মালদা, 10 নভেম্বর: ধর্মে নেই, স্বপ্নে আছে ৷ স্বপ্ন থেকে তা ছড়িয়ে পড়েছে মননেও ৷ সেই স্বপ্নাদেশেই 40 বছর আগে কালীপুজো করেছিলেন এক মুসলিম বধূ ৷ প্রথমে বাধা এসেছিল ৷ তাঁর দাবি, মা কালীই সেসব বাধা দূর করে তাঁর কাছ থেকে পুজো নিয়েছেন ৷ তাঁর পুজিত মা কালীর নাম এখন এলাকার ঘরে ঘরে ৷ ‘শেফালি কালীর পুজো’ শুনলেই স্থানীয়দের হাত উঠে আসে কপালে ৷
হবিবপুরের বুলবুলচণ্ডী থেকে বাংলাদেশের রোহনপুরে ঢুকে গিয়েছে সিঙ্গল রেল ট্র্যাক ৷ যেন দুই বাংলার হৃদয়কে বেঁধে রাখার নাড়ি ৷ সেই লাইনের ধারেই মধ্যম কেন্দুয়া গ্রাম ৷ গ্রামের রাস্তাটি রেল লাইনে ধাক্কা খেয়ে স্থবির ৷ ঠিক সেই জায়গায় 40 বছর ধরে হয়ে আসছে শেফালি কালীর পুজো ৷ শুধু হিন্দু নয়, মুসলিমরাও এই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় একবার মায়ের থানে মাথা নত করেন ৷ ব্রাহ্মণী নদীর খাঁড়ির ধারের গ্রামটিতে পুরোপুরি হিন্দুদের বাস এখন ৷ রেল ট্র্যাকের পাশে শেফালিদেবীর মাথা গোঁজার জায়গাটি অনেকদিন ধরেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ৷ বেঁচে থাকাকালীন স্বামী আবসার শেখ বুলবুলচণ্ডীর একটি চালকলের শ্রমিক ছিলেন ৷ বেশ ক’বছর আগে মারা গিয়েছেন তিনি ৷ বড় ছেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা সংসার পেতেছেন ৷ ছোট ছেলে পিন্টু অবশ্য নিজের পরিবারের সঙ্গে মায়ের কাছেই থাকেন ৷ তিনি পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক ৷
এই পুজো প্রসঙ্গে গ্রামের বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন সরকার বলেন, “শেফালি অনেক আগে ঝাড়ফুঁক করত ৷ গ্রামে কারও অসুখ হলে শেফালির কথামতো চললে রোগ সেরেও যেত ৷ উনি নিজেও একবার অসুস্থ হন, দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরেও রোগ সারছিল না ৷ তখনই ওর শরীরে মা কালীর ভর নামে ৷ মা ওকে নাকি স্বপ্নাদেশ দেন ৷ তাঁকে প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দেন ৷ শেষ পর্যন্ত ওর প্রস্তাবে আমরা সায় দিই ৷ সায় দেয় আরও অনেক গ্রামের মানুষও ৷ সেই শুরু ৷ এখন এটা গ্রামের বারোয়ারি পুজো হয়ে গিয়েছে ৷ সবাই এই মাকে শেফালি কালী নামেই চেনে ৷ পুজোর দিন শেফালি নিজেও সমস্ত সময়টা এখানে বসে থাকে ৷ তবে সেদিন বেদির জায়গায় ঢোকে না ৷ ওর ঘাড়েই যে মা কালীর ঝোঁক আসত, সেটা আমরা জানি ৷ এখন তো দূরদূরান্তের মানুষও এখানে পুজো দিতে আসে ৷”