মালদা, ৮ জানুয়ারি : বনধে অগ্নিগর্ভ সুজাপুরে ভিলেন হল পুলিশ ৷ আজ সেখানে গাড়িতে ভাঙচুর করতে দেখা যায় পুলিশকে ৷ সেই ভিডিয়ো এখন ভাইরাল ৷ পুলিশের এই আচরণের তীব্র নিন্দা করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ৷ যদিও জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর বিদেশে থাকায় এনিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন তৃণমূলের কোনও নেতা ৷ তবে পুলিশ সুপার আশ্বাস দিয়েছেন, অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ৷
NRC ও CAA সহ একাধিক ইশুতে ডাকা বনধ গোটা দেশের সঙ্গে আজ সুজাপুরেও পালিত হয় । যদিও সকাল ৬টা থেকে ঘণ্টাখানেক সেখানে ধর্মঘটের আহ্বায়ক, বাম ও কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের দেখা গেছিল ৷ তারপর সেই আন্দোলনের রাশ চলে যায় সাধারণ মানুষের হাতে ৷ প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ থাকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ৷ তা নিয়েই পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা শুরু হয় অবরোধকারীদের ৷ এই ঝামেলা একসময় রণক্ষেত্রের আকার নেয় ৷ পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি শুরু করে উত্তেজিত জনতা ৷ বোমা ফাটতে শুরু করে ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমে লাঠিচার্জ করার পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ ৷ এরপর পুলিশ রবার বুলেট ও শূন্যে গুলি চালাতে শুরু করে ৷ এরই মধ্যে পুলিশের ৫টি গাড়িতে অগ্নি সংযোগ করা হয় ৷ সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে সুজাপুর নয়মৌজা ইদগাহ মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা আরও কয়েকটি গাড়িতে ৷ মোট ৮টি গাড়ি পুড়ে যায় ৷ ঘণ্টা দুয়েক ধরে এই ছবি দেখে সুজাপুরের মানুষ ৷ পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে ৷ ঘটনাস্থলে আসে দমকলের দুটি ইঞ্জিন ও পুলিশের জলকামান ৷ দমকলকর্মীরা বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ৷ এসব ঝামেলার মধ্যেই একসময় দেখা যায়, কাঁধে কাঁদানে গ্যাসের শেলবক্স নিয়ে এক পুলিশকর্মী জাতীয় সড়কের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি সাধারণ গাড়ি ভাঙচুর করছেন ৷ একই ঘটনা ঘটছে জাতীয় সড়কের উলটোদিকেও ৷ খাকি উর্দিধারীদের পাশাপাশি গাড়ি ভাঙচুর করতে দেখা যায় সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও ৷ সেই ছবি মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় ৷ এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে উত্তেজনায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ তোলে অনেকে ৷ পুলিশের এই ভূমিকা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে জেলার রাজনৈতিক মহলে ৷
এ প্রসঙ্গে CPI(M)-র জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “আজ গোটা মালদা জেলায় শান্তিপূর্ণভাবে সর্বাত্মক ধর্মঘট হয়েছে ৷ এবারের ধর্মঘটের চেহারা অনেক ভালো ছিল ৷ সমস্ত প্রতিষ্ঠানই বন্ধ ছিল ৷ হঠাৎ শোনা গেল, সুজাপুরে লাঠিচার্জ হচ্ছে, কাঁদানে গ্যাস চলছে ৷ পুলিশের গুলি চলছে ৷ আমরা সেকথা শুনে খোঁজখবর নিই ৷ আমরা জানতে পারি, পুলিশ সেখানকার ধর্মঘট সমর্থকদের প্ররোচনা দিয়েছে ৷ শান্তিপূর্ণ ধর্মঘটে সুজাপুরে এমন অশান্তি হল কেন, তার জবাব পুলিশকেই দিতে হবে ৷ এর দায়ও পুলিশকে নিতে হবে ৷ আমরা ছবিতে দেখছি, কাঁধে টিয়ার গ্যাসের শেলের ব্যাগ, হাতে রাইফেল নিয়ে পুলিশই গাড়ি ভাঙছে ৷ সাধারণ পুলিশের সঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও গাড়ি ভাঙতে দেখা যাচ্ছে ৷ নয়মৌজার মাঠে বছরের প্রতিটি দিন অনেক গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে ৷ সেখানে একজন বিক্ষোভকারীকেও দেখা যাচ্ছে না ৷ শুধু পুলিশকেই সেখানে দেখা যাচ্ছে ৷ এটা ভয়ঙ্কর ৷ প্রশাসনের এনিয়ে তদন্ত করা উচিত ৷ সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ করার জন্য আজ পুলিশ নিজেরা এই ইশু তৈরি করেছে ৷ আমরা এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দোষী পুলিশ অফিসারদের শাস্তি দাবি করছি ৷”