মালদা, 27 অগাস্ট : লকডাউন ভঙ্গকারীদের শায়েস্তা করতে অভিনব পন্থা নিল কালিয়াচক থানার পুলিশ ৷ আজ পূর্ব ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ লকডাউনে সরকারি বিধিভঙ্গকারীদের আটক করে কোরোনা পরীক্ষার জন্য লালারস দিতে বাধ্য করেছেন পুলিশকর্মীরা ৷ পুলিশের এই দাওয়াইয়ের তারিফ করছেন অনেকেই ৷ অনেকেই মনে করছেন, জেলার সব থানার পুলিশ যদি লকডাউন ভঙ্গকারীদের একই দাওয়াই দিতে শুরু করে, তবে কোরোনা সংক্রমণ প্রতিহত করা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে ৷ তবে আজকের লকডাউনে মালদা শহরের ছবি ছিল সুনসান ৷
মালদা জেলায় কোরোনা সংক্রমণ উত্তরবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বিপদজনক ৷ এই জেলায় সংক্রমণ ইতিমধ্যে চার হাজার ছাড়িয়েছে ৷ মৃত্যু হয়েছে 30জনের ৷ তবু ভাইরাস মোকাবিলায় অনেক মানুষের মধ্যে কোনও সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না ৷ বিশেষত গ্রামেগঞ্জে পরিস্থিতিটা আরও ভয়াবহ ৷ শারীরিক দূরত্ববিধি দূরের কথা, হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া কারও মুখে মাস্কও দেখা যাচ্ছে না ৷ কোরোনা সংক্রমণে রাশ টানতে এখনও রাজ্যজুড়ে প্রতিদিন চলছে আংশিক লকডাউন ৷ এরই মধ্যে বিশেষ কিছু দিনে পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার ৷ এই দিনগুলিতে সবাইকে ঘরবন্দী থাকতে বারবার সরকারের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হচ্ছে ৷ গতকাল পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলাতেও মাইকিং করে আবেদন জানানো হয় ৷ তবু একশ্রেণীর মানুষ বাধানিষেধ উপেক্ষা করে আজও বিনা প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ছেন ৷ রাস্তায় পুলিশ প্রশ্ন করলে একাধিক অজুহাত খাড়া করছেন তাঁরা ৷ তবে এখন পুলিশও এনিয়ে বেশ কড়াকড়ি শুরু করেছে ৷ এর আগে লকডাউনে সরকারি বিধি অমান্যকারীদের লাঠিপেটা, কান ধরে প্রকাশ্যে ওঠবোস করাতেও দেখা গেছে পুলিশকে৷ এনিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে প্রশ্নও উঠেছিল ৷ যদিও ভাইরাস মোকাবিলায় পুলিশ যে প্রয়োজনে কড়া হবে, তা জানিয়ে দিয়েছিলেন পুলিশ সুপার ৷
মালদা জেলায় এখনও কোরোনা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে৷ অনেক ক্ষেত্রেই এলাকার কেউ কোরোনা সংক্রমিত হলে সেই রোগী ও তাঁর পরিবারকে কার্যত সামাজিক বয়কট করা হচ্ছে ৷ গতকালই তার প্রমাণ মিলেছে পুরাতন মালদা পৌর এলাকায় ৷ এলাকাবাসীর বাধায় সেখানকার কোরোনা আক্রান্ত এক মহিলাকে স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে আইসোলেশনে নিয়ে যেতে পারেননি পুলিশ কর্মী ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা ৷ ফলে দুই সন্তানকে নিয়ে রাতভর খোলা আকাশের নিচে থাকতে হয়েছে ওই মহিলাকে ৷ এসব কারণে অনেক জ্বর এবং অন্য উপসর্গে আক্রান্ত রোগী ভয়ে নিজেদের লালারস পরীক্ষা করাচ্ছেন না ৷ গোটা জেলাতেই এই ছবি ৷ সম্প্রতি মানিকচক ব্লকের এনায়েতপুরে লালা সংগ্রহের ক্যাম্পের আয়োজন করেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের ৷ ওই ক্যাম্পে একজনও নিজেদের লালারস পরীক্ষার জন্য দেয়নি ৷ এই আবহে আজ কালিয়াচক এক নম্বর ব্লক স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এলাকার চৌরঙ্গি মোড়ে কোরোনা পরীক্ষার জন্য একটি লালা সংগ্রহ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয় ৷ সকালেই সেখানে কিট নিয়ে পৌঁছে যান স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা ৷ বেশ কিছু মানুষ স্বেচ্ছায় কোরোনা পরীক্ষার জন্য সেখানে নিজেদের লালারস দেন ৷ এরই মধ্যে দেখা যায়, লকডাউন উপেক্ষা করেই বেশ কিছু মানুষ রাস্তাঘাটে ঘোরাঘুরি করছেন ৷ তখনই নতুন দাওয়াই প্রয়োগ করে পুলিশ ৷ লকডাউন অমান্যকারীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় সেই ক্যাম্পে ৷ প্রত্যেককে সেখানে পরীক্ষার জন্য লালার নমুনা দিতে বাধ্য করা হয় ৷
কালিয়াচক থানার IC আশিস দাস জানিয়েছেন, "আজ ব্লক স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে চৌরঙ্গি মোড়ে একটি লালারস সংগ্রহের ক্যাম্প করা হয়েছিল৷ এদিকে আজই ছিল পূর্ণাঙ্গ লকডাউন ৷ লকডাউন ভাঙার দায়ে আজ 41জনকে আটক করা হয় ৷ তাঁদের প্রত্যেকের লালারসের নমুনা ওই ক্যাম্পে সংগ্রহ করা হয়েছে ৷ কোরোনা নিয়ে মানুষকে সচেতন করতেই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে ৷" এই প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) দীপক সরকার বলেন, "লকডাউন সফল করতে কালিয়াচক থানার পুলিশ এমন পদক্ষেপ নিয়েছে কি না জানি না ৷ তবে এই জেলায় কোরোনা সংক্রমণ যথেষ্ট উদ্বেগজনক ৷ মানুষকে সতর্ক থাকতেই হবে ৷ লকডাউনের দিনগুলিতে সরকারি নির্দেশিকা পুরোপুরি মেনে চলতে হবে ৷" এদিকে কালিয়াচক এক নম্বর ব্লক স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জানা গেছে, আজ ওই ক্যাম্পে প্রায় 200 জনের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৷