মালদা, 30 সেপ্টেম্বর : পুনর্ভবার পর এবার মহানন্দার রোষ পড়ল মালদায় ৷ নদীর জল কূল ছাপিয়ে ভাসিয়ে দিয়েছে চাঁচল 1 ব্লকের মতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা ৷ জলের তলায় চলে গিয়েছে কয়েক হাজার হেক্টর চাষের জমি ৷ জলবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েকশো বাড়ি ৷ প্রাণ বাঁচাতে ঘর ছেড়ে মানুষ পালাচ্ছে উঁচু জায়গার খোঁজে ৷ তবে, এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গতদের আশ্রয়ের কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি ৷ অভিযোগ, গত পরশু থেকে এলাকায় নদীর জল ঢুকতে শুরু করলেও প্রশাসনের কেউ এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি দেখতে আসেনি ৷ যদিও পঞ্চায়েত প্রধান দাবি করেছেন, তিনি গোটা ঘটনা BDO-কে জানিয়েছেন৷ দুর্গতদের আশ্রয় ও ত্রাণের ব্যবস্থা করার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি৷
গত কয়েকদিন ধরে প্রবল গতিতে বাড়ছে মহানন্দার জলস্তর ৷ পাহাড়সহ উত্তরবঙ্গে প্রবল বৃষ্টির জেরে প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে জলস্তর ৷ আজ নদী বিপদসীমা 21.00 মিটার পার করে 21.42 মিটার উচ্চতায় বইছে ৷ তবে এখনও মহানন্দা চরম বিপদসীমা 21.75 মিটার থেকে অনেকটাই নীচুতে ৷ এই মুহূর্তে মতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গালিমপুর, শ্রীপতিপুর, মথুরাপুর সহ 5-6টি গ্রামে মহানন্দার জল ঢুকে পড়েছে ৷ গ্রামবাসী জানাচ্ছে, নদীর জলে ভেসে গিয়েছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ধানচাষ ৷ জলে ডুবে গিয়েছে সবজিসহ অন্যান্য ফসলও৷ জলবন্দী গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র৷ ঘরে জল ঢুকে পড়ায় বিপন্ন মানুষজন হাতের কাছে যা পাচ্ছে, তা নিয়েই প্রাণ বাঁচাতে ছুটছে উঁচু জায়গার দিকে ৷ অনেকে এর মধ্যে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে ৷ কিন্তু নদীর প্রবল জলের চাপ রিং বাঁধের কয়েকটি জায়গায় ধাক্কা মারতে শুরু করেছে ৷ যে গতিতে নদীর জল বাড়ছে, তাতে আজ রাতের মধ্যেই বাঁধ বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ৷
জলমগ্ন মালদার একাধিক এলাকা মথুরাপুর গ্রামের বাসিন্দা অনিমেষ সরকার বলেন, "এই গ্রামে দু’দিন ধরে মহানন্দার জল গ্রামে ঢুকছে ৷ শুধু এই গ্রামে নয়, পাশের গালিমপুর, শ্রীপতিপুর, চাঁচল 2 ব্লকের চন্দ্রপাড়া, ভবানীপুর, যদুপুর গ্রামগুলিও জলমগ্ন ৷ মথুরাপুরের অবস্থা খুবই খারাপ ৷ সব বাড়িতেই জল ঢুকে গিয়েছে ৷ মানুষ বাধ্য হয়ে যা পেরেছে, তা নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছে ৷ এই গ্রামে 90টি বাড়িতে জল ঢুকেছে ৷ সব মিলিয়ে হাজার দু'য়েক মানুষ জলবন্দী ৷ এখনও পর্যন্ত দুর্গতদের জন্য প্রশাসনের কোনও উদ্যোগ আমরা দেখতে পাইনি ৷ গ্রামবাসী নিজেদের উদ্যোগেই নিজেদের আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছে ৷ প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, দুর্গত মানুষদের জন্য যেন থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয় ৷"
মাথায় একটি প্লাস্টিক নিয়ে বাঁধের দিকে ছুটছিলেন রোজিনা খাতুন ৷ বলেন, "মহানন্দার পাশেই আমাদের বাড়ি ৷ বাড়িতে এখন এক মানুষ জল ৷ সেখানে থাকা যাচ্ছে না৷ তাই বাঁধে যাচ্ছি ৷ বাচ্চাদের নিয়ে খুব অসুবিধেয় আছি ৷ কিন্তু বাঁধেও থাকতে পারব কি না জানি না৷ অসম্ভব গতিতে নদীর জল বাড়ছে ৷ এখনও পর্যন্ত কেউ আমাদের সাহায্য করেনি ৷ নদী কূল ছাপিয়ে ঘরে জল উঠে এসেছে ৷ এর আগে 2017 সালেও একই পরিস্থিতি হয়েছিল৷ ফের একই অবস্থার মুখোমুখি আমরা ৷"
গালিমপুরের বাসিন্দা মহম্মদ আনসারুল রহমান বলেন, "মহানন্দার জল প্রবল গতিতে বাড়ছে ৷ গতকাল রাত থেকে ভয়ংকরভাবে জল বাড়ছে ৷ প্রতিদিন দেড় থেকে দু’হাত জল বাড়ছে ৷ আমরা ভীষণ আতঙ্কিত৷" আজ ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি চাঁচল 1-এর BDO সমীরণ ভট্টাচার্যের সঙ্গে ৷ জানা গিয়েছে, আজ দিনভর একাধিক বৈঠকে ব্যস্ত তিনি ৷ তবে এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে মতিহারপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান পপি দাস বলেন, "গত 28 সেপ্টেম্বর আমি মহানন্দার পরিস্থিতি নিয়ে BDO-কে রিপোর্ট দিয়েছি ৷ এই পঞ্চায়েত এলাকায় মহানন্দার জলস্তর বেড়েছে ৷ সে কথাও BDO-কে জানানো হয়েছে ৷ আমার পক্ষ থেকে যতটা পারা যায়, দুর্গতদের ত্রাণের ব্যবস্থা করব ৷ এনিয়ে আমি স্থানীয় প্রাইমারি স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি ৷ যারা বাঁধের উপর থাকতে চাইছে, তাদের মাথার উপর আচ্ছাদনের জন্য ত্রিপলের ব্যবস্থাও করা হবে৷"