পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

1400 বিঘা জমি থেকে বর্জ্য জল নিষ্কাশনের নির্দেশ জেলাশাসকের

চাষিদের অভিযোগ, এই পরিস্থিতি চলছে গত কয়েক বছর ধরে ৷ মালদা শহরের বর্জ্য জল যদুপুর বিল হয়ে শহর সংলগ্ন গাবগাছি এলাকার গোদরাইল সাঁকো পেরিয়ে ঢুকে পড়ছে এই এলাকায় ৷ এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় আবেদন জানিয়ে আসছে এলাকার কৃষকরা ৷ আবেদন জানিয়েছে এলাকার বিধায়কের কাছেও ৷ শেষ পর্যন্ত বছর দেড়েক আগে বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলেন ৷ এনিয়ে একটি প্রশাসনিক বৈঠকও হয় ৷

By

Published : Nov 2, 2019, 11:32 PM IST

Updated : Nov 3, 2019, 4:17 AM IST

photo

মালদা, 2 নভেম্বর : কথা রাখল জেলা প্রশাসন ৷ মালদা শহরের বর্জ্য জলে ডুবে যাওয়া প্রায় 1400 বিঘা কৃষিজমি রক্ষা করতে আজ থেকেই কাজ শুরু করা হচ্ছে ৷ এলাকা পরিদর্শনের পর আজ এই নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক ৷ তাঁর এই সিদ্ধান্তে আপাতত স্বস্তির হাওয়া ইংরেজবাজার ব্লকের যদুপুর 2 গ্রাম পঞ্চায়েতের ইন্দো-বাংলা সীমান্তের একাধিক গ্রামে ৷

ইংরেজবাজারের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পাশে যদুপুর 2 গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা ৷ এই এলাকার কৃষ্ণপুর, গোবিন্দপুর, আমজামতলা, বুরুজপুর গ্রামগুলির পাশ দিয়ে গেছে সীমান্তের কাঁচাতারের বেড়া ৷ এলাকার বাসিন্দাদের মূল জীবিকা কৃষিকাজ ৷ মাস চারেক ধরে এই এলাকার প্রায় 1400 বিঘা কৃষিজমিসহ আমবাগানে ঢুকে পড়েছে মালদা শহরের বর্জ্য জল ৷ ফলে কৃষিকাজ হচ্ছে না ৷ সংসার চালাতে চাষ ছেড়ে অনেকে টোটো কিনেছে ৷ অনেকে আবার শ্রমিকের কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে ৷ চাষিদের অভিযোগ, এই পরিস্থিতি চলছে গত কয়েক বছর ধরে ৷ মালদা শহরের বর্জ্য জল যদুপুর বিল হয়ে শহর সংলগ্ন গাবগাছি এলাকার গোদরাইল সাঁকো পেরিয়ে ঢুকে পড়ছে এই এলাকায় ৷ এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় আবেদন জানিয়ে আসছে এলাকার কৃষকরা ৷ আবেদন জানিয়েছে এলাকার বিধায়কের কাছেও ৷ শেষ পর্যন্ত বছর দেড়েক আগে বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলেন ৷ এনিয়ে একটি প্রশাসনিক বৈঠকও হয় ৷ বৈঠকে ঠিক হয়, শহরের বর্জ্য জল একটি বড় জলাশয়ে প্রবেশ করানো হবে ৷ সেই জলাশয় থেকে একটি ক্যানেলের মাধ্যমে জল মহানন্দা নদীতে ফেলা হবে ৷ একইভাবে যদুপুর 2 গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ইন্দো-বাংলা সীমান্তের কাঁটাতার বরাবর আরও একটি ক্যানেল কেটে তা মহানন্দা নদীতে সংযুক্ত করা হবে ৷ তাহলেই শহরের বর্জ্য জল থেকে বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি রক্ষা পাবে ৷ কিন্তু প্রায় দেড় বছর পরেও এনিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ৷ এবারও এলাকার জমি চলে গেছে জলের তলায় ৷ এনিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমছিল এলাকাবাসীর ৷ প্রশাসনের ভূমিকায় হতাশা প্রকাশ করেন যদুপুর 2 গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মহম্মদ সাজ্জাদ আলিও ৷ যদিও 28 অক্টোবর ETV ভারতে এই খবর প্রকাশিত হতেই নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন ৷ সদ্য নিযুক্ত জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন সদর মহকুমাশাসক সুরেশচন্দ্র রানোকে ৷ নির্দেশ পেয়ে 30 অক্টোবর ইংরেজবাজারের BDO, সেচ ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের কর্তাদের নিয়ে গোটা এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি ৷ সেই রিপোর্ট জমা দেন জেলাশাসককে ৷ এরপরই জেলাশাসক এবিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ৷

