পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Malda : বাসন্তী মার্কেট কমপ্লেক্স হাটের সরকারি জমি দখলের অভিযোগ, নির্বিকার প্রশাসন - রতুয়া

একসময় জনগণের সুবিধার্থে সরকারকে জমি দিয়েছিল স্থানীয় চৌধুরী পরিবারের সদস্য ৷ সেই জমিতে হাট বসত ৷ বর্তমানে সে জমি থেকে ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে তার দখল নিয়েছে জমি মাফিয়ারা ৷ অভিযোগের তির তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকেই ৷

চলছে জমি দখল
চলছে জমি দখল

By

Published : Sep 30, 2021, 10:12 AM IST

মালদা, 30 সেপ্টেম্বর : প্রকাশ্যে মাফিয়াদের দখলে চলে যাচ্ছে বাজারের সরকারি জমি । ইতিমধ্যে বাজারের অর্ধেক দখলে চলে গিয়েছে । বাকি অংশেও হাত বাড়িয়েছে তারা । অভিযোগ, জমি দখলে সরাসরি হাত রয়েছে তৃণমূল আশ্রিত মাফিয়াদের । ঘটনাটি ঘটেছে রতুয়া 2 নম্বর ব্লকের পুখুরিয়া মোড় এলাকায় । মালদা জেলায় পুখুরিয়া অনেক পুরোনো সময় থেকে বর্ধিষ্ণু এলাকা হিসাবে পরিচিত । একসময় এখানে প্রচুর শিক্ষিত মানুষের বসবাস ছিল । বাসিন্দাদের বেশিরভাগ কৃষিজমি কিংবা আমবাগানের মালিক ছিলেন ৷

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, 1976 সালে বাসিন্দা নিবারণ চৌধুরী স্থানীয়দের দৈনন্দিন জিনিসপত্র বেচাকেনার জন্যে সরকারকে প্রায় 3 বিঘা জমি দান করেন । সেই জমিতে প্রতি রবি ও বৃহস্পতিবার হাট বসত । এখনও ওই দু’দিন হাট বসে । পদাধিকারে বর্তমানে এই হাটের মালিক বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি । পঞ্চায়েত সমিতির তরফে এই জায়গায় দৈনিক বাজার বসানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় । তৈরি হয় দোতলা ভবন । নিচে বিক্রেতাদের বসার জায়গা, উপরে বাজার কমিটির কার্যালয় । নাম দেওয়া হয় বাসন্তী মার্কেট কমপ্লেক্স । কিন্তু অজানা কারণে এখনও দৈনিক বাজার চালু করা যায়নি । এখন হাটের জায়গা দিনে দিনে দখল করছে মাফিয়ারা । স্থানীয়দের অভিযোগ, এনিয়ে একাধিকবার বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে তারা অভিযোগ জানালেও কোনও কাজ হয়নি ।

আরও পড়ুন : TET Agitation : পুলিশের ভূমিকার প্রতিবাদ, নিয়োগের দাবিতে ডেপুটেশন 2014-র টেট উত্তীর্ণদের

কোনও বাধা না থাকায় হাটের জমি রীতিমতো টিন দিয়ে ঘিরে ফেলেছে জমি মাফিয়ারা । ক'দিন পরপরই টিনের ভিতরের অংশে থাকা জমির আয়তন বাড়ছে । শোভানগর-রতুয়া রাজ্য সড়কের ধারে এই জমির দাম এখন আকাশ ছোঁয়া । স্থানীয়দের অনেকে বলাবলি করছেন, শুধু রাজনৈতিক দলের ছায়ায় থাকা মাফিয়ারাই নয়, এর পিছনে হাত রয়েছে প্রশাসনের একাংশেরও । এলাকার সিপিএম নেতা ভুবন কুমার বলছেন, "ছ'মাস ধরে এই মার্কেটে যা চলছে, তাতে মানুষের ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে । এখানে প্রশাসনই জমির মালিক । সরকারি জমি দখল হয়ে গেলে স্টে অর্ডার কিংবা এভিকশন অর্ডার ছাড়া কেউ সেই জমিতে ঢুকতে পারে না ।" প্রবীণ শিক্ষক তথা নেতা জানান এই বাজারটি পঞ্চায়েত সমিতির । 40 বছর ধরে এখানে বাজার বসছে । কংগ্রেসের আমলে একজন জমি দান করেন । বাম আমলে 3 বার এখানে মার্কেট করা হয়েছে । তাঁর অভিযোগ হঠাৎ কোন কাগজের ভিত্তিতে এই জায়গা দখল করা হচ্ছে, তা কেউ জানে না । আইন অনুযায়ী সরকারি জমিতে থাকা কাউকে পুনর্বাসন না দিয়ে কখনও উচ্ছেদ করা যায় না । এখানে প্রশাসনের সহযোগিতায় গরিব মানুষের উপর অত্যাচার হচ্ছে বলে জানান তিনি ।

