মালদা, 25 সেপ্টেম্বর : জানুয়ারিতে মানিকচক ব্লকের মথুরাপুরে এক বিস্ফোরণের ঘটনায় ভূতনি চরের এক যুবককে গ্রেপ্তার করল NIA ৷ বুধবার রাতে নিজের বাড়ি থেকে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয় ৷ ধৃত যুবকের নাম সিদ্ধার্থ মণ্ডল ৷ বাড়ি মানিকচক ব্লকের ভূতনি চরের হীরানন্দপুর গ্রামপঞ্চায়েতের হরচন্দ্রপুরে ৷ সূত্রের খবর, ক’দিন আগে মুর্শিদাবাদে আল কায়দা যোগে ধৃত ছ’জনকে জেরা করেই তার নাম পান তদন্তকারীরা ৷ শুধু সিদ্ধার্থই নয়, ভূতনি এলাকার আরও তিনজনের নামও তারা পেয়েছে বলে সূত্রের খবর ৷
5 জানুয়ারি বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে মানিকচক ব্লকের মথুরাপুরের কাকরিবাঁধা সিংপাড়া । আহত হন সিটু মণ্ডল ও কৃষ্ণা চৌধুরি নামে দু'জন ৷ তারা ভূতনি থানা এলাকার বাসিন্দা। জানা যায়, কাকরিবাঁধার একটি আমবাগানে কয়েকদিন ধরে কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় যুবককে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছিল ৷ সেদিন রাতে বিস্ফোরণের শব্দে ঘটনাস্থানে ছুটে আসেন স্থানীয়রা৷ তা দেখে দুই দুষ্কৃতী সেখান থেকে মোটরবাইকে পালিয়ে যায় ৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে আসে মানিকচক থানার পুলিশ ৷ ঘটনাস্থান থেকে 6টি তাজাবোমা উদ্ধার করা হয় ৷ বোমাগুলির আকার ছিল খুবই ছোটো ৷ এমন বোমা এর আগে জেলার কোথাও দেখা যায়নি বলে জানায় পুলিশ ৷ এরপর থেকেই বিষয়টির উপর নজর রাখছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ৷ ক’দিন আগে মুর্শিদাবাদে আল কায়দা জঙ্গি যোগে ধৃত ছ’জনকে জেরা করে ভূতনি চরের বাসিন্দা সিদ্ধার্থ মণ্ডলের নাম জানতে পারে NIA৷ এরপরই তাকে ধরতে জাল বিছানো হয় ৷ বুধবার রাতে তদন্তকারীদের হাতে ধরা পড়ে সে ৷
সিদ্ধার্থর বাবা মানিক মণ্ডল বলেন, “বোমা বিস্ফোরণ মামলার তদন্তে মাস দুয়েক আগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিদ্ধার্থকে ফরাক্কায় ডেকে পাঠায় NIA ৷ জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়েও দেওয়া হয় ৷ বুধবার তাকে ফের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুর্শিদাবাদে ডেকে পাঠানো হয় ৷ সেখান থেকেই তাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয় ৷ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ফোনে আমাকে সেই খবর দিয়েছে ৷ তবে ছোটো ছেলে কোথা থেকে বোমা বানানো শিখেছে জানি না ৷” এদিকে ভূতনি থানার পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিদ্ধার্থরা আগে ঝাড়খণ্ডে থাকত ৷ এখনও সেই রাজ্যের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে তার ৷ প্রতিবেশী রাজ্যের ভোটার তার বাবা মানিক মণ্ডল ও মা মঞ্জু মণ্ডলও ৷ ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়েছে সিদ্ধার্থ । অসামাজিক কাজকর্মে অনেক আগেই তার নাম জড়িয়েছে বলে জানা গেছে ৷ বছর চারেক আগে এক মহিলাকে ধর্ষণের ঘটনায় তার নাম জড়ায় ৷ সেই ঘটনায় ওই মহিলার স্বামী তার নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ৷ বারবার চাপ দেওয়া সত্ত্বেও অভিযোগ প্রত্যাহার না করায় তাঁকে খুন করার অভিযোগ ওঠে সিদ্ধার্থের বিরুদ্ধে ৷ সেই ঘটনায় কয়েকদিন জেলও খাটে ৷ বছর দেড়েক আগে ঝাড়খণ্ডে একটি বিস্ফোরণের ঘটনাতেও নাম জড়ায় সিদ্ধার্থর ৷ সেই ঘটনায় জড়িত থাকায় ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে ৷ সেই মামলাতেও কয়েকদিন জেলে থাকার পর জামিনে ছাড়া পায় সে ৷
NIA সূত্রে জানা গেছে, 5 জানুয়ারি মথুরাপুরে যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, সেই সময় ঘটনাস্থান থেকে কয়েকটি বোমা উদ্ধার হয়৷ এই ধরনের বোমা আল কায়দা জঙ্গিরাই ব্যবহার করে৷ সেই ধরনের বোমা কীভাবে মানিকচকের মতো একটি জায়গায় পাওয়া গেল তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছিল ৷ সেই ঘটনায় একবার মূল অভিযুক্ত সিদ্ধার্থকে জেরা করা হয় ৷ কিন্তু তার কাছ থেকে তেমন কিছু তথ্য পাওয়া যায়নি ৷ তখন থেকেই সিদ্ধার্থর উপর নজর ছিল৷ এরপর মুর্শিদাবাদ থেকে ধৃতদের জেরায় যখন ফের তার নাম উঠে আসে তখন তাকে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৷ তবে এনিয়ে জেলা পুলিশ কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হয়নি ৷