মালদা, 25 জুলাই: অনলাইন পরীক্ষার নামে বাস্তবেই চলছে প্রহসন । খোলা রাস্তায় পরীক্ষা দিচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা । তাঁদের টোকাটুকি দেখে দাঁড়িয়ে পড়ছেন পথচলতি মানুষজনও । সবার মুখেই বিস্ময়ের ছাপ । অথচ পাশেই কলেজের গেট বন্ধ ৷ পরীক্ষার্থীদের কলেজের ভিতরে বসে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি নেই । কলেজের ভিতরে টোকাটুকির ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্যই নাকি এই ব্যবস্থা । অদ্ভুত বিষয়, সেই কলেজ কর্তৃপক্ষই আবার পরোক্ষে এই গণ টোকাটুকি সমর্থন করছে । সবমিলিয়ে রাজ্যের বেহাল শিক্ষা ব্যবস্থার কালো ছবি আরও একবার প্রকাশ্যে এসেছে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে (Gour Banga University) ।
সোমবার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কলেজগুলিতে প্রথমবর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা চলছে । এদিন ছিল রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা । পুরাতন মালদার গৌড় কলেজের পড়ুয়ারাও এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন । তাঁদেরই আজ কলেজের সামনে স্থানীয় বাড়ি দোকানের বারান্দা, চায়ের দোকান, এমনকি খোলা জায়গায় বসেও পরীক্ষা দিতে দেখা যায় । গোটা এলাকা জুড়ে অবাধে চলেছে টোকাটুকি । মোবাইল ফোন খুলে, নোটস খাতা কিংবা বই দেখে পরীক্ষার খাতা লিখে চলেছেন পরীক্ষার্থীরা । অথচ পাশে থাকা কলেজের ভিতরে কোনও পরীক্ষার্থী নেই ।
কেন এমনটা ঘটল ? উদিত বর্মন নামে এক পরীক্ষার্থী বলেন, 22 তারিখ থেকে পরীক্ষা শুরু হয়েছে । আজ তৃতীয় পরীক্ষা চলছে । আরও একটা বাকি রয়েছে। আমার বাড়ি অনেক দূর। ওদিকে ঠিকমতো গাড়িও পাওয়া যায় না । তাই কলেজের পাশে বসেই পরীক্ষা দিচ্ছি। বৃষ্টির মধ্যে অনেকে একসঙ্গে বসে পরীক্ষা দিতে বাধ্য হচ্ছি ।" আরেক পরীক্ষার্থী মৌসুমি খাতুন সাফ জানালেন, তাঁদের কলেজের ভিতরে ঢুকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হচ্ছে না । অনেক দূরে বাড়ি হওয়ায় তাঁরা পরীক্ষা শেষের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তরপত্র কলেজে জমা দিতে পারবেন না । নেটওয়ার্ক সমস্যার জন্য বাড়ি থেকেও অনলাইনে উত্তরপত্র আপলোড করতে পারছেন না । অগত্যা তাঁরা কলেজের সামনে বসে পরীক্ষা দিচ্ছেন । তাঁদের সিলেবাস শেষ না হওয়ায় তাঁরা নোটস কিংবা বই খুলে লিখতে বাধ্য হচ্ছেন ।"
খোলা রাস্তায় পরীক্ষা দিচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা আরও পড়ুন:বই-মোবাইল দেখে সেমিস্টারের পরীক্ষা রায়গঞ্জের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে
কলেজের অধ্যক্ষ অসীম সরকারকে বেশিরভাগ দিনই কলেজে পাওয়া যায় না । আজও কলেজে আসেননি তিনি । তাঁর পরিবর্তে কলেজের দায়িত্বে থাকেন অধ্যাপক নিরঞ্জন মৃধা । তিনি এই টোকাটুকিতে পরীক্ষার্থীদের সমর্থনই করেছেন । তাঁর বক্তব্য, "যেহেতু অনলাইনে পরীক্ষা হচ্ছে এবং কলেজের বিভিন্ন কাজ চলছে, তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, পরীক্ষার্থীদের কলেজের ভিতরে বসে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে না। পরীক্ষা চলাকালীন যাতে কোনও অসৎ আচরণ না হয়, সেকারণেই এই সিদ্ধান্ত। কে কোথায় বসে পরীক্ষা দেবে, তা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। আর যেহেতু ওপেন মুভ পরীক্ষা, তাই সবাই বই কিংবা নোটস দেখে পরীক্ষা দিতেই পারে । তবে বিষয়টি দৃষ্টিকটু ।"