মালদা, 2 অগস্ট: পাঁচ বছর ধরে ছবিটা গা সওয়া হয়ে গিয়েছে সবার । ভাঙাচোরা বাড়ির সামনে গাছে শিকলে বাঁধা সদ্য যৌবনে পা দেওয়া সেলিম আখতার । সেখানেই নিজের মনে হাত-পা নাড়িয়ে চলেছে । বিড়বিড় করে কী বলে চলেছে বোঝা যায় না । দিনের পর দিন হাত-পায়ে শিকলের চাপে তৈরি হয়েছে ঘা । ধুলো, ময়লায় সেই ঘা ক্রমেই বিষাক্ত হয়ে উঠেছে । ভনভন করছে মাছি । ওই যুবকের সামনে দিয়েই যাতায়াত করছেন পড়শিরা । কেউ একবারের জন্যও তাঁর খোঁজ নেন না । পরিবারের লোকজন তার চিকিৎসার জন্য জনপ্রতিনিধিদের কাছে দরবার করেছেন । কিন্তু কোনও কাজ হয়নি ।
সেলিমের বাবা জাকির হোসেন দিনমজুর । ঠাকুরদা আবদুল হকও তাই । মা লাইলি বিবি, বড় দাদা হারুন রশিদের মানসিক সমস্যা ছিল । দীর্ঘদিন আগে দু’জনেই ঘর ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান । তাঁদের আর কখনও এলাকায় দেখা যায়নি । অবশ্য ছোট ভাই আসিফ আখতার সুস্থ । সেও বাপ-ঠাকুরদার মতো দিনমজুরি করে । ছোটবেলায় সেলিমের মানসিক ভারসাম্যহীনতা ধরা পড়ার পর প্রথমে গ্রামের ওঝা ও পরে হাসপাতাল, এমনকি মালদা সহ একাধিক শহরের নামি চিকিৎসকের কাছেও নিয়ে গিয়েছিলেন জাকির সাহেব । দীর্ঘ চিকিৎসার খরচ টানতে টানতে কপর্দকহীন হয়ে পড়েন তিনিও । পরে আর ছেলের চিকিৎসা করাতে পারেননি ।
প্রশাসনের নানা মহলে দরবার করেও কোনও সুরাহা পাননি জাকির হোসেন ৷ জাকির সাহেব বলছেন, "ছেলে প্রায় সাত বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন । তাই ওকে বেঁধে রেখেছি । সেলিমকে মালদা, বহরমপুর, শিলিগুড়ি, সব জায়গায় চিকিৎসা করিয়েছি। ওর চিকিৎসার জন্য দু’কাঠা জমিও বিক্রি করেছি । ঠিক করতে পরিনি । ওকে খোলা রাখলেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় । এর আগে ওকে আগ্রা, উত্তরপ্রদেশ, মুম্বই, ঝাড়খণ্ড, হিমাচল সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে খুঁজে নিয়ে এসেছি । ওর চিকিৎসার জন্য সব জায়গায় গিয়েছি । পঞ্চায়েত সদস্য, প্রধানের পা ধরেছি । কোনও সাহায্য পাইনি । ছেলের প্রতিবন্ধী কার্ড, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড, রেশন কার্ড, কিছুই নেই । আমাদের পরিবারে সাতজন সদস্য । কারও রেশন কার্ড নেই । কীভাবে ছেলের চিকিৎসা করাব ?"
শিকলবন্দি অবস্থায় জীবন কাটছে হরিশচন্দ্রপুরের সেলিমের আরও পড়ুন: 6 কোটি খরচেও সাগরদিঘিতে হয়নি ইকো টুরিজম, মন্ত্রী সাবিনার উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে ?
সেলিমকে নিয়ে এই মুহূর্তে হরিশ্চন্দ্রপুরে তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিজেপির জেলা সম্পাদক কিষাণ কেডিয়া বলছেন, "ভালুকা গ্রাম পঞ্চায়েত, হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের । এলাকার বিধায়ক, এমনকি রাজ্য সরকারও তৃণমূলের । অথচ প্রশাসন চুপ করে বসে রয়েছে ।" তৃণমূলের জেলা সম্পাদক জম্মু রহমান নাকি সংবাদমাধ্যমের কাছেই সেলিমের খবর জানতে পারলেন । তিনি বলেন, "এই খবর আপনাদের মুখেই জানতে পারলাম । আমরা এই পরিবারের কাছে যাব । প্রধানকেও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে বলব ।"