পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

ফুঁসছে মহানন্দা, নেই ত্রাণশিবির; রাত কাটছে ত্রিপলের ছাউনিতে

কোরোনা আতঙ্কে এখন শহরে বাড়ি ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না ৷ এদিকে এখনও পর্যন্ত শহরে কোনও স্থায়ী ত্রাণশিবির তৈরি করতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ ৷ ফলে গৃহহীন মানুষজন রাস্তাঘাটের ধারে কিংবা কোনও ফাঁকা জায়গায় তাঁবু তৈরি করতে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে ৷

By

Published : Aug 6, 2020, 6:11 AM IST

Malda news
মালদার খবর

মালদা, 6 অগাস্ট : কোরোনা তো রয়েছেই ৷ দোসর হয়েছে বন্যার আতঙ্ক ৷ উত্তরবঙ্গের প্রবল বৃষ্টিতে জলস্তর বেড়েই চলেছে মহানন্দার ৷ বেশ কয়েকদিন আগেই নদী বিপদসীমা ছাড়িয়েছে ৷ আজ মহানন্দার জল বিপদসীমা 21.00 মিটার ছাড়িয়ে 21.67 মিটার উচ্চতায় বইছে ৷ জল ঢুকতে শুরু করেছে মালদা শহরের অসংরক্ষিত এলাকায় ৷ ইংরেজবাজার পৌরসভার সাতটি ওয়ার্ডের নিচু অংশে ঢুকে পড়েছে নদীর জল ৷ ঘরছাড়া হয়েছে শ’ছয়েক পরিবার ৷ অনেকে জলবন্দি বাড়িতেই বসবাস করছে ৷ যারা নিজেদের ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, তারা এখন প্রবল সমস্যায় ৷ কোরোনা আতঙ্কে এখন শহরে বাড়ি ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না ৷ এদিকে এখনও পর্যন্ত শহরে কোনও স্থায়ী ফ্লাড সেন্টার তৈরি করতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ ৷ ফলে গৃহহীন মানুষজন রাস্তাঘাটের ধারে কিংবা কোনও ফাঁকা জায়গায় তাঁবু তৈরি করতে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে ৷ প্রশ্ন উঠেছে, দেড়শো বছরের পুরানো এই পৌরসভা এখনও পর্যন্ত শহরে স্থায়ী কোনও ত্রাণশিবির তৈরি করতে পারল না কেন ? এ-নিয়ে রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে CPI(M) ।

মহানন্দা নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে মালদা ও পুরাতন মালদা শহর ৷ দুই শহরের অবস্থান নদীর দুই পাশে ৷ ইংরেজবাজার পৌরসভার 8, 9, 12, 13, 14, 20 ও 22 নম্বর ওয়ার্ডে নদী তীরবর্তী এলাকায় প্রচুর মানুষের বসবাস ৷ নদীর অসংরক্ষিত চরেও গজিয়ে উঠেছে বসতি ৷ নদীর জল বেশি বাড়লে কিংবা বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে এই এলাকাগুলি জলে ডুবে যায় ৷ সংসারের জিনিসপত্র নিয়ে কয়েক হাজার মানুষকে উঠে আসতে হয় উপরে ৷ শহরে কোনও ফ্লাড সেন্টার না থাকায় তাদের রাস্তার ধারে কিংবা কোনও ফাঁকা জায়গায় তাঁবু টাঙিয়ে বসবাস করতে হয় ৷ জল নামলে তারা আবার নিজেদের ঘরে ফেরে ৷ এবার বর্ষা মরশুমের প্রথম থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে উত্তরবঙ্গে ৷ তার জেরে মহানন্দার জলস্তর অনেকটা বেড়ে গেছে ৷ একমাস আগে থেকেই ঘর ছাড়তে শুরু করেছে নদীপাড়ের মানুষ ৷ দিন দিন সংখ্যাটা বেড়ে চলেছে ৷ এই পরিস্থিতিতে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করা দূরের কথা, ঘরছাড়াদের বেশিরভাগই পৌরসভা থেকে কোনও সাহায্য পায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে ৷

এই ত্রিপলের ছাউনিগুলিই এখন ঠিকানা দুর্গতদের


ঘরে জল ঢুকে যাওয়ায় একমাস ধরে শহরের বাঁধ রোডের পাশে প্লাস্টিক মাথায় নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন রুশনি মণ্ডল ৷ তিনি বলেন, “একমাসের বেশি আগে ঘরে নদীর জল ঢুকেছিল ৷ সেই সময় স্বামী এখানে ছিল ৷ আমরা এখানে চলে আসি ৷ কিছুদিন আগে স্বামী ও ছেলে বিহার চলে গেছে ৷ এখন তিন মেয়ে আর নাতি নিয়ে আমি একাই তাঁবুতে আছি ৷ পৌরসভা থেকে একজন এসেছিল ৷ শুধু কথা বলে চলে গেছে ৷ থাকার ব্যবস্থা দূরের কথা, পৌরসভা থেকে কোনও সাহায্যই পাইনি ৷ তিনদিন পৌরসভায় গিয়ে ঘুরে এসেছি ৷ নিজে প্লাস্টিক কিনে ঝুপড়ি বানিয়ে রয়েছি ৷”

