মালদা, 24 মে: অন্যান্য দিন যেখানে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত সবসময় মানুষের ভিড়ে গমগম করত, এখন সেখানে যেন শ্মশানের শূন্যতা ৷ মালদা জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি ও খুচরো বাজার হিসাবে চিহ্নিত নেতাজি কমার্শিয়াল মার্কেটে বুধবার অঘোষিত বনধ ৷ গতকাল এই বাজারে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণ প্রাণ কেড়েছে দু’জন নিরীহ মানুষের ৷ বুধবারও বাজারজুড়ে পোড়া গন্ধ ৷ তদন্তের স্বার্থে বাজারের একটি ব্লক গতকাল থেকেই ঘিরে রেখেছে পুলিশ ৷ ঘেরাবন্দির সামনে উৎসুক মানুষের দৃষ্টি বাজারের ভেতরে ৷
এদিকে গতকালের ঘটনার পর থেকেই উধাও মার্কেটের বাজি ব্যবসায়ীরা ৷ তাঁদের কারও সঙ্গে ফোনেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না ৷ যে গুদামে বিস্ফোরণ হয়েছিল, তার এক মালিক বাবু সাহাও অজ্ঞাতবাসে ৷ তাঁর ভাই অমরনাথ সাহা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন বলে জানিয়েছেন ওই বাজারের ব্যবসায়ীদের একাংশ ৷ যদিও পুলিশের দাবি, তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারা-সহ বিস্ফোরক আইনেও মামলা রুজু করেছে পুলিশ ৷
মঙ্গলবার সন্ধের মধ্যে বাজারের আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলেছিলেন দমকলকর্মীরা ৷ শেষ পর্যন্ত জানা যায়, ওই ব্লকের 36টি ঘরের মধ্যে 14টির বেশ ভালো ক্ষতি হয়েছে ৷ অল্পবিস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও কয়েকটি ঘর ৷ পৌরসভার কর্মীরা বিভিন্ন দোকান ও গুদাম থেকে কার্বাইড ভর্তি ড্রাম এক জায়গায় এনে রাখেন ৷ সব মিলিয়ে প্রায় 35টি ড্রাম একত্রিত করা হয়েছে ৷ ফরেনসিক তদন্তের জন্য গোটা এলাকা গতকালই ঘিরে ফেলে পুলিশ ৷ নজরদারিরও ব্যবস্থা করা হয় ৷
আরও পড়ুন : বাজির গুদামে বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন জেলাশাসকের
এই ঘটনা নিয়ে এখনও একাধিক প্রশ্ন উঠে আসছে ৷ যে গুদামে কার্বাইড ড্রামের বিস্ফোরণ থেকে মজুত বাজিতে আগুন ছড়িয়েছিল, সেখানে মজুত ছিল কাগজ, সুতলির মতো দাহ্য পদার্থও ৷ ব্যবসায়ীদের একাংশের প্রশ্ন, মালদা জেলায় বাজির কোনও স্টকিস্ট নেই ৷ মুর্শিদাবাদের রেজিনগর, কান্দি-সহ চার জায়গায় আতশবাজির স্টকিস্ট রয়েছে ৷ তাহলে মালদার ব্যবসায়ীরা বাজি মজুত করেন কীভাবে ? গত বছর কালীপুজোর সময় মালদা কলেজ মাঠে বাজি বাজার বসেছিল ৷ সেই সময় প্রশাসন নাকি প্রত্যেক ব্যবসায়ীর নথিপত্র খতিয়ে দেখে সেখানে বাজির স্টল করার অনুমতি দিয়েছিল ৷
যদি 2019 সাল থেকে ব্যবসায়ীদের বাজি বিক্রির লাইসেন্স নবীকরণ না হয়ে থাকে, তাহলে তাঁরা প্রশাসনিক বাজি বাজারে ব্যবসা করলেন কীভাবে ? কখনও কখনও ক্যালসিয়াম কার্বাইডও বিস্ফোরক হয়ে ওঠে ৷ সম্ভবত সেকারণেই এই ঘটনায় ধৃত অমরনাথ সাহার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা রুজু করেছে পুলিশ ৷ তাহলে সেই কার্বাইড মজুত করার লাইসেন্স ব্যবসায়ীদের কারা দিচ্ছে ? ইংরেজবাজার পৌর কর্তৃপক্ষ আগেই জানিয়ে দিয়েছে, তারা বাজি বা কার্বাইড বিক্রি বা মজুতের লাইসেন্স দেয় না ৷ তাহলে ব্যবসায়ীরা সেই লাইসেন্স পেল কোথা থেকে ?
নেতাজি কমার্শিয়াল মার্কেটের প্রাক্তন সভাপতি কিষাণ চট্টোপাধ্য়ায়ও এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ৷ তিনি বলেন, "গতকাল কার্বাইড থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছিল ৷ মজুত বাজি থেকে বিস্ফোরণ হলে, দুপুর বা রাতে ঘটনা ঘটলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়ত ৷ কিন্তু এই কার্বাইড বিক্রি কিংবা মজুতের লাইসেন্স কারা দেয়, আমার জানা নেই ৷ এই নিয়ে আমার বিশেষ কিছু জানাও নেই ৷ তবে আমের মরশুমে কার্বাইডের ভালো চাহিদা রয়েছে ৷ তবে এই বিস্ফোরণ যদি পুজোর মরশুমে হত, তাহলে কী হত, তা কল্পনা করা যায় না ৷ কারণ, সেই সময় প্রতিটি দোকানে প্রচুর বাজি মজুত থাকে ৷ এই বাজার পৌরসভার ৷ প্রতিদিন পুলিশ আসে, যায় ৷ কিন্তু নিরাপত্তা দেখাশোনার কেউ নেই ৷ আজ দু'জন নিরীহ মানুষ মারা গেল ৷ একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর প্রচুর ক্ষতি হয়েছে ৷ তাঁরা কার্যত নিঃস্ব হয়ে গেলেন ৷ এর দায় কে নেবে ? এখানে মুদিখানার দোকানেও কার্বাইড বিক্রি হচ্ছে ৷ কীভাবে ? যাঁরা প্রতিবাদ করতে যাবেন, তাঁরাই ঝামেলার মুখে পড়বেন ৷"
আরও পড়ুন :ঘিঞ্জি এলাকায় বাজির গুদামে আগুন ! বিস্ফোরণের কারণ বাজি না কার্বাইড ?