এই হাটের উপর ভরসা করেন পুখুরিয়া ও আড়াইডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের 10-12 টি গ্রামের মানুষ । কিন্তু যে ভাবে হাটের জমি দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে, তাতে ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্র নিয়ে বসার সুযোগ পাচ্ছেন না । ফলে হাটও দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে । এক ব্যবসায়ী ইলিয়াস আলি বলছেন, "18-19 বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি । এখন তৃণমূলের লোকজন এসে বলছে, ওরা নাকি হাটের জায়গা কিনে নিয়েছে । মাস কয়েক আগে ওরা প্রায় চারশো জন কোনও কাগজপত্র ছাড়া জোরজবরদস্তি হাটে থাকা আমাদের অস্থায়ী দোকান ভাঙচুর করে । মালপত্রও নষ্ট করে দেয় । এরা সব জমি মাফিয়া । জায়গা মাপার জন্য 3 জন আমিনও এসেছিলেন । কিন্তু জায়গা দেখে তাঁরা না মেপেই চলে যান । এখন আমাদের দোকান লাগানোর জায়গা নেই ।"

এক ক্রেতা এমাদুর রহমান বলেন, "অনেকদিন ধরে আমরা এই হাটে আসি । পরবর্তীতে এটা বাসন্তী মিনি রেগুলেটেড মার্কেট হয়েছে । হঠাৎ করে একদল মানুষ এই হাটের জায়গা ঘিরে ফেলতে শুরু করে । তারা এই জায়গা কিনেছে কি না, তা জানি না । ধীরে ধীরে বাজারটাই ওরা সাফ করে দিয়েছে । প্রায় পুরোটাই দখল করে নিয়েছে । এসব দ্রুত ফাঁকা করা উচিত । আমরা চাই, বাজারের জমি ফের ব্যবসায়ীদের ব্যবহার করতে দেওয়া হোক ।"

আরও পড়ুন : Drug and Fake Currency : গাড়ির ড্যাশবোর্ড জালনোট, সাউন্ড সিস্টেমে মাদক; মালদায় গ্রেফতার 3

এক সময় রতুয়া 2 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন মহম্মদ নইমুদ্দিন । এখন তিনি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি । তিনি বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে আমি ওই বাজারে যাই । 2003-08 পর্যন্ত আমি যখন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলাম ৷ বেকার যুবকদের কথা ভেবে তখন সেখানে বেশ কিছু দোকানঘরও তৈরি করেছিলাম । কিন্তু এখন দেখছি, পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে থাকা সেই বাজারের জমির একাংশ টিন দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে ।" তিনিও জানান, আগে বাজারের জমি যা ছিল, এখন তা নেই । কেন এমন হল, তা নিয়ে তিনিও প্রশ্ন তুলেছেন । তাঁর মতে জমিটির ভৌগোলিক অবস্থান খুব লোভনীয়, তাই হয়তো এই ভাবে জমি দখল হয়ে যাচ্ছে । তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, "স্থানীয়রা অনেকে আমাকে এ নিয়ে অভিযোগ করেছেন । বিষয়টি নিয়ে আমি খোঁজখবর নেব । পঞ্চায়েত সমিতিতে এখন একটু ডামাডোল চলছে । সেসব মিটে গেলেই আমি ক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করব ।"

রতুয়া 2 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী সুমিত্রা সরকারকে সম্প্রতি অনাস্থার ভিত্তিতে অপসারণ করা হয়েছে । নতুন সভাপতি নির্বাচিত না হওয়ায় এনিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির কোনও প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যায়নি । বিডিও সোমনাথ মান্না ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে নারাজ । তবে তিনি জানান, "ওই জমিটি কার, তা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরই বলতে পারবে । কারণ, সেটা নিয়ে একটা প্রশ্ন রয়েছে । এর মধ্যে সরকারি জমি কতটা, তাও সঠিক জানা নেই । বিধানসভা নির্বাচনের আগে আমরা এ নিয়ে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাছে জানতে চেয়েছিলাম । কিন্তু এখনও সংশ্লিষ্ট দফতর আমাদের তা জানায়নি । তাছাড়া আমি যতদূর জানি, ওই জায়গায় বসার জন্য হাট ব্যবসায়ীরা পঞ্চায়েত সমিতিকে কোনও কর দেন না । বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details