জলমগ্ন মালদা পৌরসভার সাতটি ওয়ার্ড

অস্থায়ী আস্তানায় থাকা ঝুম্পা মহালদার জানান, “স্বামী টোটো চালায় ৷ লকডাউনে তার ব্যবসা প্রায় বন্ধ ৷ বেশিরভাগ দিনই ঘরে বসে থাকছে ৷ নদীর জল ঘরে ঢোকার আগে বাড়ি ভাড়া নেওয়ার চেষ্টা করেছি অনেক ৷ কিন্তু কোরোনার ভয়ে কেউ ঘর ভাড়া দিতে রাজি নয় ৷ তাই ছেলেকে নিয়ে রাস্তার ধারে থাকতে বাধ্য হয়েছি ৷ এখনও পৌরসভা থেকে কোনও সাহায্য পাইনি ৷ ফ্লাড সেন্টার কী জিনিস, জানি না ৷”

মেলেনি সরকারি সাহায্য, কোনওরকম ত্রিপল খাটিয়ে রাত কাটছে দুর্গতদের

এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে পৌরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য তথা বিদায়ি ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল সরকার বলেন, “শহরে ফ্লাড সেন্টার নির্মাণের জন্য আমরা রাজ্য সরকারের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি ৷ নদীর ধারে দু’তিনটি ফ্লাড সেন্টার তৈরি করে যাতে দুর্গতদের রাখা যায় তার জন্যই এই প্রস্তাব ৷ মালদা শহরে দু’ধরনের বন্যা হয় ৷ এখানে নদীর চরে অনেক মানুষ বসবাস করে ৷ এদের কারও রায়তি জমি নেই ৷ এরা মাফিয়াদের টাকা দিয়ে নদীর চরে বাড়ি বানিয়ে ফেলেছে ৷ তারা কোথাকার বাসিন্দা তাও আমরা জানি না ৷ এরা এখানকার ভোটারও নয় ৷ তবুও আমরা মানবিকতার খাতিরে প্রতিবার তাদের পাশে দাঁড়াই ৷ আর বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে বেশি বৃষ্টি হলে জমা জলে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয় ৷ পৌরসভার 8, 9 ও 12 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা নদীর জল বাড়লে দুর্গত মানুষজনকে কাছাকাছি মাঠে থাকার ব্যবস্থা করতেন ৷ বেশির ভাগ মানুষ বাড়ি ভাড়া নিয়ে নিত ৷ কিন্তু এখন কোরোনার জন্য শহরে বাড়ি ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না ৷ স্কুলগুলোও এখন খোলা যাচ্ছে না ৷ তাই বানভাসি মানুষ বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী তাঁবু তৈরি করে থাকতে বাধ্য হচ্ছে ৷ এই মানুষদের জন্য আমরা 29টি ওয়ার্ডের বিদায়ি কাউন্সিলরদের প্রত্যেককে 25টি করে প্লাস্টিকের ত্রিপল দিয়েছি ৷ তাঁরাই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ত্রিপল বিলি করবেন ৷ সদর মহকুমাশাসক, পৌরসভার দুই ওভারসিয়ার নদীর জল ঢুকে পড়া এলাকাগুলি পরিদর্শন করেছেন ৷ এই পরিস্থিতিতে 12 নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ি কাউন্সিলর ভালো কাজ করেছেন ৷ তিনি নিজে দায়িত্ব নিয়ে পৌরসভার একটি বাড়িতে অস্থায়ী ফ্লাড সেন্টার খুলেছেন ৷ আমরা বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গেও আলোচনা করছি ৷ তবে নদীর পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হচ্ছে ৷ এভাবে জল বাড়তে থাকলে 95 কিংবা 98 সালের মতো ফের শহর ভাসতে পারে ৷”

এই ইশুতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে CPI(M) ৷ দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কৌশিক মিশ্র বলেন, “গত প্রায় 25 বছর ধরে যে দল ইংরেজবাজার পৌরসভা পরিচালনা করছে, তারা পৌর এলাকার মানুষের উন্নয়নে কোনও কাজই করেনি ৷ শুধুমাত্র চুরি ও দুর্নীতিতে জড়িয়েছে ৷ গোষ্ঠীকোন্দলে জড়িয়েছে ৷ দফায় দফায় চেয়ারম্যান বদল হয়েছে ৷ কিন্তু মানুষের সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি ৷ শহরে প্রচুর সমস্যা রয়েছে ৷ তার মধ্যে অন্যতম ফ্লাড সেন্টার না থাকার সমস্যা ৷ এই পৌরসভার বেশ কিছু ওয়ার্ড নদী তীরবর্তী এলাকায় অবস্থিত ৷ কয়েক হাজার মানুষ মহানন্দার অসংরক্ষিত এলাকায় বসবাস করে ৷ নদীর জল বাড়লেই তাদের ঘরবাড়ি ডুবে যায় ৷ কিন্তু পৌরসভার পক্ষ থেকে তাদের কোনও সহযোগিতা করা হয় না ৷ দুর্গতরা রাস্তার ধারে অস্থায়ী আস্তানা বেঁধে থাকে ৷ শহরে দূষণ ও রোগব্যধি ছড়ায় ৷ কোরোনায় তাদের পরিস্থিতি ভয়াবহ ৷ এখনও পর্যন্ত পৌর কর্তৃপক্ষ কোনও ফ্লাড সেন্টার তৈরি করতে না পারায় তারা রাস্তার ধারে থাকতে বাধ্য হচ্ছে ৷ আমরা এই সেন্টার তৈরি করার জন্য দীর্ঘদিন আগেই দাবি করেছি ৷ অথচ মানুষের প্রয়োজনে ফ্লাড সেন্টার তৈরি না করে তারা সরকারি অর্থে খেলা আর মেলা করতেই ব্যস্ত ৷ আগামীতে আমরা ফের মানুষের এই দাবি তুলে ধরব ৷”

ABOUT THE AUTHOR

...view details