ইন্দো-বাংলা সীমান্তের এই সমস্যা সমাধানে আজ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর 44 নম্বর ব্যাটেলিয়নের কম্পানি অফিসার হরজিন্দর সিং বেদিকে নিয়ে এলাকা পরিদর্শনে যান জেলাশাসক ৷ সঙ্গে ছিলেন সদর মহকুমাশাসক সুরেশচন্দ্র রানো , ইংরেজবাজারের BDO সৌগত চৌধুরি, সেচ দপ্তরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রণবকুমার সামন্ত, যদুপুর 2 গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মহম্মদ সাজ্জাদ আলি প্রমুখ ৷ জমে থাকা জল নিষ্কাশনের জন্য কী ব্যবস্থা করা যায়, তা তাঁরা সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন ৷ ঠিক হয়, প্রাথমিকভাবে 4টি 20 অশ্বশক্তি ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প ব্যবহার করে এক সপ্তাহের মধ্যে জমা জল বের করে দেওয়া হবে ৷ এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রায় 8 কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ক্যানেল তৈরি করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয় ৷ 100 দিনের কাজ প্রকল্প সেই ক্যানেল তৈরি করা হবে ৷ যদিও সেই কাজে অনেকটা সময় লাগবে ৷

তবে এনিয়ে আজ জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে চাননি ৷ তিনি বলেন, যেদিন এই কাজ পুরোপুরি শেষ হবে সেদিন তিনি এনিয়ে কোনও মন্তব্য করবেন ৷ তাঁর উপস্থিতিতে সদর মহকুমাশাসক বলেন, “আজ জেলাশাসক সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আধিকারিকদের নিয়ে এলাকা পরিদর্শ করেছেন ৷ এই সমস্যার যাতে স্থায়ী সমাধান করা যায়, আমরা তার চেষ্টা করছি ৷ আপাতত পাম্প ব্যবহার করে জমি থেকে জল বের করা হবে ৷ আগামী দিন পাঁচেকের মধ্যেই জমি থেকে সব জমা জল নেমে যাবে বলে আমাদের আশা ৷ সেই কাজ আজ থেকেই শুরু করা হচ্ছে ৷”

এদিকে যদুপুর 2 গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, “আপাতত পাম্প ব্যবহার করে জমি থেকে জল বের করার জন্য জেলাশাসক নির্দেশ দিয়েছেন ৷ এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য জেলাশাসক আজ BSF কর্তার সঙ্গেও কথা বলেছেন ৷ তার জন্য সীমান্তের কাঁটাতারের ধার বরাবর একটি ক্যানেল তৈরি করা হবে ৷ সেই ক্যানেল দিয়ে জল মহানন্দায় ফেলা হবে ৷ BSF কর্তাও জেলাশাসকের এই সিদ্ধান্তে সহমত পোষণ করেছেন ৷ এই কাজ হলে এলাকার কৃষকরা স্বস্তিতে চাষবাস করতে পারবে ৷”

Last Updated : Nov 3, 2019, 4:17 AM IST

For All Latest Updates

ABOUT THE AUTHOR

...view details