিছু জানতে চাওয়া হচ্ছে । এর ফলে, কর্মীরা উজ্জীবিত হচ্ছেন । তাঁরা দেখছেন, উপরমহল থেকে কেউ ফোন করে দলের ভালোমন্দের বিষয়ে জানতে চাইছেন । আমার কাছে মঙ্গলবার প্রশান্ত কিশোরের এক প্রতিনিধি এসেছিলেন । তিনি কিছু জিনিস জানতে চেয়েছিলেন । আমি তাঁকে সেইসব জানিয়েছি । আমি মনে করি, এই ব্যবস্থায় নিচুতলার কর্মীরাও নিজেদের মনের কথা টিম PK-র মাধ্যমে সরাসরি দিদিকে জানাতে পারবেন । হয়ত তাঁরা সেসব কথা জেলা বা রাজ্য নেতাদের কাছে বলতে পারতেন না । আর টিম PK-র ফোন নিয়ে কর্মীদের মনে যে ভয় রয়েছে, সেটা ভয় থাকা উচিত বলে আমার মনে হয় । কারণ, এখন দল অনেক বড় হয়েছে । অন্য দল থেকে অনেক নেতা-কর্মী তৃণমূলে এসেছেন । তাঁদের অনেকে ঠিকমতো কাজ না করলেও নেতাগিরি ফলান । কাটমানির বিষয়ও রয়েছে । এসবে দলেরই ক্ষতি হয়েছে । টিম PK-র ভয়ে এবার এসব বন্ধ হবে । এতে মানুষের কাছে দলের গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে । শুধু তাই নয়, জেলায় দলের সমস্ত কাজকর্মের ভিডিয়ো ও ছবি প্রশান্ত কিশোরের মাধ্যমে সরাসরি দিদির কাছে চলে যাচ্ছে । এতে আমাদের আরাম প্রিয়তাও কমেছে । এতদিন আমাদের কাজকর্মের তদারকি করার কেউ ছিল না । এবার সেই তদারকি হচ্ছে । এতে দলের ভালো হবে ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details