মালদা, ১২ ফেব্রুয়ারি : শাসকদলের মদতে মহানন্দা নদীর পাড় কেটে মাটি চুরি করছে মাফিয়ারা। তাদের দাপটে বিপন্ন হয়ে পড়েছে নদীর উপর রেলব্রিজও। যদিও ভয়ে প্রতিবাদ জানাতে পারছেন না স্থানীয়রা। ঘটনাটি পুরাতন মালদা পৌরসভার দুই ও ছয় নম্বর ওয়ার্ডের। স্থানীয়দের বক্তব্য, এই নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলেই খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, এই মাফিয়াদের পিছনে রয়েছেন শাসকদলের কাউন্সিলর থেকে শুরু করে পৌরসভার চেয়ারম্যানও। যদিও চেয়ারম্যান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত কয়েক হাজার ট্রাক্টর নদীর পাড় থেকে মাটি কেটে নিয়ে যায়। মাটি কাটা হয় রেলব্রিজের নিচ থেকেও। এর ফলে যে কোনও সময় ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। যেখান থেকে মাটি কাটা হচ্ছে, সেখান থেকে মাত্র ৪০০ মিটার দূরে রয়েছে মালদা থানা। আর কিছু দূরেই পৌরভবন।
এলাকার বিধায়ক ভূপেন্দ্রনাথ হালদার বলেন, "এই এলাকায় মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য নতুন নয়। আমার কাছে খবর আছে, নদীর ধারে ওরা ৩০ ফুট গর্ত করে মাটি কেটে নিয়েছে। এর আগে আমগাছ পর্যন্ত কেটে নিয়ে চলে গেছে। সেই ঘটনার তদন্তভার জেলা উদ্যানপালন দপ্তরকে দেওয়া হয়েছিল। আসলে এখন রাজ্যে তোলাবাজ, গুন্ডাদের সরকার চলছে। মানুষ কোথায় অভিযোগ করবে? প্রতিবাদ করলে খুন হয়ে যাবে। প্রাণের ভয় উপেক্ষা করে কে প্রতিবাদ করবে? এই ঘটনার সঙ্গে পুলিশ সহ সবাই জড়িত। সরকারি জমি থেকেও মাফিয়ারা মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের ব্যবসা ঠিক রাখতে গুন্ডা-বদমাশরা এখন তৃণমূলে ঢুকছে। পৌরসভার চেয়ারম্যানের আগে প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। তিনি শাসকদলের চেয়ারম্যান। কিন্তু তাঁরও ভয় রয়েছে। প্রতিবাদ করলে যদি চেয়ারটাই চলে যায়।"
এলাকায় মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যের কথা স্বীকার করলেও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুরাতন মালদা পৌরসভার চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষ। তাঁর দাবি, মাটি কাটা নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর ও তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা মিথ্যে। এটা রাজনৈতিক চক্রান্ত। তিনি বলেন, "পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চালিশাপাড়ায় নদীর ধার থেকে যে মাটি কাটা হচ্ছে তা আমি জানি। আমরা এনিয়ে ১৭ জানুয়ারি জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। তার প্রতিলিপি জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক, মালদা থানার IC-কেও দিয়েছি। জানিয়েছি, নদীর ধার থেকে মাটি কেটে পৌরসভার রাস্তার উপর দিয়ে ট্রাক্টরে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর ফলে একদিকে যেমন পৌরসভার রাস্তা ও ড্রেন খারাপ হচ্ছে, অন্যদিকে রাস্তার ধারে থাকা দুটি স্কুলের সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে মৌলপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরও। এলাকার পরিবেশও এতে নষ্ট হচ্ছে। আমার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১ ফেব্রুয়ারি জেলা ভুমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক BLLRO-র কাছে রিপোর্ট তলব করেন। ৬ ফেব্রুয়ারি BLLRO সেই রিপোর্ট জমা দেন। খুব দ্রুত ওই এলাকায় মাটি কাটা বন্ধ করা হলে আমাদের শহর বাঁচবে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, সরকারই ওই এলাকা থেকে মাটি কাটার লিজ দিয়েছে। তবুও প্রশাসনের কাছে আমাদের আবেদন, শহর এলাকা থেকে দূরে সেই লিজ মেনে মাটি কাটতে দেওয়া হোক। তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। তবে মাটি কাটার জন্য রেলব্রিজের কোনও ক্ষতি হচ্ছে বলে আমার জানা নেই।”
মাটি যে কাটা হচ্ছে তা খোলাখুলি স্বীকার করে নিয়েছেন এক মাটি ব্যবসায়ী মহম্মদ আহাত আলি। তিনি জানান, মাসখানেক ধরেই এই এলাকা থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। সেই মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শ্মশানে। সেখানে গর্ত ভরাট করা হচ্ছে। এখন ট্রাক্টরের সংখ্যা খানিকটা কমলেও কিছুদিন আগে প্রতিদিন হাজারখানেক ট্রাক্টর মাটি নিয়ে যেত।